গরম প্রচণ্ড বলে চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু বৃষ্টিহীন অবস্থা প্রভাব ফেলেছে ফলনে, আবার লকডাউনের কারণে পরিবহনে খরচ বেশি- এসব মিলিয়েই এবার তরমুজের বাজারে আগুন বলে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
Published : 28 Apr 2021, 07:23 PM
এবার তাপদহের মধ্যে রোজা চলায় গ্রীষ্মের সরস ফল তরমুজের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি দামও অনেক বেশি। আবার কেজি দরে বিক্রি নিয়েও চলছে অসন্তোষ।
বুধবার ঢাকার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ মানের তরমুজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। ভালো মানেরগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। এতে বড় আকারের (৮ কেজি) একটি তরমুজ কিনতে ৫০০ টাকার মতো লাগছে।
পাইকারী বাজার পুরান ঢাকার বাদামতলীতে গিয়ে দেখা যায় গড়ে কেজি তরমুজের দাম ১৫-২০ টাকা কম পড়ছে। পাইকারিতে তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হয় না। খুচরা ব্যবসায়ীরা পিস হিসেবে কিনে কেজি দরে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বছর যে তরমুজ ২০০ টাকায় কেনা যেত, সেই তরমুজ কিনতে এবার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাগছে বলে ক্রেতারা জানান।
রাজারবাগ এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বছর যাবৎ ঢাকায় আছি, তরমুজের দাম এত বেশি দেখি নাই। ২০০ টাকার তরমুজ এখন ৪৫০টাকা।”
আবার এবার সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাখালপাড়া থেকে কারওয়ান বাজারে তরমুজ কিনতে আসা মো. আহাদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বড় সাইজের তরমুজ কিনি নিয়মিত। গত সপ্তাহেও ২৫-৩০ টাকা কেজিতে কেনেছি। আজকে দেখি ৬০ টাকা কেজি।”
দাম বেশি হওয়ার কারণ খুঁজতে কৃষক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের আবাদ বেশি হলেও পানির সঙ্কটে ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না চাষিরা।
খুলনার দাকোপ উপজেলায় ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদকারী রাসখোলা গ্রামের নিরাপদ রপ্তান বলেন, পানির অভাবে তার তিনটা ক্ষেতে গাছ মরে গেছে। অন্যটিতেও মরা শুরু করেছে।
এবছর বৈশাখ বৃষ্টিহীন যাচ্ছে, গত মার্চ থেকে এনিয়ে তৃতীয় তাপদহ বইছে দেশজুড়ে। বৃষ্টি না হওয়ায় তরমুজের ফলনে যেমন প্রভাব পড়েছে, তেমনি জনজীবনে নাভিঃশ্বাস ওঠায় বেড়েছে এমন সরস ফলের চাহিদা।
তারপরও কৃষক পর্যায়ের চেয়ে ঢাকায় দামের ব্যবধান বেশি কেন- জানতে চাইলে বাদামতলীর আড়তদার বিএম রফিক উল্লাহ পরিবহন সঙ্কটকে দায়ী করেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বরিশাল থেকে যে তরমুজগুলো নিয়ে আসি, তার বেশিরভাগই যাত্রীবাহী লঞ্চে আসে। লঞ্চ বন্ধ থাকার কারণে ভাড়া বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া তরমুজের চাহিদাও আগের চেয়ে বেড়েছে।”
পিস হিসেবে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা কেজি দরে বিক্রি করায় দাম আরও বেড়ে যায় বলে দাবি করেন পাইকারি বিক্রেতা রফিক।
তিনি বলেন, “আমরা এখানে পিস হিসেবে বিক্রি করি। ১০-১৩ কেজি ওজনের তরমুজ ৩০০-৩৫০টাকার মধ্যে ছেড়ে দিই। আর ৭-১০ কেজি ওজনের তরমুজ ২৫০-৩০০টাকা বিক্রি করি।”
তবে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আল মামুন দাবি করেন, পাইকারি বাজারে তাদের কেনাই বেশি দরে বলে দাম বেশি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তরমুজের দাম তো অনেক বেশি। আমাদের কেনা বেশি দামে, তাই বিক্রিও বেশি দামে। আমরা ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে কিনি। বিক্রি করি ৫৫-৬০টাকা করে।”
কারওরান বাজারের আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, গরমে চাহিদা বেড়েছে বলে তরমুজের দাম এখন বেশি।
দাম বেশির পর আবার সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজে কৃত্রিম রঙ ঢোকানোর অভিযোগও রয়েছে।
তবে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, তাদের এরকম অসাধু কাজ করার সুযোগ নেই।
বাদামতলীর পাইকারি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তরমুজে সিরিঞ্জ দিয়ে রং ও চিনি ঢোকানোর কাজ পাইকাররা করে না। এটা করলে বড় জোর একদিন তরমুজ রাখা যায়। সুতরাং আমাদের এখানে এটা করার কোন সুযোগ নেই। লাভের জন্য করতে গেলে চালানই শেষ হয়ে যাবে।”
কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এ বছর প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করায় বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ক হওয়ার আগেই মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করেছেন কৃষকরা। সেই অপরিপক্ক তরমুজ পরিপক্ক দেখাতে ভেতরে রঙ ঢোকানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বিক্রেতা বলেন, “যেই তরমুজগুলোর ভেতরে লাল কম, সেগুলো কেটে দেখালে কাস্টমার নেয় না। তাই লাল রং আর চিনির মিকশ্চার সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজে দেয়।”