ব্যাংকটির পর্ষদ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর চট্টগ্রামের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে, যার মধ্যে তার গ্রামের বাড়ি পটিয়ার জনবলই প্রায় দুই হাজারের মত বলে খবরে এসেছে।
Published : 01 Nov 2024, 02:08 AM
পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ বদল হওয়ার পর বেসরকারি শরিয়াহভিত্তিক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) থেকে একদিনেই ৫৮০ জন কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে; যাদের মধ্যে ডিএমডি থেকে বিভিন্ন পদের কর্মী রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার তাদের নিয়োগ বাতিল করে প্রত্যেককে পৃথক চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটি; ক্ষমতার পালাবদলের পর যেটির পর্ষদ এস আলম মুক্ত হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে এসব ব্যক্তিকে পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন ব্যাংকটির পর্ষদ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
নিয়োগ বাতিল হওয়া এসব কর্মকর্তারা ব্যাংকে প্রবেশনারি (শিক্ষানবীশ) মেয়াদের মধ্যে কাজ করছিলেন। আগামী রোববার থেকে তাদের নিয়োগ বাতিল হবে বলে চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসআইবিএলের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান তানিয়া তসনিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ব্যবস্থাপনা বিভাগ যাচাই বাছাই শেষে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
এবার এস আলমের দখলমুক্ত এসআইবিএল
শীর্ষস্থানীয় আরেক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষানবীশ সময়ের মধ্যে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই নিয়োগ দেওয়াদের বাদ দেওয়ার ক্ষমতা আছে ব্যাংকের। নিয়োগপত্রে তা উল্লেখও করা আছে। তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংক সেই নিয়মকেই কাজে লাগিয়েছে।
তিনিও বলেন, “এসব ব্যক্তিদের কোনো নিয়োগ বিজ্ঞাপন ছাড়াই শুধু চিঠি দিয়ে বা দরখাস্তকারীদের বায়োডাটা জমা নিয়েই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’’
ব্যাংকটির মোট চার হাজার জনবলের মধ্যে ২০১৭ সালে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে পর্ষদ যাওয়ার পর চট্টগ্রামকেন্দ্রীক ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে, যার মধ্যে সাইফুল আলমের (এস আলমের) গ্রামের বাড়ি পটিয়ার জনবলই প্রায় দুই হাজারের মত বলে খবরে এসেছে।
গণছাঁটাইয়ের বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাদিকুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফোরকান উল্লাহ এর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ফোন ও এসএমএস করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৫ অগাস্ট ব্যাংকটিতে সাদিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তালিকা চূড়ান্ত করে নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশাল এই অতিরিক্ত কর্মী পুষতে গিয়ে সবশেষ প্রান্তিকে ব্যাংকটির বেতন ভাতা বাবদ খরচ বেড়ে গিয়েছে। এতে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণও বেড়েছে বলে মনে করছে নতুন পর্ষদ। এর ফলে ৯ মাসের হিসাবে আগের বছরের চেয়ে ছয়গুণ মুনাফাও কমেছে।
ব্যাংকটির আর্থিক তথ্য অনুযায়ী, গত প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টম্বরে) বেতন ভাতায় খরচ হয় ১৪১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের ৯ মাসে তা দাঁড়ায় ৩৮৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের বছরের ৯ মাসে ব্যাংকটির এ খাতে ব্যয় ছিল ৩৪৫ কোটি টাকা।
পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ খাত হচ্ছে মানবসম্পদ বিভাগে। বিশাল এই পরিমাণের কর্মী ছাঁটাই করলে বছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যাংকের পরিচালন খরচ কমে আসবে বলে মনে করছে নতুন পর্ষদ।
আরও পড়ুন: