উৎপাদন থেকে ভোক্তার পর্যায় পর্যন্ত সরবরাহ ব্যবস্থা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা থাকা দরকার, বলেন তিনি।
Published : 28 Nov 2023, 06:33 PM
শস্যের মাঠ থেকে শুরু করে ভোক্তার খাবার টেবিল পর্যন্ত আসতে প্রতিটি পর্যায়েই খাবার দূষিত বা অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে মন্তব্য করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, যে কারণে সব স্তরের মানুষের সচেতনতা ছাড়া শুধু অভিযান বা শাস্তি দিয়ে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
মঙ্গলবার ঢাকার ফার্মগেইটে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত নিরাপদ খাবার বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘সরকারি আইন ও প্রবিধান অনুযায়ী নিরাপদ খাদ্যের মান নিশ্চিত, প্রাপ্যতা ও ভোক্তা অধিকার’ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজনে ক্যাব ছাড়াও ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি)। আর্থিক সহায়তায় ছিল ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে ও বিএমজেড।
সেমিনারে ভোক্তা অধিকার, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে পৃথক উপস্থাপনা দেওয়া হয়।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার জন্য কেবল দোকানি বা খামারির ওপর নির্ভর করলে চলবে না। কারণ এর বাইরেও অনেক পক্ষ আছে যেখানে খাদ্যের মান খারাপ হতে পারে। সেটা ভোক্তার কাছে এসেও হতে পারে। সে কারণে খাদ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা থাকা দরকার।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, পরিবহন ব্যবস্থায় যে ‘কোল্ড চেইন’ নিশ্চিত করার কথা সেটাও আমরা পারছি না। সেখানেও খাবারের মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় যেই পানি ব্যবহার করছি সেটাও হয়তো বিশুদ্ধ নয়। সে কারণে অর্গানিক খাবারও তার মান ধরে রাখতে পারছে না।
“প্যাকেজিং পর্যায়েও খারাপ মানের খাবার তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আছে। বিএসটিআইয়ের লোগো নকল হচ্ছে, পরিচিত কোম্পানির লোগো ব্যবহার করে সেটা বাজারজাত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যখন কোনো জিনিস বিদেশে রপ্তানি করছি তখন এক ধরনের স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করছি। আবার যখন সেই পণ্য দেশে বাজারজাত করছি তখন মনে করছি হয়তো স্ট্যান্ডার্ড শিথিল করা যেতে পারে। এখানে আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার।
“এসব কিছু নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার। কৃষকের খামার থেকে ভোক্তার খাবারের টেবিলে আসা পর্যন্ত যে লাইন আছে এর যে কোনো জায়গায় খাবার দূষিত হতে পারে।”
খাদ্যের মান নিশ্চিত করতে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যেও একটা সমন্বয় থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বাজারে বিভিন্ন অনিয়ম এবং ব্যবসায়ীদের দায়িত্বহীনতার কথা তুলে ধরে সফিকুজ্জামান বলেন, কী দুঃখজনক ব্যাপার, গুঁড়ো দুধের মতো শিশুখাদ্য আমদানির পর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই দুধকে আমার ক্র্যাস করে পাউডার করে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। প্রতিটি ব্যবসায়ী ও জনগণ যতক্ষণ সচেতন না হবেন, ততদিন এসব অভিযান কিংবা শাস্তি দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় শতভাগ অর্গানিক ফুডের প্রাপ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, অবশ্যই অর্গানিক ফুড দরকার। কিন্তু আমরা যদি শ্রীলংকার সর্বশেষ পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করি তারা আইন করে কেমিক্যাল ফার্টিলাইজার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কিছুদিন আগে তাদের যেই অর্থনৈতিক সংকটটা দেখা দিল এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত।
“বাংলাদেশে চার কোটি টন খাদ্য শস্য উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু অর্গানিকভাবে এত পরিমাণ খাবার উৎপাদন করতে পারব না। সেজন্য উৎপাদন চেইনে একটা ব্যালেন্স করতে হবে। অর্গানিক ফুডের উৎপাদন খরচ দেড় থেকে দুইগুণ বেশি। উৎপাদনের হারও কম।”
সভাপতির বক্তব্যে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একটা সময় খাদ্য সংকটের কারণে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এখন খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে তবে তা নিরাপদ নয়।
ভেজালমুক্ত খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।