তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার উপর ৪ দশমিক ৫ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ই-কমার্সভিত্তিক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব।
Published : 09 Jun 2018, 05:12 PM
ই কমার্সের বাজার যখন ‘১৭০০ থেকে ১৮০০ কোটি টাকায় বিস্তৃত’ হয়েছে এবং এই বাজারে প্রবৃদ্ধি যখন ‘দ্বিগুণ’, তখন ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এই খাতের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করেছে সংগঠনটি।
শনিবার সকালে বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানায় ই-ক্যাব।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, “ভার্চুয়াল ই কমার্স খাতে মূসক আরোপিত হলে এ খাতের উন্নয়ন নিশ্চিৎভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। মূসকের প্রভাব পড়বে সরাসরি ভোক্তার উপর। তাই আগামী ১০ বা ১৫ বছরের জন্য এই তথ্যপ্রযুক্তি খাত, ই-কমার্স খাতকে মূসকের আওতামুক্ত রাখা একান্ত সমীচীন হবে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার, সহ সভাপতি রেজওয়ানুল হক জামী, অর্থ সম্পাদক আব্দুল হক, যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার (নিশা) উপস্থিত ছিলেন।
এবার বাজেট প্রস্তাবে কৃষি, শিল্প, ভারী প্রকৌশলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ, প্রতিরক্ষণের লক্ষ্যে পণ্য ও সেবার বিভিন্ন পর্যায়ে নতুনভাবে অব্যাহতি প্রদান, ক্ষেত্রবিশেষে অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে।
বাজেটের এই অংশে ই-কমার্স খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানান ই-ক্যাব নেতারা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ সেবা নামে নতুন একটি সংজ্ঞা সৃষ্টি করেন।
অনলাইনভিত্তিক যে কোনো পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে এ সেবার আওতাভুক্ত করে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ সেবার উপর ৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার প্রস্তাবও রেখেছেন তিনি।
‘অনলাইনে পণ্য বিক্রয়’ বলতে বোঝানো হয়েছে- ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেই সব পণ্য ও সেবার ক্রয় বিক্রয়কে বুঝাবে যা ইতোপূর্বে কোনো উৎপাদনকারী বা সেবা সরবরাহকারীর নিকট হতে মূসক পরিশোধ করে গৃহীত হয়েছে এবং যাদের নিজস্ব কোনো বিক্রয় কেন্দ্র নেই।
এই ব্যাখ্যার পরিবর্তন চেয়ে ই-ক্যাব বলেছে, “নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র থাকলেও যারা অনলাইনে সেবা প্রদান ও অর্থ বিনিময় করে, তারাও অনলাইনে পণ্য বিক্রেতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।”
শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, অনলাইনে কেনাবেচার উপর কোনো কর বসানো হয়নি।
তিনি বলেছেন, “আমরা ভার্চুয়াল বিজনেস যেমন ইউটিউব, ফেইসবুক এগুলোর উপর ট্যাক্স ধার্য করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিন্তু অনলাইন বিজনেস আমরা আলাদা করেছি, এটার ওপর ভ্যাট বসাইনি।”
এনবিআর চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের পর ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ সেবা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তমাল।
তমাল বলেন, “অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শুধু ফেইসবুককেন্দ্রিক ব্যবসা করছেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। তারপর অনেকেই আবার এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে কেন্দ্র করে ই-কমার্স প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ভার্চুয়াল বিজনেস নামে যে নতুন সংজ্ঞা এসেছে, তাতে ই-কমার্সের এই উদ্যোক্তাদের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য আসেনি।
“এই সংজ্ঞায়নের ফলে ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা কীভাবে ভ্যাট প্রদান করবে, অডিট করবে কীভাবে- এ বিষয়ে আরও ক্ল্যারিফিকেশনের দরকার ছিল। কনফিউশন রয়ে গেছে।”
নতুন বাজেটে ফেইসবুক, গুগল ও ইউটিউবের মতো কোম্পানির বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের উপর করারোপের আইনি বিধান সংযোজনেরও প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ই-ক্যাবের সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক জামী বলেন, “এটা একটা ভাইটাল ডিসিশন। যারা ফেইসবুক, ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা প্রসার করছে, তাদের সঠিকভাবে ট্র্যাক করা যাবে। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে কীভাবে ভ্যাট এক্সাম্পশন হয়, তা সঠিকভাবে জানতে পারিনি কখনও আমরা। ট্রানজাকশনের এক্সাক্ট ডেটাও পাই না আমরা।”
ডেটাবেইস, প্রডাক্টিভিটি সফটঅয়্যার, যোগাযোগে ব্যবহৃত সফটওয়্যার, স্বয়ংক্রিয় ডেটা প্রসেসিং মেশিনে ব্যবহৃত সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেমের মতো সফটওয়্যার আমদানিতে সব খাতে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেইসঙ্গে এই খাতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির কথাও বলা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ই-ক্যাব বলেছে, “শুল্ক অব্যাহতিতে সফটওয়্যার শিল্প ও ডেটা অ্যানালাইসিস খাতে উদ্যোক্তা বাড়বে। এটা ই কমার্স খাতের জন্য বড় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।”
২০১৬ সালে অর্থ আইন সংশোধন করে ৩৩ নং অনুচ্ছেদে ই কমার্স ও অনলাইন শপিংকে আইটিএস- এর এক্সপ্লানেশন থেকে বাদ দেওয়া হয়। ফলে ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং খাত আয়করযোগ্য আইনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে।
এই আইনটির সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে ই-ক্যাব। এ বছর বাজেটে সে সিদ্ধান্তের প্রতিফলন না আসায় হতাশা ব্যক্ত করেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার।
তিনি বলেন, “অনলাইন বিক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতি ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে। এসব ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীরা মূসক নিবন্ধনের আওতায় পড়ে না। সরকার যখন ক্যাশলেস সোসাইটির কথা বলছে, তখন এই আইনটি তা বাস্তবায়নের অন্তরায়।”