গেটওয়েতে থাকা ২১৪ কোটি টাকা ফেরতে সময় লাগবে: বাণিজ্যমন্ত্রী

পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা পড়া টাকা ফেরত পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2021, 04:13 PM
Updated : 25 Oct 2021, 04:13 PM

সোমবার সচিবালয়ে ডিজিটাল কমার্স নিয়ে সাম্প্রতিক সমস্যা পর্যালোচনায় আন্ত:মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে একথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, “গত জুলাইয়ের পর এসক্রো সার্ভিসে বা পেমেন্ট গেটওয়েতে ২১৪ কোটি টাকা আটকা আছে। এ টাকা ফেরতে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। আইনি জটিলতার বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা বলেছি। এই সমস্যার সমাধানে একটু সময় লাগবে।“

ই-কমার্সে কেনাকাটায় গ্রাহকের টাকা সুরক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত জুলাই থেকে এসক্রো সার্ভিস চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ নিয়মের আওতায় পণ্যের অর্ডার করে গ্রাহকের দেওয়া অগ্রিম টাকা জমা থাকছে পেমেন্ট গেটওয়েতে। গ্রাহক পণ্য বুঝে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই শুধু সেই টাকা ছাড় করা হচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।

সোমবারের সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দীন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে টিপু মুনশি বলেন, “আজকে যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে তার মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে যারা আছেন তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে তারা এটা দেখবেন।

“নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে জুলাই থেকে যাদের টাকা আটকে আছে, সে টাকাগুলো যেন তাদের কাছে ফেরত যায়। এ বিষয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে।“

ই-কমার্স খাত নিয়ে সুপারিশ তৈরি করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে তাদের কাজ শেষ হতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

কত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, “জুলাই থেকে যে সব ট্রানজেকশন হয়েছে, সেখানে যেসব অর্ডার ডেলিভারি হয়নি সেই টাকা আছে। সুতরাং কাস্টমারও চিহ্নিত ও টাকার পরিমাণও চিহ্নিত।“

টাকার পরিমাণ ২১৪ কোটি টাকা উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, আইনি জটিলতা সমাধান করে টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

কী ধরনের আইনি জটিলতা সেখানে আছে- সেবিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যায়নি বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে। 

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে আদালত একটা কমিটি করে দিয়েছে। তাদের যে টাকাটা আছে সেটা কিভাবে ফেরত দেওয়া যায়। আমাদের হাতে কিছু নাই। ৫ জনকে দিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। সব কিছু নির্ভর করে আদালতের ওপর। আমরা শুধু চেষ্টা করছি।”

ভবিষ্যতে এসক্রো সার্ভিস স্বয়ংক্রিয় করার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

“এসক্রো সার্ভিস অটোমেটিক করার জন্যই আজকে এ সভা করা হল,” বলেন তিনি।

এসক্রো সার্ভিস চালু হওয়ার পর পেমেন্ট গেটওয়েতে ৪০০ কোটি টাকার বেশি আটকা পড়েছে বলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েকে জানানো হয়, পণ্য বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে পেমেন্ট গেটওয়েতে গ্রাহকের ২১৪ কোটি টাকা আটকা আছে।

জুলাইয়ে এসক্রো সার্ভিস চালুর আগে যেসব গ্রাহকের টাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গেছে সে বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যে টাকা এসক্রো অ্যাকাউন্টে আছে সেটা ফেরত দেওয়া হবে। যে টাকা ই-কমার্স কোম্পানিগুলো নিয়ে গেছে সে টাকাতো বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই, সেটাতো দিতে পারবে না।

ভবিষ্যতে ইকমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য কোম্পানিগুলোকে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা ইবিআইডি সংগ্রহ করতে হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

আগামী তিন মাসের মধ্যে আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় এই পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন নিতে হবে আগামী তিন মাসের মধ্যে। এ সময়ে যারা নিবন্ধন করতে পারবে না, তারা ব্যবসা করতে পারবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। আর যারা নিবন্ধন করবে না তারা আউট। আউট অব দ্যা বিজনেস।

“এ বিষয়ে ফুল সার্পোট দেবে আইসিটি ডিভিশন। আর একটি হচ্ছে সেন্টাল লজিস্টিক ট্রাকিং প্লাটফর্ম (সিএলটিপি), আইনগতভাবে ট্র্যাক করার জন্য। সেন্টার কপপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে যদি কোথাও কোনো অভিযোগ থাকে বা কারও কোনো বিষয় থাকে, তা আইসিটি ডিভিশন করে দেবে।”