“বেক্সিমকোর পুরো অ্যাসেট বিক্রি করার পরও ব্যাংকের ঋণ শোধ হবে কি না সন্দেহ। আমার ধারণা পাবে না,” বলেন তিনি।
Published : 13 Feb 2025, 12:09 AM
রোজার আগেই বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ২৭ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার বিকালে এ শিল্প পার্কের শিল্প-কারখানাগুলোর বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে গত ২৮ জুন ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির’ আগের বৈঠকে ফেব্রুয়ারি শেষে বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।
সেদিন সভায় নেওয়া পাঁচটি সিদ্ধান্তের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্তের কথাও বলেছিলেন তিনি।
দুই সপ্তাহ পর বুধবার এ কমিটির বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে আসেন শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন।
কমিটির প্রধান সাখাওয়াত হোসেন বেক্সিমকোর শিল্প কারখানার সংকটের বিষয়ে বলেন, “বেক্সিমকোর পুরো অ্যাসেট বিক্রি করার পরও ব্যাংকের ঋণ শোধ হবে কি না সন্দেহ। আমার ধারণা পাবে না। আমরা এই পরিস্থিতির মধ্যে আছি।“
বেক্সিমকোর যত দেনা-পাওনার বিষয়ে ভালো অগ্রগতি হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে যতটুকু টাকা দরকার, সেটার ব্যবস্থা হচ্ছে। যার যে পাওনা রয়েছে, সেটা তাদের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
“অর্থ বিভাগ থেকে এই পাওনা পরিশোধ করা হবে না কি শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে হবে, তা আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে। এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা যা কিছু করার শেষ করে আমাকে জানাবে মোট এত টাকা লাগবে এবং এত টাকা আছে।”
শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে সাখাওয়াত বলেন, “তারা এখনও বেক্সিমকোর শ্রমিক। আমি তো বলতে পারি না ১০০ জন এখানে যাও, ৫০০ জন ওখানে যাও। তবে তারা সবাই দক্ষ শ্রমিক। আমরা কোনোভাবেই এতগুলো লোককে বেকার থাকতে দিতে পারি না। এর একটা ব্যবস্থা হবে। চাকরি-বাকরি হারিয়ে বাড়ি পাঠানো এই সরকারের পলিসি না।”
এর আগে ২৮ জুন সবশেষ বৈঠকে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের লে-অফে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১২টি একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকের বন্ধকি শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সভার আগের সপ্তাহে এ কমিটির বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা বলেছিলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বেক্সিমকো শিল্প পার্কে মোট ৩২টি কারখানার মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই। ১২টি কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ লে-অফ করেছে, যা সরকারের সিদ্ধান্ত নয়।
সেখানে তিনটি কারখানা বর্তমানে চালু থাকার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, পার্কে অবস্থিত ৩২টি কারখানার বিপরীতে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকাসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ব্যাংক ঋণ বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকের পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে অস্থিরতা চলছে। শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের অধিকাংশ কারখানা।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে গ্রুপটির বেশির ভাগ উদ্যোক্তা আত্মগোপনে রয়েছেন।
অনেকগুলো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ থাকায় এলসি খুলতে পারছে না কোম্পানি। ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া বন্ধ হওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো।
'কিছু সংবাদে' বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়, সয়াবিন তেল প্রসঙ্গে বাণিজ্
বেক্সিমকোর ১২ কোম্পানি বন্ধের সিদ্ধান্ত, বন্ধকি শেয়ার বিক্রি হবে
'অস্তিত্বহীন' ১৬ কোম্পানির নামে বেক্সিমকোর ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ
সালমান পরিবারের ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক
'মানবিক কারণে' বেক্সিমকোতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান শ্রমিক-কর্মচারীরা
বেক্সিমকোর কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ-ভাঙচু
বেক্সিমকোর ১৬ কারখানা চালুর দাবিতে গাজীপুরে গণসমাবেশ
বেক্সিমকোর কারখানা খোলার দাবিতে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন