গত মৌসুমে খুচরা বাজারে যে ইলিশ পাওয়া যেত ৮০০-৯০০ টাকায়, সেই মাছ এবার পাইকারিতেই ১ হাজার ২০০ টাকায় মিলছে না।
Published : 15 Aug 2023, 02:49 PM
ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের পাশে খুচরা বাজারে ইলিশের দাম শুনে সোজা হাঁটা দিলেন মোহাম্মদ হায়দার আলী; বললেন, ‘দাম কইমা নিক, কমলে কিনুম’।
বিক্রেতা স্বপন চন্দ্র দাস এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম চেয়েছিলেন ১ হাজার ৯০০ টাকা। দাম শুনে হায়দার আলীর মতো বেশিরভাগ মানুষই ফিরে যাচ্ছিলেন।
এত দাম কেন- এই প্রশ্নে স্বপনের কথা, “আমরা যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বেচি। মোকাম (আড়ৎ) বলতে পারব দাম বাড়তি ক্যান।”
রাজধানীর মাছের আড়তগুলোর মধ্যে অন্যতম যাত্রাবাড়ীতে প্রতিদিন ভোরে ট্রাকে করে আসে ইলিশ। এরপর কয়েক হাত বদলে চলে যায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে।
আড়তের পাশেই বিক্রি হওয়ায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে দাম কিছুটা কম থাকে। কিন্তু সেখানেই এত দাম শুনে বর্ষায় ইলিশের স্বাদ দেওয়া হচ্ছে না অনেকের।
সোমবার পাইকারিতেই এক কেজি বা তার চেয়ে একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে। অপরদিকে আধা কেজি বা তার একটু বেশি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ টাকায়। সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছিল ৬০০ টাকা কেজি দরে।
সকালে আড়ৎ ঘুরে দেখা যায়, ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় হা-হুতাশ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উভয়ই।
ক্রেতারা বলছেন, গত মৌসুমে খুচরা বাজারে যে ইলিশ পাওয়া যেত ৮০০-৯০০ টাকায়, সেই মাছ এবার ১ হাজার ২০০ টাকায়ও মিলছে না। যাত্রাবাড়ী আড়তেই সোমবার তা পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম আরও বেশি।
চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম থেকে যাত্রাবাড়ীর আড়তে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে আসে ইলিশ। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছিল দেশে। জাটকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে সেই রেকর্ড এবার ছাড়াতে পারে বলে তখন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী আড়তের পাশের খুচরা বাজার থেকে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন আজিজুল ইসলাম। তবে দরদাম করে ফিরে যান তিনি।
এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম বিক্রেতা তার কাছে ১ হাজার ৯০০ টাকা চান। এরপর খানিকটা সরে গিয়ে স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ‘দাম বেশি, আরেকদিন কিনুম’।
কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আজিজুল বলেন, “এত্ত দাম হইলে কেমনে কিনুম, দেহি দাম কবে কমে।”
বিভিন্ন সাইজের ইলিশ সাজিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন খুচরা বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম। দরদাম করে তার কাছ থেকে ছোট আকারের তিনটি ইলিশ দেড় হাজার টাকায় কিনলেন হালিমা খাতুন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পুরো বাজার ঘুইরা দরদাম করলাম, দাম অনেক বেশি চায়। নিজের জন্য না, বাসায় মেমান আইব, ইলিশ খাওয়ানো লাগব, তাই কিনলাম।”
শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ীতে পাইকারি মাছ কিনতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রশিদ। ডাকে (আড়তে মাছ বিক্রির পদ্ধতি) সবচেয়ে বেশি দর দিয়ে বিভিন্ন সাইজের সাড়ে ১৯ কেজি ইলিশ মাছ কেনেন। সেগুলো আবার সাইজ অনুযায়ী আলাদা করে বিভিন্ন দামে বিক্রি করবেন।
ইলিশের এই দাম বেশির কারণ হিসেবে মাছের সরবরাহ কমের কথা বলছেন যাত্রাবাড়ী আড়তের বৈশাখী এন্টার প্রাইজের মালিক মাধব চন্দ্র।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গতবার পাইকারি দরে যে মাছ বিক্রি করছি ৪৫০ টাকা কেজি, এ বছরে তা ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এক কেজি ওজনের মাছ বিক্রি করছিলাম ৮০০-৯০০ টাকায়, তা আইজকা ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। আমদানি কম হওয়ায় যা আসে, তা ভাগেও পায় না ব্যবসায়ীরা।”