‘সুবিধার’ ঋণের সুদ আয়ে নিতে শর্ত দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছাড়া প্রভিশনের অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2022, 05:50 PM
Updated : 22 Dec 2022, 05:50 PM

‘সুবিধাপ্রাপ্ত’ ঋণের উপর আরোপিত সুদ ব্যাংকের আয় খাতে নিতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের (প্রভিশন) শর্ত জুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে পুনর্গঠন, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ও এককালীন এক্সিট সুবিধার ঋণে আরোপিত সুদ নগদ আদায় ছাড়া আয় খাতে নেওয়া যাবে না।

কোনো ঋণের বিপরীতে চুক্তি অনুসারে বছর শেষে সম্ভাব্য যে সুদ একটি ব্যাংক আদায় করতে পারে, তাই হচ্ছে আরোপিত সুদ।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, সর্বোচ্চ সুদহারে একজন গ্রাহককে ১০০ টাকার ঋণ দিলে বছর শেষে ৯ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংক।

ব্যাংকের সুদ আয় হবে ৯ টাকা। ঋণটি নিয়মিত থাকলে অর্থাৎ খেলাপি না হলে এই ৯ টাকা নগদে আদায় না হলেও ব্যাংক আয় হিসেবে যোগ করতে পারবে আর্থিক প্রতিবেদনে।

‘সুবিধাপ্রাপ্ত’ ঋণের বেলায় ওই আরোপিত সুদ আয় খাতে নিতে পারবে কি না, তার কোনো নির্দেশনা ছিল না।

কোভিড মহামারীতে দেওয়া ঋণ, পুনঃতফসিলকৃত ঋন ও এককালীন এক্সিট খাতের আওতায় উদ্যোক্তাদের নেওয়া ঋণকে ‘সুবিধাপ্রাপ্ত’ ঋণ জানিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোকে এক সার্কুলার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এসব ঋণের বিপরীতে ২০২০ সাল থেকেই আদায়, সুদহার, শ্রেণিকরণে একাধিকবার সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল খেলাপি না করা। এমনকি গত বছরের জন্য ধার্যকৃত ঋণ কিস্তির ন্যূনতম ১৫ (পনের) শতাংশ জমা দিয়ে খেলাপি হতে মুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর আরও একটি সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা’ ও অর্থনীতিতে মহামারী পরবর্তী প্রভাব দেখিয়ে চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রদেয় ঋণ কিস্তির ৫০ শতাংশ দিলেই ওই গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না; আগে যা ছিল ৭৫ শতাংশ।

এ সুবিধা শুধু বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানদের জন্য প্রযোজ্য হবে। ডিসেম্বরের শেষ তারিখ পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ৫০ শতাংশ জমা দিলেই খেলাপি হওয়া এড়ানো যাবে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখা ও ঋণ গ্রহীতাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ সহজতর করতে এ নির্দেশনা প্রদান করা যাচ্ছে।”

বৃহস্পতিবারের সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, “সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ সমূহের সম্ভাব্য আদায় ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে ২০২২ সালের আরোপিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে।

“সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। তবে সিএমএসএমই খাতের বেলায় অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছাড়া প্রভিশনের অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। এছাড়া সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি (ঋণগ্রহীতার নাম, ঋণ স্থিতি, ধার্যকৃত সুদ, আয়খাত ও ইন্টারেস্ট সাসপেন্স হিসাবে স্থানান্তরিত সুদ, অতিরিক্ত প্রভিশনের পরিমাণ ইত্যাদি) সংশ্লিষ্ট শাখায় এবং প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভিাগে সংরক্ষণ করতে হবে।

ইসলামী শরীয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলো একই নীতিমালা অনুসরণ করে একইভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।