পেঁয়াজের সঙ্কট সামাল দিতে সরকার কার্গো বিমানযোগে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
Published : 16 Nov 2019, 05:56 PM
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে বক্তব্যে চলমান পেঁয়াজ সঙ্কট নিয়ে জনগণকে অভয় দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন পেঁয়াজ নিয়ে একটা সমস্যা চলছে। এই সমস্যা যাতে না থাকে সেজন্য কার্গো ভাড়া করে আমরা এখন পেঁয়াজ আনা শুরু করেছি। আগামী কাল-পরশুর মধ্যে বিমানে পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। এখন পেঁয়াজ বিমানেও উঠে গেছে, কাজেই আর চিন্তা নাই। সেই ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।”
দেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, “সব দেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে কেন কী কারণে এতটা অস্বাভাবিকভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে আমি ঠিক জানি না।
“এখন আমরা বিমানের কার্গোতে করে পেঁয়াজ আমদানি করে নিয়ে আসছি। আমরা দেখতে চাই এই ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না। স্বাভাবিকভাবে আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় অনেক পণ্যের উৎপাদন বাড়ে বা উৎপাদন কমে। যেহেতু পেঁয়াজটা বেশি দিন রাখা যায় না।
“কেউ যদি এখন দাম বাড়িয়ে দুপয়সা কামাতে চান, তাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, পেঁয়াজ তো পচেও যাবে। পচা পেঁয়াজও শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তাহলে এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়া কেন?”
“সবাইকে অনুরোধ করব, এভাবে চেষ্টা না করে এর পেছনে কারণটা কী সেটা খতিয়ে দেখা। অবশ্য ইন্ডিয়াতেও পেঁয়াজের দাম অনেক। সেখানে তারা একশ রুপিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ কিনছে।
“শুধু একটা স্টেটে দাম কম। তারা তাদের পেঁয়াজ বাইরে যেতে দেয় না। সার্বিকভাবে সেখানেও দাম বেশি। আমরা যেখান থেকে কিনছি সেখান থেকেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।”
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের আরও নির্মোহ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “একজন রাজনীতিকের জীবনে কী পেলাম না পেলাম সেটা বড় কথা না, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, মানুষকে দিতে পারলাম- সেটাই বড় কথা। সেই চিন্তা নিয়ে রাজনীতি করলে সেই রাজনীতি কখনও ধংস হয় না।”
‘শুদ্ধি অভিযান’ অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা এই দেশ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দূর করতে চাই। এর বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, সেই অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব। কারণ বাংলাদেশের মানুষের জীবনের শান্তি, নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই উন্নতি সম্ভব।”
অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার চেয়ে সৎ পথে নুন ভাত খাওয়া অনেক মর্যাদার, অনেক ভালো- এ কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “কেন দুর্নীতি করে চুরি করে টাকা বানাতে হবে, কেন? সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করে সেইটা দিয়ে আবার বিলাসবহুল জীবন-যাপন করা, ওটা দিয়ে ফুটানি ঠাটারি করা এদেশের মানুষ বরদাশত করবে না।”
সৎ পথে চললে যে মাথা উঁচু করে চলা যায়, তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাঝে আবার আমেরিকায় জয়কে কিডনাপ করার জন্য এফবিআইয়ের একজন অফিসারকে হায়ার করে। টাকা দিয়ে কিনে ফেলে। আমি আমার পরিবার, আমার বোনের কী কী আছে, সেগুলো খোঁজা শুরু করে। খালেদা জিয়া তার দুই ছেলের দুর্নীতির প্রসঙ্গ চলে আসল।
“একমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তার বোন, একমাত্র আমাদের বিষয়ে কোথাও কোনো রকম কমিশন খাওয়া বা দুর্নীতির কোনো দৃষ্টান্ত তারা পায় নাই। কিন্তু যেই অফিসার তারা হায়ার করেছিল তার বিরুদ্ধে এফবিআই মামলা করে। সেই মামলা চালাতে গিয়ে বেরিয়ে আসল যে, তারা শুধু তাকে হায়ার করেনি। তারা দুইজন লোক নিয়োগ করেছিল যে জয়কে কিডনাপ করে আমেরিকায় হত্যা করবে।
“কাজেই আপনারা বুঝতেই পারেন, তারা পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট হত্যা করেই থেমে থাকেনি, তাদের চক্রান্ত অনেক প্রসারিত। তারা খুঁজতে গেল আমাদের দুর্নীতি, ধরা পড়ল নিজেরাই।”
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনকালে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নেতাকর্মীদেরকে এসব ভালো কাজ জনগণের কাছে প্রচার করার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমরা বার বার জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে ক্ষমতায় আসছি। রাষ্ট্র পরিচালনা করে আজকের বাংলাদেশ। যেখানে বিএনপির আমলে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ ভাগ, আজকে আমরা কমিয়ে এনেছি ২১ ভাগে। ইনশাআল্লাহ আমরা আরও কমিয়ে আনব। আজকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি। প্রায় দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা যেই দেশ রেখে গিয়েছেন তাকে গড়ে তোলার দায়িত্ব যারা মুজিব আদর্শের অনুসারী আমাদের সকলের। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে মর্যাদা দিয়ে গেছেন সেটাকে ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
“যেহেতু আমরা দীর্ঘসময় সরকার পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি তার কারণেই আজকে এত উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছি। উন্নয়ন শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক না, শহরকেন্দ্রিক না। আমাদের উন্নয়ন গ্রাম পর্যায়ে, তৃণমূল পর্যায়ে। একেবারে গ্রামের মানুষগুলোর জীবনেও যেন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে সেদিকে লক্ষ রেখে আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে করে যাচ্ছি। ”
তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যে সব ইউনিয়নে (৪৫০০) ব্রডব্যান্ড পৌঁছে যাবে। আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, আজকে দেশের সব মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারছে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। বাংলাদেশকে একটা উচ্চ মর্যাদায় নিয়ে গেছি।
“এক ইঞ্চি জমিও পড়ে থাকবে না- এই নীতিতে অনেকগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প শুরু করেছিলাম। এখন নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে আমার বাড়ি আমার খামার। আমাদের নীতিটাই হচ্ছে কেউ পিছনে থাকবে না।”
সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ‘চক্রান্তের’ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ যখন ভালো থাকে আমাদের দেশে কিছু কিছু ক্ষুদ্র মানুষ আছে তাদের আঁতে ঘা লাগে। যারা কি না দারিদ্র্য বিক্রি করে চলত। কাজেই তারা সেখানে বার বার একটা বাগড়া দেওয়ার চেষ্টা করে, অপপ্রচার চালাতে চেষ্টা করে।
“আওয়ামী লীগ জনগণকে যে সেবা দিয়েছে তার খবর জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই গতিধারাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।”