এদিন আরেক অনুষ্ঠানে ‘খামারিরাই প্রাণিসম্পদ খাতের প্রকৃত সেলিব্রেটি’ বলে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।
Published : 01 Jun 2024, 08:13 PM
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খামারিবান্ধব নয় অভিযোগ করে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেছেন, তারা খামারিদের কোনো সহযোগিতা করছে না।
শনিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার দুইজন খামারি প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের সহযোগিতা না পাওয়ার দাবি করে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আর সংগঠনের সভাপতি ইমরান হোসেন চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের টাকা চিকিৎসদের দিতে হচ্ছে দাবি করে ঘুষ ছাড়া সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেন।
এদিন সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে বিডিএফ নেতারা যখন অধিদপ্তরের সহায়তা না পাওয়ার বিষয়ে এসব অভিযোগ করছিলেন, তার কাছাকাছি সময়ে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘খামারিরাই প্রাণিসম্পদ খাতের প্রকৃত সেলিব্রেটি’ বলে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো: আব্দুর রহমান।
বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৪ উপলক্ষে ‘ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে চারটি ক্যাটাগরিতে দেশের দুগ্ধ খাতের ৫১ জন সফল খামারি ও উদ্যোক্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
খামারিদের এ ধরনের সম্মাননা প্রদান তাদেরকে দুগ্ধ উৎপাদনে আরও উৎসাহিত করবে এবং এ খাতের উন্নতি উত্তরোত্তর বাড়বে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সরকার দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে জনসাধারণের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ এবং এ খাতকে রপ্তানিমুখী করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
দুগ্ধ খামারিদের সংগঠন বিডিএফের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেয়াজুল হককে মোবাইল ফোনে কল করে এবং এসএমএস দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরকে ফোন করা হলে তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গেই যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
পরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (পরিচালক) উৎপাদন এবিএম খালেদুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে চাননি। তিনিও মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ।
দুগ্ধ খামারিদের সংগঠন বিডিএফ ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা, কোরবানির আগে চোরাইপথে গরু আসা বন্ধ এবং গুঁড়ো দুধের শুল্ক বাড়ানোর দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহসভাপতি এ কে এম নাজীব উল্লাহ, সহসভাপতি আলী আজম শিবলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী।
সংবাদ সম্মেলনে জামাল হোসেন নামে একজন খামারির অভিযোগ, “আমাদের গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।”
মোহাম্মদপুরের আদাবরের খামারি রাশিদা বেগম তার ভোগান্তির কথা তুলে ধরে অভিযোগ করেন, “২০টি গাভীর মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। গরু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায়। বাধ্য হয়ে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়।”
“ডাক্তারের সামনেই দুটি গাভী মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনও রিপোর্ট দেয়নি। আমি এখন নি:স্ব।”
এ সময় বিডিএফ সভাপতি ইমরান হোসেন দাবি করেন, “আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেল যোগে আসতো তাদের ২০০-৩০০ টাকা দিলেই হতো। বর্তমানে ৫০০-১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এসব ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।”
গুঁড়ো দুধে শুল্ক বাড়ানোর দাবি
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন দুধের প্রয়োজন। উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার টন। পুষ্টির চাহিদা দেশের দুগ্ধ খামারের মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব।
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও বেশ কিছু বাধার কারণে দুধের উৎপাদন বাড়ছে না। এসব বাধা দূর করলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে ইমরান হোসেন আমদানি করা দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, মেয়াদীত্তীর্নের কাছাকাছি বস্তা আকারে বাল্ক ফিল্ড মিল্ক এনে নতুন মোড়কে বাজারজাত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। গুঁড়ো দুধ আমদানির মাধ্যমে দেশের দুগ্ধ শিল্প এক ধরনের বাধার মুখে পড়েছে।
তার দাবি, “গুঁড়োদুধ আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করে সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুই বছরের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে বাংলাদেশ।”
আমদানিতে অধিক হারে শুষ্কারোপ করে দেশি কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে তোলার কথা বলেন তিনি।
শিশুখাদ্য হিসেবে ’ফরমুলা দুধ’ শুল্কমুক্ত করে তিনি বলেন, বাল্ক ফিল্ড আমদানিতে কোটা তৈরি, শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দাবি
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলায় অন্তত ২৫ লাখ গবাদি পশু ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ইমরান বলেন, বিশেষ করে কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে যারা গবাদি পশু লালন করেছে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। দুর্গত অনেক এলাকায় পশুর প্রয়োজনীয় খাবার নেই।
এমন অবস্থায় তিনি এখন চিকিৎসা, গরুর ঘর তৈরি করে দেওয়া ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি খামারিদের ব্যাংকঋণ মওকুফের দাবি তোলেন। সহজ শর্ত ও সুদবিহীন কৃষিঋণের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
ঈদের আগে চোরাইপথে আসছে গরু
এবার কোরবানির জন্য চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত থাকার তথ্য দিয়ে ইমরান বলেন, ঈদের আগে নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত গলিয়ে গরু-মহিষ ঢুকছে।
“কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে অন্য বছরের চেয়ে বেশি পশু ঢুকছে এবার। কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনও প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে আনা হচ্ছে গরু। চোরাপথে আসা এসব পশু বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে, রীতিমতো সীমান্ত এলাকায় হাট বসিয়ে “
সীমান্ত পথে গরু আসা বন্ধে কঠিন নজরদারি করার দাবি জানান তিনি।