নগরীর অন্যতম প্রধান এই বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরেই সবজির দাম দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি।
Published : 31 May 2024, 09:19 PM
রাজধানীর একেক এলাকার ক্রেতারা সবজি কিনেন একেক দামে। যারা কারওয়ানবাজারে কেনাকাটা করেন, তারা নিজেদের ‘ভাগ্যবান’ ভাবতে পারেন। কারণ, তারা অন্যান্য বাজারের তুলনায় অর্ধেক বা তার চেয়েও দামেও কিনতে পারেন।
শুক্রবার কারওয়ানবাজারে পটল বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি করে। কেরানীগঞ্জের শাহীনুর হক কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া বাজার থেকে একই পণ্য কিনেছেন ৮০ টাকা কেজি দরে।
কারওয়ানবাজারের দাম শাহীনুরকে জানালে তিনি অবিশ্বাস ভরা কণ্ঠে বলেন, “কী বলেন!”
মগবাজারের মীরবাগ এলাকায় ফারুক হোসেনও এদিন পটল কিনেছেন ৮০ টাকা কেজি দরে। অথচ কারওয়ানবাজার থেকে তার বাড়ি দুই কিলোমিটারও হবে না।
কারওয়ান বাজার ছাড়াও মহাখালী কাঁচা বাজার ও তেঁজকুনিপাড়া বাজার ঘুরে দামের এই ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় কারওয়ান বাজারে সবজির দাম খুব বেশি বাড়েনি, তবে পাড়া মহল্লার বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। বিক্রেতারা অজুহাত দিয়েছেন গত সপ্তাহে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালকে।
গত রোববার রাতে প্রবল ঘুর্ণিঝড় রেমাল পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও পশ্চিম বঙ্গের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূলে আঘাত হানে। এই ঝড়ের প্রভাব ছিল ৩৬ ঘণ্টারও বেশি। ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেড়ে বাতাস, সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।
শুক্রবার কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “গতকাল দাম বেশি আছিল। আজকে একটু কম। ঘূর্ণিঝড়ের লাইগ্যা ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হইছে। ফসল নষ্ট হইছে, বাজারে মালের আমদানিও কম।”
এই বাজারে খুচরায় করলা, বেগুন, কাঁচা পেঁপে, দেশি শশা ৪০ টাকা কেজি দরে, চিচিঙ্গা,পটল, হাইব্রিড শশা ৩০ টাকা ও বরবটি ৫০ টাকায় বেচতে দেখা গেছে।
বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি ২৫ টাকা, মাঝারি আকারের লাউ ৩০ টাকায় বেচতে দেখা গেছে, যে দর নগরীর অন্য বাজারের ক্রেতারা ভাবতেও পারছেন না।
কারওয়ান বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম অনেকটা বেড়েছে টমেটোর। গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৩০ টাকা বেড়ে এখন দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, “উত্তরবঙ্গের ক্ষেতের টমেটো কইম্যা গেছে। এখন কোল্ড স্টোরেজের টমেটো বেশি। হের লাইগ্যাই দাম বেশি।”
এক কেজি পটল ও আধা কেজি কচুর লতি কিনেছেন কল্যাণী আক্তার। তিনি থাকেন ফার্মগেটে। বললেন, “ফার্মগেটে বরবটি কিনতে গিয়ে দেখি ১০০ টাকা। মহল্লার দোকানগুলোয় এমনকি ভ্যানের সবজিরও দাম অনেক বেশি। তাই দুইদিন পর পর একটু কষ্ট হলেও কারওয়ান বাজার এসে বাজার করি।”
মহাখালী বাজারের কী চিত্র
কারওয়ান বাজারে খুচরায় যে পটল ও লাউ ৩০ টাকায় পাওয়া গেছে, সেই দুটি সবজি মহাখালী কাঁচা বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেল ৬০ টাকা দরে।
কারওয়ানবাজারের ৪০ টাকা দরের বেগুন ও করলার দামও এই বাজারে দ্বিগুণ, মানে ৮০ টাকা। ফুলকপি ও পাতাকপির দামও একইভাবে দ্বিগুণ রেখেছেন বিক্রেতারা। কাঁচা পেঁপে কেজিতে ৩০ টাকা বেশি রাখতে দেখা গেছে।
সবজি নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা নাজমুল হোসেন। কারওয়ানবাজারে খুচরাতেই এর অর্ধেক দর নিয়ে প্রশ্ন রাখার পর তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
বলেন, “আমি এসবের দাম জানি না। মহাজন জানে।”
মহাজন কোথায়?- এই প্রশ্নে বলেন, “মহাজন বাসায়।”
দুই বাজারে দামের এই পার্থক্য আবার আলু, পেঁয়াজ বা টমেটোর ক্ষেত্রে অতটা না।
কারওয়ানবাজারে এদিন আলুর দাম ছিল কেজিতে ৫০ টাকা, মহাখালী বাজারে তা ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা দরে, মহাখালীতে তা ৮০ টাকা। টমেটোর দামেও দুই বাজারের পার্থক্য ৫ থেকে ১০ টাকা।
বিক্রেতা সুমন মিয়া সবজিতে অতি মুনাফার বিষয়টি স্বীকারই করতে চান না। তিনি শসা বিক্রি করছিলেন ৮০ টাকা দরে, যা কারওয়ানবাজারের দ্বিগুণেরও বেশি।
তিনি বলেন, “রাইতে কিনছি ৬৫ টাকা কেজি। এহন কিছু লাভ তো করতেই অইব।”
কারওয়ানবাজারের তুলনায় কেজিতে ৫০ টাকা বেশি, ফুলকপি ও পাতাকপির দামও দ্বিগুণ- এই মন্তব্যের জবাবে সুমন বলেন, “সব মাল এক না। আমরা রাতে দেইখ্যা ভালোডি কিনছি। এইগুলার দাম বেশি। কারওয়ান বাজারে এহন যেইগুলা পাইবেন এইগুলা এত ভালো না।”
তবে সুমন মিয়ার এই বক্তব্যের আসলে কোনো ভিত্তি নেই। কারওয়ানবাজার ও মহাখালী বাজারে সবজির মানে পার্থক্য দেখা যায়নি।
ব্রয়লার মুরগির দামও মহাখালীতে কেজিতে ২৫ টাকা বেশি। এই বাজারের ক্রেতারা কিনেছেন ২২৫ টাকা দরে, কারওয়ান বাজারের ক্রেতারা তা কিনতে পেরেছেন ২০০ টাকায়।
কারওয়ানবাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা দরে। বিভিন্ন এলাকার বাজারে সেই দর ৩৮০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি।
মহাখালী বাজারের বিক্রেতা মো. মোহন মিয়া বলেন, “কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচামাল আনতেই আড়াইশ টাকা ভাড়া। মুরগি আনতে তো খরচ আরও বেশি। আর মুরগি মারাও যায়। তাই সব খরচ মিটিয়ে দাম একটু বেশি।”
কিন্তু এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়েও আছে প্রশ্ন। খুচরা বিক্রেতারা মুরগি নিয়ে আসে কাপ্তান বাজার থেকে। সব বাজারের বিক্রেতাদেরিই পরিবহন খরচ ও অন্যান্য ঝুঁকি সমান।
মরিচের দাম কমেছে
কারওয়ানবাজারে মরিচের দাম কমেছে কেজিতে অন্তত ৮০ টাকা। গত সপ্তাহে দাম উঠেছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ার পর তা কমতে শুরু করেছে।
তাড়াইল মরিচ ১০০, কারেন্ট ও ভারতীয় মরিচ ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে মরিচ বিক্রেতা শেখ কামাল বলেন, “কাইলক্যা বেচছি ২০০ টাকা বা তারও উপরে। আইজ ১০০ ও ১৪০ টাকা।”
আরেকজন মরিচ বিক্রেতা রাহিমা খাতুন বলেন, “ ইন্ডিয়ার মরিচ আইসা বাজার ঠান্ডা করছে। আবার আইজ বর্ডার সাপ্তাহিক বন্ধ, তাই কাইলক্যা দাম বাইড়া যাইব। এরপরে আবার কমব।”