হরতাল-অবরোধে চলতি বছরের শুরুর ১৫ দিনে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
Published : 18 Jan 2015, 05:27 PM
বিরোধী জোটের টানা অবরোধের মধ্যে রোববার চট্টগ্রাম চেম্বার মিলনায়তনে এক সভায় এই দাবি করে তারা রাজনীতিবিদদের সহিংস কর্মসূচি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের মধ্যে সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহন নিরাপদ ও নিশ্চিত রাখতে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
গত ১৫ দিন ধরে অবরোধের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন করা নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার এই মতবিনিময় সভা করে, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও ছিলেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম তার বক্তব্যে জননিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনীতিতে অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেন।
“এ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন এসএমই খাতে দেড়শ কোটি, উৎপাদন খাতে ১০০ কোটি, পণ্য ও যাত্রী পরিবহন খাতে ৬৮ কোটি, রপ্তানি খাতে ৬৯৫ কোটি টাকাসহ ১৫ দিনে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং মহাসড়কে পণ্য পরিবহন ঝুঁকিমুক্ত করাসহ নয় দফা দাবি দেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি।
“চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক থাকলেও নিরাপত্তার কারণে আমদানি-রপ্তানি পণ্য, কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ছে।”
চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যাদের জন্য এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তাদের আমরা এই সভায় হাজির করতে পারিনি।”
সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা মহাসড়কে পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয়ভাবে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন।
উপস্থিত ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান বলেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। যেখানে সহিংসতা বেশি হচ্ছে সেখানে সর্বদলীয় কমিটি করে পাহারার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
‘যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা’
মহাসড়কে সহিংসতায় যুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কেএম হাফিজ আক্তার বলেছেন, অন্যান্য যে কোনো সময়ের চেয়ে নিরাপত্তায় বেশি বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
তিনি বলেন, অবরোধের নামে মহাসড়কে নাশকতা চালানো হচ্ছে। দুই-একজন বিচ্ছিন্নভাবে এসে ককটেল বা পেট্রোল বোমা ছুড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পাশাপাশি অর্থদাতাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “যারা যানবাহনে নাশকতা করছে, তারা পেইড লোক।”
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশি পাহারায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করা হচ্ছে।
নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে উল্লেখ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইলে তা দেওয়া হবে।
এছাড়া জ্বালানি তেল পরিবহনেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, “জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। মুষ্টিমেয় কিছু সন্ত্রাসী নগরীতে নাশকতা চালাচ্ছে।”
সভায় বক্তব্য রাখেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুল, বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম আক্তার হোসেন, আন্তঃজেলা পরিবহন সমিতির মনির হোসেন, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালামত আলী, চাক্তাই শিল্প বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন, ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির হোসেন, ক্যাব সভাপতি নাজের হোসাইন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী।