কিউকম ও তাদের একমাত্র পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের প্রতিনিধিরা গ্রাহকের ছয় হাজার ৭২১টি ক্রয়াদেশের বিপরীতে ৫৯ কোটি টাকার বেশি হিসাব চূড়ান্ত করেছেন; যা ফেরত দিতে ই-কমার্স কোম্পানিটির আপত্তি নেই।
উভয় পক্ষের বৈঠকে প্রথম ধাপে এই অঙ্কের হিসাবের বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে বলে সোমবার কিউকমের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
এতে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আগের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে দীর্ঘদিন থেকে এসব গ্রাহকের আটকে থাকা টাকা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল।
মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গত সেপ্টেম্বর থেকে ফস্টারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে অবরুদ্ধ থাকায় কিউকমের অর্থ আটকা রয়েছে।
সোমবার দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সই করা প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
এখন টাকা ফেরতের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেব টাকাগুলো দ্রুত গ্রাহকের কাছে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।
কিউকমের আইনজীবী আজাদ জানান, ছয় হাজার ৭২১টি ক্রয়াদেশের বিপরীতে ৫৯ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৪৭ টাকার একটি হিসাবের বিষয়ে ফস্টারের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। “এসব গ্রাহক টাকা জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। ফলে এই টাকাগুলো গ্রাহকের কাছে ফেরত যাবে।“
পেমেন্টে গেটওয়ে ফস্টারের কাছে এ অর্থ জমা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কিউকমের কোনো আপত্তি নেই।
কিউকমের মতোই নানা অভিযোগে তাদের পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এখন গ্রাহকের টাকা ফেরাতে হলে অবরুদ্ধ অ্যাকাউন্ট সচল করতে হবে।
আইনজীবী আজাদ আগেই জানিয়েছিলেন, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে যাত্রা শুরু করা কিউকম ফস্টারের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিয়েছে। এখনও ফস্টারের কাছে কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে। এর বিপরীতে গ্রাহকরা কিউকমের কাছে ক্রয়াদেশ বাবদ ২৫০ কোটি টাকা পাবেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে ফস্টারের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক আল বেরুনী জানিয়েছেন, আটকা টাকার মধ্যে ৬৮ কোটি টাকার পণ্য ইতোমধ্যে সরবরাহ করেছে কিউকম, এই বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এই টাকা কিউকমের অ্যাকাউন্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাদবাকি টাকা যাবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে।
গত ৩০ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসক্রো পদ্ধতিতে ই-কমার্সের টাকা পরিশোধের নিয়ম চালু হওয়ার পর বিভিন্ন কারণে পেমেন্ট গেটওয়েতে ২১৪ কোটি টাকা আটকা পড়েছে।
পণ্য বুঝে পাওয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের চূড়ান্ত সাক্ষ্য না পাওয়ার কারণেই টাকাগুলো আটকা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।
যেসব ই-কমার্সের টাকা আটকা পড়েছে এর অধিকাংশই গ্রাহক প্রতারণার মামলার মুখে পড়েছে। মামলা চলমান থাকায় এসক্রোতে আটকা টাকার বিষয়ে সুরাহা হচ্ছে না।
কিউকমের আইনজীবী আজাদ বলেন, সব মিলিয়ে গত ৪ অক্টোবর কিউকমের চেয়ারম্যান ও সিইও মোহাম্মদ রিপন মিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত যে টাকা এসেছে তার পরিমাণ ৩৯৫ কোটি থেকে ৩৯৭ কোটি টাকা।
কিউকমের কাছে গ্রাহকদের পাওনা অর্থের বেশির ভাগই বাইক কেনার জন্য অগ্রিম হিসেবে জমা পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ হিসাব মতে আরও ২২ হাজার মোটরসাইকেলের অর্ডার ডেলিভারি করতে হবে কিউকমকে। তা না হলে এসব অর্ডারের টাকা ফেরত দিতে হবে।
কিউকমের অফিসে তালা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের পরিচালক সফিকুজ্জামানের মধ্যস্থতায় ফস্টার-কিউকমের মীমাংসা বৈঠক শুরু হলেও কিউকমের অফিসে কাগজপত্র তালাবদ্ধ থাকার কারণে হিসাব চূড়ান্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন কিউকমের আইন উপদেষ্টা আজাদ।
তিনি বলেন, হিসাব দিতে গিয়ে কিউকমের অফিসে ঢোকার প্রয়োজন হলেও সিলগালা থাকার কারণে তারা ঢুকতে পারেননি। অনেক কাগজপত্র সফটওয়্যারে ইনপুট দেওয়া প্রয়োজন কিন্তু সেই কাজও থেমে আছে। ফলে হিসাব চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে অফিস ও ওয়্যারহাউজ খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আগামী দুই এক দিনের মধ্যে চিঠি দেবে কিউকম কর্তৃপক্ষ। আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: