আলু-পেঁয়াজের দর গত বছর বাড়তে শুরু করে অস্বাভাবিক হারে। এবার দাম তার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
Published : 28 Jun 2024, 06:43 PM
মুরগি, আদা ও রসুনের দাম কিছুটা কমলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দর একশ টাকা ছুঁয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবজির দাম।
কদিন পর পর কোনো না কোনো পণ্যের দরে উত্থানের প্রবণতায় পেঁয়াজ ও আলু এই মুহূর্তে আলোচনার বিষয়।
গত বছর অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পর চলতি বছরও থামছে না পণ্য দুটির দর বৃদ্ধির প্রবণতা।
গত বছর এই সময়ে আলুর দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর আমদানির অনুমতি নিয়ে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে নানা আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে, কী কী করা যায়, তা নিয়ে নানামুখি উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল।
সেই আলুর খুচরা দর এখন ৫৮ থেকে ৬০, কোথাও কোথাও ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, কিন্তু এ নিয়ে কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না।
গত বছর এমন সময় দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজের দর ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। সেই পেঁয়াজ ঈদের আগেই উঠে গিয়েছিল ৯০ টাকা। ঈদের পর দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই সেখান থেকে বাড়ল আরও ১০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া রেললাইন সংলগ্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, ঈদে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছিল। ছুটি ও বৃষ্টির কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় দাম নতুন করে বেড়েছে।
তেজকুনিপাড়ায় বাজারে পেঁয়াজের দাম শুনে বিস্মিত হয়েছেন রহিমা খাতুন। তিনি বলেন, “ঈদের আগে আগে যখন বাড়তেছিল, তখন ভাবছি মাংসের সঙ্গে অতি দরকারি পণ্য, চাহিদা বেশি তাই দাম বাড়তেছে। কিন্তু ঈদ শেষ। এখন ঈদের চেয়েও বেশি দাম বাড়বে এটা কীভাবে সম্ভব?”
কারওয়ান বাজারে খুচরায় ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি আর পাবনার পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, “এখন পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। ভারতীয় যে পেঁয়াজ কয়েক জায়গায় পাইবেন, সেটাই ১০০ টাকা কেজি। তাইলে দেশি পেঁয়াজের দাম কমব কেমনে?”
কারওয়ান বাজারে পাইকারি দোকান মেসার্স মাতৃভান্ডারে পাবনার পেঁয়াজ ৮৫ ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এই দোকানের বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলছেন, ঈদের সময় তিনি ৭৬ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, “পেঁয়াজের চাহিদা আছে বাজারে। সেই হিসাবে মাল খুব বেশি নাই। তাই দাম বাড়তি। শুধু ঢাকায় না, মোকামেও তো দাম বেশি।”
ফরিদপুর থেকে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ করেন আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, ফরিদপুরে মোকামে এখন পেঁয়াজ শুক্রবারের বাজার ৮০ টাকা কেজি। ঈদের পরে মণ প্রতি চারশত টাকার মতো বাড়ছে। আর কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা বাড়ছে।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “মালের ঘাটতি আছে, আমদানি করার এলসির দাম বেশি। এখন ভারতীয় যে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ডলারের রেট বেশি হওয়ায় এই পেঁয়াজের দাম বেশি পড়তেছে। বর্ডারেই দাম ৯০ টাকা কেজি হচ্ছে। আর খুচরায় ১০০ এর উপরে।”
ফরিদপুরের ভাঙ্গার পেঁয়াজ চাষি হাবিব খান ২০ দিন আগে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৬৫ টাকা কেজি দরে।
তিনি বলেন, “তখন বাজার ঠান্ডা ছিল, কিন্তু এখন গরম। এখন কৃষক বিক্রি করতেছে ৮০ টাকার মত।”
দাম কেন বাড়ল- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ভারতের পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা। তাই আমাদের কৃষকদের কথা হইল আমরা কমে বিক্রি করব কেন, আমরাও বেশিতে বিক্রি করব।”
সবজির বাজারও গরম
মানুষের মাংসের প্রতি চাহিদা কমে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজিতে চাহিদা তৈরি হয়েছে। আর চাহিদা বাড়ায় চড়তে শুরু করেছে দাম।
তেজকুনিপাড়া কাঁচাবাজারে চিচিঙ্গা ৪০, পটল ও করলা ৫০ থেকে ৬০, কাকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ৯০, বরবটি ১০০ টাকা টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
লাউ আকার ভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে এই বাজারে।
কাঁচা মরিচের দাম দেখা গেছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা।
তেজকুনিপাড়া বাজারের বিক্রেতা মিনা আক্তার বলেন, “কারওয়ান বাজার থেকে আমি টমেটো কিনছি ২০০ টাকা কেজি দরে। অন্তত ২০ টাকা লাভ দিয়া বেচতে হবে। আর দেশি শসা আমার কেনাই পড়ছে ১০০ টাকা কেজি।”
কারওয়ান বাজারের খুচরাতেও দাম কিছুটা কম। এই বাজারে করলা ৪০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, পেঁপে, বরবটি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পঞ্চগড়ের টমেটো ১৪০ টাকা কেজি, আর ভারতীয় টমেটো ২০০ টাকা কেজিতে কিনছে ক্রেতারা। আর ছোট ও হলদে রঙের টমেটোর দাম তুলনামূলক কম, প্রতি কেজি ১০০ টাকা।
টমেটো বিক্রেতা মো. জাকির হোসেন বলেন, “ঈদের আগ থেকেই কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বাড়ছে। মিষ্টি টমেটোর সিজন তো শেষ পর্যায় এখন। তাই দাম বেশি।”
কমেছে যেসব পণ্যের
ঈদের পর বাজারে আদা ও রসুনের চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় দামও একটু কমতির দিকে। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে।
ভালোমানের আদার কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। দেশি ও ভারতীয় রসুন কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে তেজকুনিপাড়া বাজারে ক্রেতাদের দেশি ও ভারতীয় রসুন কিনতে হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকা কেজি দরে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে, সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে।
ডিমের দাম ডজনে কমেছে অন্তত ১০ টাকা। লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজন হিসেবে। আর হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।