বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
Published : 10 Apr 2025, 12:54 PM
‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ রুগ্ন দশায় পড়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মজিবুর রহমান গতবছর ডিসেম্বর থেকেই আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব সামলে আসছিলেন। এবার তাকে পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বও দেওয়া হল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষায় এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিত করতে” কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত বুধবার আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সেখানে বলা হয়, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের ‘দুর্বলতার’ কারণে মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের শ্রেণিকৃত বিনিয়োগ ও পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা ও তারল্যসংকট তীব্র হয়েছে।
আর্থিক সংকটের পাশাপাশি পর্ষদের নীতিনির্ধারণে দুর্বলতার কারণে ব্যাংকিং সুশাসন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এ ব্যাংকের পর্ষদ আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক রকমের অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে পরিদর্শন ও তদন্ত রিপোর্ট করেছে। মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে।”
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মোহাম্মদ শফিক বিন আব্দুল্লাহর জায়গায় এমডি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. মজিবুর রহমানকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বুধবারে বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে বলেন, “বোর্ড ঠিক মত কাজ না করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া। বোর্ডে সংস্কার এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ইতোমধ্যে প্রথম রাউন্ডে ১১টি ব্যাংকে বোর্ড দিয়েছি। আর কয়েক সপ্তাহ আগে আরো দুটি ব্যাংকে বোর্ড দেওয়া হয়েছে।”
আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। তখন এটি আল-বারাকা ব্যাংক নামে পরিচালিত হত।
১৯৯৪ সালে এটি ‘সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে’ পরিণত হয়। তখন ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ত্রুটিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রথা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০০৪ সালে এটি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক নামে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।
ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দেয়। এরপর ২০০৮ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়।