আমদানি কমায় বেড়েছে বিদেশি ফলের দাম

বিদেশ থেকে ফল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা সরবরাহের লাগাম টেনে ধরায় দেশের বাজারে বিদেশি ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2022, 05:11 PM
Updated : 22 May 2022, 05:33 AM

শুক্রবার রাজধানীর একাধিক ফলের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আনার, আপেল, আঙ্গুর, কমলা, নাগফলসহ আমদানি করা বেশিরভাগ ফলের দাম কেজিতে ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

মিরপুর-১০ নম্বর চত্বরের ফল ব্যবসায়ী বকুল আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এক সপ্তাহ ধরে বিদেশি ফলের দাম চড়া। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান লাল আঙ্গুর ও ড্রাগল ফলের দাম সবচেয়ে বেড়েছে।

তিনি বলেন, “আস্ট্রেলিয়ান আঙ্গুর এবং ড্রাগন ফলের মৌসুম শেষ হয়ে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ান আঙ্গুরের কেজি ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

“এছাড়া পাকিস্তানের এলাচি আঙ্গুর আড়াইশ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা হয়েছে। ড্রাগন ফল আগে ৩০০ টাকার মধ্যে ছিল; এখন সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় উঠেছে।”

ফাইল ছবি

মেরিন্ডা কমলার দাম কেজিতে ৩০ টাকা করে বেড়েছে। আগে এটা প্রতিকেজি ৩২০ টাকা বিক্রি হতো, এখন ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাউথ আফ্রিকার গ্রিন আপেল ২০০ থেকে বেড়ে ২২০ টাকা হয়েছে।

আনারের দাম বেড়ে আগে যেটা ২৮০ টাকা ছিল এখন সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিশরের মাল্টা (মিষ্টি) কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২০০, তবে চায়না (টক-মিষ্টি) আগের দাম ১৬০ টাকাতেই আছে।

আরেক ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বলেন, “এখন আমদানি করা অনেক ফলেরই সৌসুম শেষের দিকে। সে কারণেও দাম কিছুটা বেশি। আনার ভারত থেকে আসে। মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।”

এখন প্রতিকেজি আনার (ডালিম) বড় আকারেরগুলো কেজি ৫০০ টাকা আর ছোট আকারেরগুলো কেজি ৪০০ টাকা। নাগফল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩০০ টাকায়।

বাংলাদেশ ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফলফলাদি আমদানি আমরা কমিয়ে দিয়েছি। এখন দেশে ফলের সৌসুম।

“অন্যদিকে ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আমদানিকারকরা গত দেড় মাস ধরে প্রতিটি শিপমেন্টে (কনটেইনারে) চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে লোকসান দিচ্ছে।”

ফাইল ছবি

এসব কারণে গত দেড়মাস ধরে এলসি বন্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, “তবুও দুএকজন টুকটাক যেসব এলসি করত, পরিস্থিতির কারণে সেটাও বন্ধ আছে। আগেই যেগুলো আমদানি করা হয়েছে সেগুলো বন্দর থেকে রিলিজ করে বিক্রি করতে গিয়ে অনেক টাকা লোকসান হচ্ছে।”

ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শুল্ক বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা প্রতিদিন অনেক টাকা লোকসান দিচ্ছি। আমরা বুঝতে পারছি না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামবে।

“সে কারণে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ রাখছি। এখন যেসব ফল সাপ্লাই লাইনে আছে এগুলো বিক্রি করতে থাকি। তারপর দেখা যাক কি হয় না হয়।”

তিনি বলেন, “ব্যাংক থেকে মার্জিন দিয়ে এলসি করা হচ্ছে। কিন্তু মাল রিলিজ করছি বর্তমান ডলারের মূল্যে। ডলারের দাম ৯৬ থেকে ৯৮ টাকায় আমদানি বিল নিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

“অথচ যখন এলসি খুলি তখন ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে। ডলারের ভ্যালু বাড়ার কারণে বন্দরে কাস্টমস অ্যাসেসমেন্ট হয় বর্ধিত দামে।”

ফাইল ছবি

একমাসে তিনবার ডলারের দাম বেড়েছে জানিয়ে সিরাজুল বলেন, “একেক কনটেইনারে ৪ থেকে ৫ লাখ করে লোকসান দিচ্ছি। কিন্তু কাঁচামাল হওয়ার কারণে সেই অনুযায়ী হঠাৎ করে দামও বাড়ানো যাচ্ছে না।”

বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রীষ্ম মৌসুমের পর্যাপ্ত ফল বাজারে থাকায় এলসি বন্ধ করলেও ফলের চাহিদা পূরণে কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, “এখন আম, লিচুর ভরা মৌসুম। এসব ফলই বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের ফল দিয়েই মানুষের চাহিদা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। তাই ফল আমদানি বন্ধ থাকলেও সেটা বাজারে ওভাবে প্রভাব ফেলছে না।

আমদানি বন্ধ রাখার কারণে বাজারে ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে স্বীকার করলেও বিদেশ থেকে ফল কেনার যে খরচ পড়ছে তাতে বাজারে সেসব চালানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসা লিচু সাজিয়ে রাখছেন পুরানা পল্টনের এক ফলের দোকানি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“প্রতিবছর আম, লিচু বিক্রি হলেও বিদেশি ফলও কিছু কিছু বিক্রি হতো। এখন যেভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, বাজারে সেই দামে ফল বিক্রি করা যাচ্ছে না। প্রতিটি চালানেই আমাদের লোকসান হচ্ছে।

“আপেল, মাল্টা, আঙ্গুর এগুলোর দাম কিছুটা হয়তো বেড়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও আমাদের লোকসান হচ্ছে। তাই আমরা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছি।”

তিনি জানান, বর্তমানে পাইকারি বাজারে সবুজ আপেল প্রতিকেজি ১৫৫ টাকা, মাল্টা ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান আঙ্গুরের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে।

আগামী দুই থেকে তিন মাস দেশি ফল দিয়ে চলতে হবে বলে জানান ফল ব্যবসায়ীদের এই নেতা।