বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছেন, “পাঁচটি প্রস্তাবের ব্যাংকগুলো একীভূত করার পরে প্রয়োজন হলে নতুন মার্জারে যাওয়া হবে। এগুলোর প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো ব্যাংক মার্জার করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।”
Published : 15 Apr 2024, 11:03 PM
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ‘স্বেচ্ছায়’ একীভূত হতে চাওয়া দশ ব্যাংকের বাইরে নতুন করে আর কোনো ব্যাংক মার্জার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, ভবিষ্যতে যদি নতুন করে মার্জারের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন এই দশ ব্যাংক একীভূত করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।
সোমবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংক মার্জারের জন্য আমরা সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে পাঁচটি প্রস্তাব পেয়েছি। আপাতত এই প্রস্তাবগুলোর বাইরে আর নতুন কোনো প্রস্তাব আমরা নেব না।
“এই পাঁচটি প্রস্তাবের ব্যাংকগুলো একীভূত করার পরে প্রয়োজন হলে নতুন মার্জারে যাওয়া হবে। এগুলোর প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো ব্যাংক মার্জার করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।”
ওই পাঁচ প্রস্তাবের ব্যাংকগুলো একীভূত করার সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে তিন-থেকে চার বছর লেগে যেতে পারে। সেই সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে আর কোনো ব্যাংক মার্জারের কাজে হাত দেবে কি না– সেই প্রশ্নের উত্তরে মেজবাউল হক বলেন, “ব্যাংক একীভূত করতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। অডিটর নিয়োগ, সম্পদ ও দায় ঠিক করা, শেয়ার দর ঠিক করা, শেয়ার অংশ র্নিধারণ ও আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।
“এই পাঁচ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) অভিজ্ঞতা নেবে, অভিজ্ঞাতারও প্রয়োজন আছে। তারপর দেখা যাবে।’’
পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে কোন কোন ব্যাংক রয়েছে জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, “ব্যাংকগুলোর মধ্যে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক রয়েছে। বাকি নামগুলো তো গণমাধ্যমে চলে এসেছে।’’
দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে গত কয়েক বছর ধরেই তাগিদ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ব্যাংক খাতের সংস্কারের বিষয়টি তাদের সর্বশেষ নির্বাচনি ইশতেহারে রেখেছে।
সেই ধারাবাহিকতায় দুর্বল ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে সবলের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আড়াই বছরের ‘রোডম্যাপ (কর্ম কৌশল)’ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ বা পিসিএ নীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগেই বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে শরিয়াভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা আসে। ব্যাংক দুটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়ে সমঝোতা চুক্তিও করেছে।
নীতিমালা জারির পর রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল একীভূত করার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে দুই কোম্পানির পর্ষদ। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে এবং ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে।
এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।
শেষ ছয় ব্যাংকের মার্জারের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা কেউ দেয়নি। পরিচালনা পর্ষদেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, আলোচনা চলছে।
‘রোডম্যাপ’ ও ‘পিসিএ’ নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছিল, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় কোনো ব্যাংক একীভূত হতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হবে। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংক ‘দুর্বল ব্যাংক’ চিহ্নিত করবে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত দেবে কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হবে।
কিন্তু নীতিমালা ঘোষণার এক মাসের মথায় দুর্বল ব্যাংক শনাক্ত করার সেই প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক একীভূতকরণ নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নিলে গ্রহীতা ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, সিআরআর, এসএলআর, এলসিআর এর বিপরীতে বিভিন্ন হারে যে প্রভিশন রাখতে হয়, তাতে ছাড় দেওয়া হবে তিন বছরের জন্য।
গ্রহীতা ব্যাংকের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে নীতিমালায় বলা হয়, দীর্ঘ মেয়াদি বন্ড কেনার মাধ্যমে নগদ সহায়তা, মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার ইস্যু, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করতে গ্রহীতা ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরবর্তী তিন বছর দুর্বল ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন গ্রহীতা ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে যুক্ত হবে না। অর্থাৎ আর্থিক প্রতিবেদন পৃথক আকারে দেখানো যাবে। এর ফলে একীভূত হওয়ার পরও দুর্বল ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের কোনো প্রভাব পড়বে না গ্রহীতা ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর।
এর বাইরে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে যে কোনো বিষয়ে সুবিধা নিতে পারবে গ্রহীতা ব্যাংক, তাও বলা হয়েছে নীতিমালায়।