জুলাই-অগাস্ট: বাণিজ্য ঘাটতি ৬% বেড়ে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে সহসা সুখবরের আশা দেখছেন না অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2022, 06:13 AM
Updated : 3 Oct 2022, 06:13 AM

সরকারের নানামুখী চেষ্টায় আমদানি কিছুটা কমানো গেলেও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে আমদানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

কিন্তু তারপরও রপ্তানি আয়ের চেয়ে এই সময়ে ৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ হয়েছে আমদানির পেছনে। ঘাটতির এই অংক আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচকে শিগগিরই কোনো সুখবর মিলবে বলে আশা করছেন না বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানামুখী উদ্যোগে আমদানি চাপ কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি সে তুলনায় যথেষ্ট নয়।

“ইউক্রেইনের ওপর রাশিয়ার হামলার প্রভাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ হারের মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সেখানকার মানুষ খরচ কমিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি সেভাবে বাড়ছে না। ১৩ মাস পর তো অনেক কমে গেল।”

এ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের পুরোটা সময় বাণিজ্য ঘাটতির এই ধারাবাহিতা দেখতে হবে বলে মনে করছেন আহসান এইচ মনসুর। 

  • ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের ওই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের এ দুই মাসে ১০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

  • এ অর্থবছর জুলাই-আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের ওই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ দুই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছিল ৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

  • এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি থাকছে ৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।

  • জুলাই মাসে ২ বিলিয়নের সামান্য উপরে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি আগস্ট শেষে দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে।

  • বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ করেছিল ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে। তাতে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে গত অর্থবছরের শেষে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করার পাশপাশি ৩০ মিলিয়ন ডলার সম পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করে সরকার।

পাশাপাশি বিলাসী পণ্যর বিপরীতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত এলসি মার্জিন ও কিছু পণ্য আমদানিতে ঋণ সুবিধা বাতিল করা হয় সে সময়।

তাতে কিছুটা সুফল দেখা গেছেছ, নতুন এলসি খোলার পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। একইভাবে কমে এসেছে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণও। কিন্তু তারপরও বাণিজ্য ঘাটতির চিত্রে খুব বেশি হেরফের দেখা যাচ্ছে না।

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয়ে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও তা ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট না হওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (বালেন্স অব পেমেন্ট) ঘাটতি বাড়ছে।

আগস্ট শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।

চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকা মানে হল সরকারকে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনায় ঋণ করতে হবে। আর উদ্ধৃত থাকলে ধার করার প্রয়োজন হয় না।

বাণিজ্য ঘাটতির চাপ সামলাতে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিতে প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে একদিকে বিনিময় হারে ডলারের বিপরীতে সস্তা হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা টাকা। আর কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তা কমে ৩৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন

Also Read: সেপ্টেম্বরে রপ্তানিতে পিছুটান, প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬.২৫%

Also Read: রেমিটেন্স ৭ মাসে সর্বনিম্ন

Also Read: ২০২১-২২ অর্থবছর: ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি