বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি থাকায় বিদেশি ফলের বিক্রি কমে গেছে, কমেছে আমদানিও
Published : 30 Sep 2022, 10:41 PM
আম, লিচু, তরমুজসহ প্রধান দেশীয় ফলের মৌসুম শেষ, বাজারে বিদেশি ফল থাকলেও তার স্বাদ নিতে গুনতে হচ্ছে চড়া দাম।
এ অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকেই ফল খাওয়া ছেড়েছেন, আর কিনলেও কমিয়েছেন পরিমাণ।
খাদ্য তালিকায় ফল খাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ থাকলেও নিত্যপণ্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে বহু মানুষ। অনেকেই জানাচ্ছেন, ফল কেনা এখন যেন তাদের কাছে বিলাসিতার নামান্তর।
সরকার ডলার বাঁচাতে ফুল, ফল, প্রসাধনী ও আসবাব পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করেছিল গত মে মাসে। বিদেশি ফলের বাজার তখন থেকেই চড়া। তবে তখন আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজের মওসুম থাকায় ধাক্কাটা অত বেশি গায়ে লাগেনি ক্রেতাদের।
দেশি ফলের মৌসুম শেষে এখন আপেল, কমলা, আঙুর কিনতে গিয়ে দাম বৃদ্ধির আঁচটা টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ। ততে বিক্রিও কমে গেছে বলে ফল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
মগবাজারের বাসিন্দা ওমর ফারুক একটি করপোরেট কোম্পানির বিক্রয়কর্মী। তিনি জানালেন, গত কয়েক মাস ধরে তিনি ফল কিনছেন না।
“আগে অন্যান্য বাজার সদাইয়ের পাশাপাশি কিছু দেশি-বিদেশি ফল কেনা হত। বাসায় স্কুল পড়ুয়া দুটো বাচ্চা আছে, ওরা ফল খেতে পছন্দ করে। ওদের জন্য হলেও নিয়ম করে কিছু ফল কিনতাম, কিন্তু এখন তো চাল-ডাল, মাছ-ডিম কেনাই কঠিন হয়ে গেছে। এত দাম দিয়ে আর ফল কেনা সম্ভব না।”
মে মাসের শেষ সপ্তাহে বিদেশি ফল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। তাতে ফলের ওপর সামগ্রিক আমদানি শুল্ক ৮৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক এক পরিপত্র জারির মাধ্যমে আমদানিতে কড়াকড়ি আরও বাড়িয়েছে। তখন থেকে ফল আমদানিতে আর ব্যাংক ঋণ মিলছে না। যারা আমদানি করছেন, তাদের আনতে হচ্ছে নগদে।
এ পরিস্থিতিতে সব বিদেশি ফলের দাম গতবছরের একই সময়ের তুলনায় কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।
বাজারে প্রতি কেজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়, গত বছর এ সময়ে আপেলের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।
চায়না আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে, এক বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার কমলার দাম ২৮০ টাকায় উঠেছে, অথচ গতবছরও ২০০ থেকে ২২০ টাকায় এই কমলা মিলত।
প্রতি কেজি আনার এখন ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যার দর ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা; মালটা কিনতে গুনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা, আগের বছর এই সময়ে দাম ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
নাশপাতি কিনতে লাগছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, আগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এক কেজি নাশপাতি কেনা যেত। নাগফলের দাম এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, গতবছর ২৫০ টাকা দিয়েও এক কেজি পাওয়া গেছে।
রামপুরা বাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বললেন, “এখন যেসব ফল বাজারে আছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই বিদেশি ফল, কিন্তু দাম বেশি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। যারা আগে নিয়মিত ফল কিনতেন, তাদের অনেকেই এখন আসেন না। যারা কিনছেন, পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।”
বাজারের এ পরিস্থিতে নিজের ব্যবসার পরিসরও কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন মোশাররফ। তিনি বলেছেন, অন্য বছর এই সময়ে দৈনিক ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি হত তার, এবার ১৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না।
“মানুষের পকেটে টাকা নাই। এসব ফল তো সবাই কেনে না, যারা একটু সচ্ছল, তারা কিনত, এখন ওইসব লোকেরাও ফল কেনা ছেড়ে দিয়েছে।”
স্বাভাবিকের চেয়ে ফলের দাম যে অনেকটা বেশি, সে কথা জানালেন পল্টনের ফল ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলমও।
তিনি বলেন, আগে যে কার্টন (১৮ কেজি) তিন হাজার টাকার মধ্যে কেনা যেত, এখন তা বেড়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সে কারণে খুচরা পর্যায়েও ফলের দাম বেড়েছে।
“আমাদের বিক্রিও কমে গেছে। আগের দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হত, এখন বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় নেমে গেছে।”
তবে দাম বেশি হওয়ার কারণেই যে ফল বিক্রি কমে গেছে, তা মানতে নারাজ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন “আসলে মানুষের হাতে টাকা নাই, কিনছে কম। যাদের আয় ভাল, তারাই ফল খায়।”
গত কয়েক দিনে ফলের দাম কিছুটা কমেছে বলে দাবি করলেন ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “কয়েক মাস ব্যাংকের এলসি বন্ধ ছিল, এখন কিছু ব্যাংক চালু করেছে। মাল আসতেছে, যে কারণে ফলের দাম কমছে।”
তবে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বৃদ্ধি এবং ঋণ সুবিধা বন্ধ থাকায় ফল আমদানি ৫০ শতাংশ কমে গেছে বলে এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য।
এ অবস্থায় দেশে ফলের চাহিদাও কমে গেছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “কয়েকটি ফল ছাড়া এখন সব ফলই আমদানি করা লাগে, কিন্তু মানুষের তো ক্রয়ক্ষমতা থাকতে হবে।”
আরও পড়ুন:
ফল গাড়িসহ বিলাস পণ্য আমদানিতে ঋণ নয়