“আজ দেখি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে; কিনিনি; খেলাম না বেগুন।"
Published : 28 Feb 2025, 10:10 PM
রোজার আগ মুহূর্তে এসে বাজারে বেড়ে গেছে শসা, বেগুন আর লেবুর দাম; গরম হয়ে উঠেছে মাছ-মাংসের বাজারও; স্বস্তি বলতে এখনো ‘স্থিতিশীল’ আছে খেজুর ও চিনি-ছোলার বাজার।
শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী ও নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দ্রব্যমূল্যের এমন চিত্র পাওয়া যায়।
ইফতারে বেশ চাহিদা থাকে শসার; বেড়ে যায় লেবুর ব্যবহারও। বরাবরের মত রোজার আগে এসে পণ্য দুটির দাম আরও বেড়ে গেছে।
গেলে সপ্তাহেও বাজারে শসা বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। তবে শুক্রবার নিকেতন কাঁচাবাজারে আকৃতিভেদে দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ক্ষিরার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।
নিকেতন কাঁচাবাজারে শসা কিনছিলেন রাশেদুল ইসলাম। ‘সাততলা এলাকার’ বাসিন্দা বেসরকারি এই চাকুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাঝারি সাইজের দুই কেজি শসা কিনলাম ৭০ টাকা করে কেজি। গেল সপ্তাহে কিনলাম ৫০ টাকা করে। “এই দেশের ব্যবসায়ীরা কিছুর চাহিদা বাড়লেই দাম বাড়ায়।”
বাজারে গেল সপ্তাহে মাঝারি সাইজের লেবুর হালি ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু শুক্রবার উঠে যায় ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। আর আকার বড় হলে দাম উঠে যাচ্ছে ১০০ টাকায়।
লেবু ও শসার দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নিকেতন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা শাহআলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজা এলে এই দুই জিনিসের চাহিদা বাড়ে কয়েক গুণ।
“কিন্তু লেবুর ভরা মৌসুম ফুরিয়ে গেছে। আর বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর ফলনও কম। সব মিলিয়ে দাম বেড়েছে।"
এই বাজারের আরেক সবজি বিক্রেতা শাহানাজ বেগম বলেন, “রোজা শুরুর কয়েকটা দিন প্রত্যেক বছরই লেবু আর শসার দাম বাড়তি থাকে। এ বছর অন্যবারের তুলনায় শসার দাম খুব একটা বাড়েনি। কয়েক দিন গেলে ধীরে ধীরে দাম কমে আসবে আশা করি।”
এদিকে বাজারে লম্বা ও গোল, দুই জাতের বেগুনের দামই বেড়েছে। মানভেদে প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গেল সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে দাম শুনে ‘বিরক্ত হয়ে’ ফিরে যাচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন নামের একজন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেগুন এমনি কিনি গোলটা; ভেজে খাওয়ার জন্য। রোজায় দুটোই কিনি। আজ এসে দেখি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। তাই কিনিনি, খেলাম না বেগুন।"
বোতলের তেলের সংকট কাটেনি
প্রায় মাসখানেক ধরেই সংকটে থাকা বোতলজাত সয়াবিন তেলের চাহিদা রোজার আগে আরও বেড়েছে। যেহেতু ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়ার অভ্যেস অনেকেরই। কিন্তু, বাজারে বোতলের সয়াবিনের সংকট কাটেনি।
গেল ১২ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আশ্বাস দিয়েছিলেন, পরবর্তী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হবে।
এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একই আশ্বাস দিয়েছিল ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
তবে, বাজারে সেই আশ্বাসের প্রতিফলন মেলেনি। ক্রেতারা যেমন তেল না পেয়ে বিরক্ত, তেমনি বিক্রেতারাও নাকাল হচ্ছেন ক্রেতাদের কথার বাণে।
নিকেতন কাঁচাবাজারের ‘রিপা জেনারেল স্টোর'-এর বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, “সয়াবিনের বোতল আমি পাইনি। পেলেও অন্য পণ্য কেনা লাগে। দুই-আড়াই মাস ধরেই এই অবস্থা। মাঝে কিছুটা সরবরাহ থাকলেও এখনও ঝামেলা। ক্রেতারা তেল না পেয়ে গালিগালাজ করে।"
এই বাজারে তেল না পেয়ে সিটি গ্রুপের বোতলজাত পাম ওয়েল ‘ন্যাচারাল' কিনলেন রহিম শেখ নামে একজন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেলের বাজার নিয়ে এত দীর্ঘ সংকট আগে তো দেখিনি। মাঝেমধ্যে পেলেও দাম বাড়তি। পাম ওয়েল কিনলাম হাফ লিটারের বোতল ৯০ টাকায়। গায়ের দাম ৮০ টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম ১৫৭ টাকা লিটার।”
একই রকম অভিযোগ আশিকুর রহমানে নামের এক ক্রেতার।
“বেশ কয়েক দোকান ঘুরে ৫ লিটারের তেলের বোতল পেলাম। ৮৫০ টাকা গায়ের মূল্য। দোকানি চাইছেন ১ হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে কিনলাম; তেল ছাড়া তো আর রান্না হবে না।”
মাছ-মাংসের বাজারও গরম
সপ্তাহ দুয়েক আগে শবে বরাতের সময় মাংসের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। দুদিন পরেই আবার কমে যায়। রোজা ‘উপলক্ষে’ ফের মাংসের দাম বেড়েছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২৩০ টাকা কেজিতে; আর সোনালি জাতে পড়ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা।
দুদিন আগেও বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি ছিল ৩৩০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, আর দেশি মুরগি ৫৬০ টাকা করে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর, বাজারে গরুর মাংসের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কিছু-কিছু মাছের দামও কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে।
নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের হলে দেড় হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের হলে দুই হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে।
রুই মাছের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে আকৃতিভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭৮০ থেকে ১২০০ টাকা, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ স্থিতিশীল
বাজারে স্বস্তির খবর হচ্ছে, এ বছর রোজার অন্যতম পণ্য ছোলা, খেজুর, বেসনের দাম অন্যান্যবারের মত বাড়েনি, স্থিতিশীলই বলা চলে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ সংকট নেই; তাই দাম বাড়েনি।
বাজারে মানভেদে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা, ভুট্টার বেসন ১৪০ টাকা ও অ্যাংকরের বেসন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। আর চিনির কেজি ১২৫-১৩০ টাকা।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘মাসুমা জেনারেল স্টোরের' বিক্রেতা আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে এসব পণ্যের সংকট নেই। এজন্য অন্যান্যবারের মত দাম বাড়েনি। তেল ছাড়া অন্যান্য মুদি মালামালের সরবরাহ স্বাভাবিক।”