কিউকম ও গ্রাহকের ৩৯৭ কোটি টাকা উদ্ধারে তৎপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের কাছে আটকে থাকা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম কিউকম ও এর গ্রাহকদের ৩৯৭ কোটি টাকা ফেরত দিতে ‘তৎপর’ হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; এজন্য দুই কোম্পানিকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দিতে হবে প্রতিবেদন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2021, 04:00 PM
Updated : 28 Dec 2021, 04:29 PM

মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গত সেপ্টেম্বর থেকে ফস্টারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে অবরুদ্ধ থাকায় বড় অঙ্কের এ অর্থ আটকা রয়েছে।

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে দুই কোম্পানির লেনদেন জটিলতার বিষয়টি সুরাহা করতে আলোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে সিআইডি, এসবি, বাংলাদেশ ব্যাংক, ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট, আইন মন্ত্রণালয়, কিউকম ও ফস্টারের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কিউকমের পক্ষে তিনজন আইনজীবী এবং কারাগারে থাকা কোম্পানির চেয়ারম্যান রিপন মিয়ার একজন আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পরে সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা আটকা আছে ফস্টারের কাছে। এর মধ্যে কিছু টাকা পাবে কিউকম এবং কিছু টাকা গ্রাহকের কাছে ফেরত যাওয়ার কথা।

“বৈঠকে আমরা বলে দিয়েছি, ফস্টার ও কিউকমের লোকজন বসে কোন পক্ষে কত টাকা যেতে পারে, সেটা যেন আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।“

টাকা পেলে কিউকম পণ্য ডেলিভারি কিংবা গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফস্টারের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের কিছু ইস্যু আছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আছে।”

বৈঠকে কিউকমের গ্রাহকদের ৩৯৭ কোটি টাকা নিজেদের কাছে জমা থাকার কথা পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানি ফস্টার স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।

কিউকমের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে যাত্রা শুরু করা কিউকম ফস্টারের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিয়েছে।

“এখন কিউকমের কাছে গ্রাহকের পাওনা ২৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ফস্টারের কাছে আটকা আছে ৩৯৭ কোটি টাকা। এই টাকা উদ্ধার হলে গ্রাহকের সব টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে আমরা বৈঠকে জানিয়েছি।“

বৈঠকে ফস্টারের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আটকা টাকার মধ্যে ৬৮ কোটি টাকার পণ্য ইতোমধ্যে সরবরাহ করেছে কিউকম। এই টাকা কিউকমের অ্যাকাউন্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাদবাকি টাকা যাবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে।

এখন দুই পক্ষের উপস্থাপন করা এসব তথ্য যৌথভাবে ঐক্যমতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে দিতে বলা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, “আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে তাদেরকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।“

গত ৩০ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসক্রো পদ্ধতিতে ই-কমার্সের টাকা পরিশোধের নিয়ম চালু হওয়ার পর বিভিন্ন কারণে পেমেন্ট গেটওয়েতে ২১৪ কোটি টাকা আটকা পড়েছে।

পণ্য বুঝে পাওয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের চূড়ান্ত সাক্ষ্য না পাওয়ার কারণেই টাকাগুলো আটকা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য। যেসব ই-কমার্সের টাকা আটকা পড়েছে এর অধিকাংশই গ্রাহক প্রতারণার মামলার মুখে পড়েছে। মামলা চলমান থাকায় এসক্রোতে আটকা টাকার বিষয়ে সুরাহা হচ্ছে না।

কিউকমের আইনজীবী আজাদ বলেন, গত ১৮ জুন ফস্টার সর্বশেষ কিউকমের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছিল। ২২ জুন পর্যন্ত হিসাব করে দেখা যায় ফস্টারের কাছে ২২০ কোটি টাকা জমেছিল।

৩০ জুন এসক্রো সিস্টেম চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রাহকের প্রচুর টাকা ফস্টারের কাছে গেলেও তারা কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। সব মিলিয়ে গত ৪ অক্টোবর কিউকমের চেয়ারম্যান ও সিইও মোহাম্মদ রিপন মিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত যে টাকা এসেছে তার পরিমাণ ৩৯৫ কোটি থেকে ৩৯৭ কোটি টাকা।

বৈঠকে ফস্টারের সিনিয়র ম্যানেজার আল বিরুনি উপস্থিত থাকলেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

আইনজীবী আজাদ বলেন, বৈঠকে ফস্টারকে ইতিবাচক মনে হয়েছে। তাদের অবরুদ্ধ হয়ে থাকা অ্যাকাউন্ট খুলে দিলে কিউকমের টাকা ফেরত দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।

অপরদিকে কিউকমের কাছে গ্রাহকদের পাওনা অর্থের বেশির ভাগই বাইক কেনার জন্য অগ্রিম হিসেবে জমা পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ হিসাব মতে আরও ২২ হাজার মোটরসাইকেলের অর্ডার ডেলিভারি করতে হবে কিউকমকে। তা না হলে এসব অর্ডারের টাকা ফেরত দিতে হবে।

সব মিলে গ্রাহকদের ২৫০ কেটি টাকা ফেরত দিতে হবে এ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে বলে জানান এ আইনজীবী।

আরও পড়ুন