“নজরুল ইসলাম মজুমদার দীর্ঘদিন বিএবির চেয়ারম্যান থাকাকালে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে সংগঠনটি, অভিযানে তার প্রমাণ মিলেছে।”
Published : 15 Jan 2025, 01:10 AM
বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) দুটি ব্যাংক হিসাবে দশ বছরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার ‘চাঁদা’ জমা হওয়ার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে মঙ্গলবার গুলশান এভিনিউয়ের জাব্বার টাওয়ারে বিএবির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে লেনদের ওই তথ্য পান দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের কর্মকর্তারা।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার দীর্ঘদিন বিএবির চেয়ারম্যান থাকাকালে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ‘শত শত কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে’ সংগঠনটি, অভিযানে তার ‘প্রমাণ’ মিলেছে।
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম মজুমদার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছিলেন ব্যাংক খাতের একজন আলোচিত ব্যক্তি। ২০০৮ সাল থেকে টানা ১৭ বছর তিনি বাংলাদেশ এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে আছেন।
বিএবির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ‘বিপুল অংকর চাঁদা’ তোলার অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার সংগঠনটির কার্যালয়ে ওই অভিযান চালায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম।
দুদকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এক্সিম ও প্রিমিয়ার ব্যাংকে দুটি অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিয়েছে বিএবি। নজরুল ইসলাম মজুমদার বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফোন করে টাকা নিয়েছেন, এবং তা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন।”
অভিযান সংশ্ষ্টি একজন কর্মকর্তা জানান, বিএবির অ্যাকাউন্ট থেকে ১৬ কোটি ও ছয় কোটি টাকার বড় দুটি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। অন্য লেনদেনের পরিমাণ কম ছিল।
“পরে যাচাই বাছাই করে এনফোর্সমেন্ট টিম জানতে পারে, ওই ২২ কোটি টাকার গন্তব্য ছিল গানবাংলার কৌশিক হোসেন তাপসের কোম্পানি ওয়ান মোর জিরো কমিউনিকেশনস।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আলোচিত সংগীত উদ্যোক্তা তাপসও এখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তিনি ছিলেন গানভিত্তিক দেশের একমাত্র বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন ‘গান বাংলার' ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযান চলাকালে বিভিন্ন রেকর্ডপত্র ও বিএবির ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএবির আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনে বিধান না থাকা সত্ত্বেও ওই অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও অন্য সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন, যা বিএবির আয়-ব্যয় হিসেবে যথাযথভাবে প্রতিফলন হয়নি।
“এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে। রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণপূর্বক কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।”
সরকার পতনের পর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বিএবির দায়িত্ব থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
গত ২ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেয় পুলিশ। নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী নাছরিন ইসলামের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়।
পোশাক রপ্তানির আড়ালে ‘মানিলন্ডারিং’এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে আলাদা অনুসন্ধান করছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর বিএবির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে এসেছেন ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার।
দুদকের অভিযানে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে তার বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।