সুদহারে বারবার পরিবর্তন ও ডলারের দামের ওঠানামায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে তুলে ধরলে এমন আশ্বাস দেন গভর্নর।
Published : 16 May 2024, 11:55 PM
ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হলেও তা ১৪ শতাংশের বেশি হবে না; ডলারও ১১৭ টাকায় পাওয়া যাবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যবসায়ী নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য শোনার পর গভর্নরের কাছ থেকে এমন আশ্বাস এসেছে।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের একথা বলেন।
সুদহারে বারবার পরিবর্তন এবং ডলারের দামে ওঠানামার কারণে ব্যবসার নীতি নির্ধারণ ব্যাহত হচ্ছে; অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে, অনেকে ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছেন বলে গভর্নরকে অবহিত করার কথা তুলে ধরেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঋণের উচ্চ সুদহার এবং ডলার সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে কোনো কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং ঋণখেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।
এসব বিষয় বৈঠকে গভর্নরের কাছ তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ডলার রেট ১১৭ টাকায় রাখার দাবি জানানো হয়। গভর্নর বলেছেন, ডলারের দাম ১১৭ টাকার সর্বোচ্চ ১ টাকা কম বা বেশি করতে পারবে ব্যাংক।”
এছাড়া ব্যাংকের সুদের হার ১৪ শতাংশের বেশি যেন না হয় সে বিষয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
তবে বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেননি বাংলাদশে ব্যাংকের মুখপাত্র।
ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দলে এফবিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে অন্যান্য চেম্বার, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী নেতা এবং দুটি বড় শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চার ডেপুটি গভর্নর অংশ নেন।
বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই সভাপতি বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তার লিখিত বক্তব্যের কপি সাংবাদিকদের দেওয়া হয়।
মাহবুবুল আলম তার বক্তব্যে ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা থেকে ১১০-১১৭ টাকা হওয়ায় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তুলে ধরেন। চলমান তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “শিল্পের উপকরণ, কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে জ্বালানি খরচ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে গেছে। ফলে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেও আমাদের শিল্প ও রপ্তানি খাতকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।”
এছাড়া কোভিডের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফলশ্রুতিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, অভ্যন্তরীণ মূদ্রাস্ফীতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তার দাবি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ”বিলম্বিত ঋণের বিপরীতে আমদানি করা কাঁচামালের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় সংক্রান্ত হিসাব পূর্বেই সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদনকারীগণের পক্ষে বর্তমানে ডলারের অতিরিক্ত বিনিময় মূল্য সমন্বয়ের কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে উৎপাদনকারীগণের জন্য অতিরিক্ত বিনিময় মূল্য সম্পূর্ণ লোকসানে পরিণত হয়।“
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, সামগ্রিক ব্যাংক খাত একটু বিপদে আছে। সুদহার, বিনিময় হার, বিনিময় হারের কারণে লোকসান নিয়ে গর্ভনরের সঙ্গে কথা হয়েছে।
”ডলার রেট অফিসিয়ালি ১১০ টাকা হলেও আনঅফিসিয়ালি আরও বেশি ছিল। আমরা বলেছি সুদহার যেন আর না বাড়ে। সুদ বাড়লে খেলাপি ঋণ বাড়বে। একক গ্রহীতার ঋণসীমা না বাড়লেও খেলাপি ঋণ বাড়বে। কারণ এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা যুক্ত।”
বিনিময় হারের কারণে বড় শিল্প মালিকের বিপুল লোকসান হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এটা থেকে বের হওয়ার জন্য একটি রোডম্যাপ যেন থাকে, আমরা সেটাই বলেছি। বিনিময় হার জনিত ক্ষতির অর্থ যাতে আলাদা করে দীর্ঘমেয়াদী একটা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া যায়, সেটাই তারা চিন্তাভাবনা করছেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।
”আর সুদহার যে ১৪ শতাংশের উপরে না যায়, সেটাও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারি করবে।”
বিজিএমইএর সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে বহু উদ্যোক্তা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে না বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সার্কুলার স্থগিত করার অনুরোধ করা হয়েছে।
বৈঠকে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী, সহসভাপতি মো. মুনির হোসেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি এমএম মান্নান কচি, বিটিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. হাসান, প্রাণ আএফএল গ্রুপের সিইও আহসান খান চৌধুরী অংশ নেন।