পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা ই-কমার্সের টাকা ফেরতের নির্দেশ

ই-কমার্সে গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগের মুখে চালু এসক্রো সিস্টেমে আটকা পড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করতে পেমেন্টে গেটওয়েগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2021, 05:15 PM
Updated : 15 Dec 2021, 05:15 PM

বুধবার গেটওয়েগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো এক নির্দেশে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলা হয়।

তবে প্রাথমিকভাবে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা চলমান নেই, সেগুলোর টাকাই আপাতত ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে।

পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর মধ্যে ডিজিটাল অর্থ লেনদেন প্রতিষ্ঠান নগদ, সফটওয়্যার শপ লিমিটেড, সূর্যমুখী লিমিটেড, ফস্টার করপোরেশন, বিকাশ লিমিটেড ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান এএইচএম সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন আলোচনায় ও বৈঠকে প্রাথমিকভাবে আমরা ২১৪ কোটি টাকা আটকে থাকার একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। “প্রাথমিকভাবে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা চলমান নেই তাদের অর্থই ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।“

যেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা চলমান সেগুলো কেস বাই কেস আদালত থেকে অনুমোদন এনে টাকা ফেরত নিতে পারবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা টাকা টাকা ফেরত দিতে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই চিঠি আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ (বুধবার) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

কমমূল্যে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার পর পণ্য না দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে দেশের বেশির ভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয় এ বছরের অগাস্টের পর থেকে।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে বৃহস্পতিবার ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলের বাসায় যখন র‌্যাবের অভিযান চলে, তখন বাইরে এই ই-কমার্স সাইট থেকে পাওনা পাওয়ার আশায় বিক্ষোভ করে ক্রেতারা।

এর আগে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার পর পণ্য বুঝে না পাওয়ার ব্যাপক অভিযোগ ওঠার পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে ‘এসক্রো সিস্টেম’ চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

এ ব্যবস্থায় গ্রাহকের পণ্য বুঝে পাওয়া নিশ্চিত না হলে গ্রাহকের অর্থ ই-কমার্সের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে তা পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাদানকারীদের কাছে রক্ষিত থাকবে বলে গত জুলাই মাসে নির্দেশনা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর ই-কমার্সের নামে প্রতারণা অনেকাংশেই সঙ্কুচিত হতে থাকে। এ সময়ের পর থেকে গ্রাহক পণ্য বুঝে পেয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পরই পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

এ ব্যবস্থা চালুর পর এ সিস্টেমে বড় অঙ্কের অর্থ জমা পড়েছে।

প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসার পর একের পর এক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মামলা, গোয়েন্দা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে।

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, কিউকম, দালাল প্লাসসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, অনেকে গেছেন আত্মগোপনে।

পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা থাকা ডিজিটাল কমার্স লেনদেনের অর্থ সংশ্লিষ্ট ভোক্তাদের ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, “যেসব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা চলমান নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধিত অর্থের মধ্যে আপনাদের কাছে জমা থাকা অর্থ সংশ্লিষ্ট ভোক্তাদের তথ্যাদি যাচাইকরণ পূর্বক ফেরত প্রদানের অনুরোধ করা হল।“

নগদের হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা অনুযায়ী খুব শিগগির কোনো গ্রাহকের টাকা আটকা আছে কি না তা খুঁজে দেখা হবে। যাদের নামে কোনো মামলা চলমান নেই তাদের টাকা অচিরেই ফেরত দেওয়া হবে।

প্রতারণার অভিযোগের মুখে থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পেমেন্ট গেটওয়েতে টাকা আটকা থাকার কারণে গ্রাহকের পণ্য ফেরত দিতে পারছে না বলে অভিযোগ করে আসছিল।

তবে কী পরিমাণ টাকা আটকা রয়েছে তা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এখনও যাচাই করা যায়নি।

সম্প্রতি কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া আলেশা মার্ট ওই সময় দাবি করেছিল, পেমেন্টে গেটওয়েতে তাদের ৫০ কোটি টাকা আটকা রয়েছে যা হাতে পেলে তারা গ্রাহকের পাওনা অনেকাংশেই পরিশোধ করতে সক্ষম হবে।

অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানও তাদের শত কোটি টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা রয়েছে দাবি করে।