কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির অনুমোদনের পর ৫ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের মাধ্যমে প্রায় হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে নগদ টাকার টানাটানিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে।
Published : 02 Oct 2024, 11:06 PM
তারল্য সংকটে ধুঁকতে থাকা চারটি ব্যাংক অবশেষে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার ঋণ পাচ্ছে; তবে এজন্য তাদের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ বা মুনাফা গুনতে হবে।
বেশ কিছু দিন থেকে গ্রাহকদের নগদ অর্থ দিতে না পারা এই চারটি ব্যাংককে প্রথম পর্যায়ে টাকা ধার দিচ্ছে পাঁচটি ব্যাংক।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই ঋণের ‘গ্যারান্টি’ মেলার পর ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা লেনদেনের বিষয়টি আরেকধাপ এগিয়ে নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা শিখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি অনুমোদনের তথ্য দিয়েছেন।
টাকা নেওয়া ব্যাংকগুলো হল-ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।
কয়েক ধাপে এসব ব্যাংককে টাকা ধার দিচ্ছে দ্যা সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক।
দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে প্রায় এক ডজন ব্যাংক। সরকার পতনের পর নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর এগুলোর সংকট কাটাতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি সাক্ষেপে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ভালো ১০টি ব্যাংক ঋণ দিতে রাজি হয়। সম্প্রতি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে এসব ব্যাংকের এমডি তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন।
এর অংশ হিসেবে বুধবার পাঁচটি সবল ব্যাংক দুর্বল চার ব্যাংককে ৯৪৫ কোটি কোটি টাকার ঋণ তথা তারল্য সরবরাহ করতে সম্মত হয়, যার বিপরীতে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি মিলেছে।
এরমধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকার গ্যারান্টি ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকটি ৩৭৫ কোটি টাকা পাবে তিনটি ব্যাংক থেকে। সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ বা মুনাফায় বেসরকারি দ্যা সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি এবং একই সুদহারে ৫০ কোটি টাকা দেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। আর ১৩ শতাংশ সুদে ৫০ কোটি টাকা দেবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
ন্যাশনাল ব্যাংককে দুই হাজার কোটি টাকার গ্যারান্টি দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকটির সীমা ৫০০ কোটি টাকা।
এরমধ্যে বুধবার ব্যাংকটি গ্যারান্টির আওতায় ২৭০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার অনুমোদন পায়। ব্যাংকটিকে সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে ২০০ টাকা দেবে দ্যা সিটি ব্যাংক, ১৩ শতাংশ সুদে ৫০ মিউচুয়াল ট্রাস্ট এবং একই সুদে ২০ কোটি টাকা দিচ্ছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকার গ্যারান্টি পেয়েছে। প্রথম পর্যায় ব্যাংকটির জন্য সীমা নির্ধারণ করা হয় ৫০০ কোটি টাকা। এদিন সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তার গ্যারান্টি পায়। ইসলামী ধারার ব্যাংকটিকে ১৩ শতাংশ মুনাফায় সিটি ব্যাংক ৫০ কোটি ও সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে ৩০০ কোটি টাকা দিচ্ছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
অপরদিকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পাচ্ছে ২৫ কোটি টাকা। এই ঋণের পুরোটাই দিচ্ছে ইস্টার্ন ব্যাংক, যার সুদ সাড়ে ১৩ শতাংশ। যদিও ব্যাংকটির গ্যারান্টি সীমা ৫০০ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে নিতে পারবে ১৫০ কোটি টাকা।
সবগুলো ব্যাংক থেকে গ্যারান্টির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ফি নেবে।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, ‘কর্জ বা প্লেসমেন্ট’ হিসেবে দুর্বল ব্যাংককে নির্ধারিত মেয়াদে বিশেষ ধার দেবে ভালো ব্যাংক।
সবল ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের এই টাকা দুর্বল ব্যাংকগুলো দিতে ব্যর্থ হলে, সেই টাকা মেয়াদোর্ত্তীণের ৩ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত দেবে।
ইতোমধ্যে সংকটে থাকা এই চারটিসহ সাতটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি চেয়ে আবেদন করেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাত হাজার ৯০০ কোটি টাকা ধার চেয়ে আবেদন করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এরপর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পাঁচ হাজার কোটি করে, এক্সিম চার হাজার কোটি, গ্লোবাল ইসলামী তিন হাজার ৫০০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী দুই হাজার কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক দেড় হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তার গ্যারান্টি চেয়েছে।
তারল্য সংকট: ফার্স্ট সিকিউরিটিকে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সিটি ব্যাংক