ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে দুদিন ধরে কাজ বন্ধ রাখা আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
Published : 20 Dec 2016, 02:39 PM
শ্রমিকদের মঙ্গলবারই কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমার এই অনুরোধের পর যদি না আসেন আইনগতভাবে যা যা করার তাই করব।”
বেতন বৃদ্ধি, ঘরভাড়া না বাড়ানো, ‘কথায় কথায়’ ছাঁটাই না করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বেরন, বাইপাইল, নরসিংহপুরসহ আশপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা গত আট দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
এই পরিস্থিতিতে রোববার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা জেলা পুলিশের আয়োজনে ও গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করলে তাদের চিহ্নিত করা হবে, সরকার কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না।”
এরপর সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২৫টিগার্মেন্টের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান।
পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু জানান, বর্তমানে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু দ্রব্যমূল্য ও বাসাভাড়া বাড়তে থাকায় সর্বনিম্ন ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার রাতে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বাসায় ৪২টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মিন্টু জানান, আশুলিয়া এলাকায় আগামী তিন বছর বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে না বলে বৈঠকে আশ্বাস দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এছাড়া বেতন বৃদ্ধির জন্য মজুরি বোর্ডের কাছে রিভিউ আবেদন করতে বলা হয় শ্রমিক নেতাদের।
কিন্তু ওই আশ্বাসের পরও শ্রমিকরা কাজে ফেরেননি জানিয়ে আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, মঙ্গলবারও অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে।
শ্রমিকনেতা মিন্টুর ভাষ্য, তারা নিষ্ক্রিয় থাকলেও বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা নিজেরাই সংগঠিত হয়ে কাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিক্ষোভ দেখিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
গামের্ন্টস অ্যান্ড শিল্পশ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, “মন্ত্রীরা শ্রমিকদের শান্ত হয়ে কাজে যোগদানের আহ্বান জানালেও তারা তা শুনছেন না। মজুরি বৃদ্ধির তাৎক্ষণিক ঘোষণা দাবি করছেন তারা।”
এই প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেন, এই কর্মবিরতির কারণ কী- অনেক শ্রমিকই তা জানেন না।
কয়েক দফায় পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে শ্রম আইন অনুযায়ী তা পেশ করতে হয়। কিন্তু শ্রমিক নেতারা কোনো চাহিদার কথা সরকারকে বলেননি।
“আমাদের মনে হচ্ছে, আমরা আশঙ্কা করছি, যদি শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন, ট্রেড ফেডারেশন এই কর্মবিরতি সম্পর্কে না জানে, তাহলে এটা করা করছে? কোনো একটা গ্রুপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরের ক্ষতি করতে এই কাজ করছে, আমরা এটা খতিয়ে দেখব।”
পোশাক শ্রমিকদের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনারা না বুঝে যে কাজটি করছেন তা করবে না। দয়া করে আজকে এখুনি এই মুর্হূর্তে কাজে যোগদান করেন। আপনাদের কল্যাণের জন্য সরকার অনেক কাজ করছে।”
চুন্নু বলেন, শ্রমিকদের এই কর্মবিরতি শ্রম আইন অনুযায়ী ‘অবৈধ’। তাদের উচিৎ ‘সংগঠনের মাধ্যমে আইনগতভাবে’ এগিয়ে আসা এবং নিজেদের বক্তব্য লিখিতভাবে সরকারকে জানানো।
“অন্যায়ভাবে যদি দাবি আদায় করতে চান তাহলে সরকার এ ব্যাপারে কঠোর। কারণ এই সেক্টর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই সেক্টরে কোনো অন্যায় আবদার, কোনো অসৎ পথে, পেছনের পথে কেউ যদি কিছু করতে চান সেটা বরদাস্ত করা হবে না।”
কাজ বন্ধ থাকা কারখানার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত জানিয়ে চুন্নু বলেন, “কিছু কিছু মহল সরকারের ভালো চায় না। এই সেক্টরটা ভালো থাক সেটা চায় না। সেটা হতে পারে দেশি বা বিদেশি। তারা এই কাজটা করছে বলে আমার মনে হয়। এটা আমরা বের করার চেষ্টা করছি এবং বের করতে পারব বলেই মনে করি।”
শ্রম সচিব মিকাইল শিপার ছাড়াও শ্রম মন্ত্রণালয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।