চারটি যাত্রীবাহী ও দুটি কার্গো উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায় এ মার্কিন কোম্পানি, যা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিমান।
Published : 22 May 2024, 09:51 AM
ইউরোপের কোম্পানি এয়ারবাসের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশের উড়োজাহাজ কেনার আলোচনার মধ্যে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং চায়, নতুন উড়োহাজার কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে তাদের প্রস্তাবেরও ‘যথাযথ’ মূল্যায়ন হোক।
ঢাকা সফররত বোয়িংয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, অন্য কোনো নির্মাতার চেয়ে তাদের উড়োজাহাজের দাম কম এবং পুরো প্রস্তাব আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী, যাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিমান লাভবান হবে।
চারটি যাত্রীবাহী এবং দুটি কার্গো উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানি, যা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিমান বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সফরে তারা সরকারের কাছ থেকে মূল্যায়নের আশ্বাস পাওয়ার দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার ঢাকায় একটি হোটেলে বোয়িং কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন কোম্পানির ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বিমানের সঙ্গে বোয়িংয়ের বর্তমান ও অতীত সম্পর্ক, কোম্পানির বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি এয়ারবাসের প্রস্তাবের বিষয়টিসহ দুই উড়োজাহাজ নির্মাতার তুলনামূলক আলোচনা, বোয়িংয়ের নিরাপত্তা বিষয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ, দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হলে খুচরা যন্ত্রাংশ পেতে অসুবিধা-শঙ্কা ও অর্থায়নসহ বিভিন্ন দিক উঠে আসে।
বোয়িংয়ের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান উয়্যার, ইউরেশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশ্বিন নাইডু এবং বোয়িংয়ের বিক্রয় পরিচালক কান্তি ভুবনাগিরি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বহরে নতুন সুপরিসর উড়োজাহাজ যোগ করার চেষ্টা কয়েক বছর ধরেই করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা দুই কোম্পানি তাদের আগ্রহ দেখিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ইউরোপভিত্তিক উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাসের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বোয়িংয়ের ঢাকা সফরকারী প্রতিনিধি দলটি সাংবাদিকদের সামনে আসে; নিজেরাই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এবং বিমানের জন্য তাদের প্রস্তাব কেন লাভজনক হবে সেসব দাবি তুলে ধরে।
বোয়িং কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বর্তমান ‘নাজুক’ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের উড়োহাজাজ বাংলাদেশ নিতে চাইলে আগের মত এবারও অর্থায়নে আগ্রহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের।
প্রশ্নোত্তরে উঠে আসে বাংলাদেশের এফএএ ক্যাটাগরিতে উন্নতির বিষয়টিও।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োহাজাজ চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এফএএ তাদের মূল্যায়নে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) ক্যাটাগরি-২ এ রেখেছে। ক্যাটাগরি-১ এ উত্তরণ না হওয়ায় অনেক বছর হল ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে।
এক যুগ আগে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কেনে বাংলাদেশ। তখন বেবিচককে এফএএ’র ক্যাটেগরি-১ এ উন্নীত করার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের এ উড়োহাজার নির্মাতা কোম্পানি, যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
সেই বাধা কাটাতে আবারও সহায়তা দেওয়ার কথা বলছেন বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এফএএ এর ক্যাটাগরি-১ পেতে নিজেদের খরচে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার শর্ত তাদের বিক্রয় প্রস্তাব রয়েছে।
আলোচনায় বোয়িং ও এয়ারবাসের তুলনামূলক প্রসঙ্গ চলে আসে বারবার।
বর্তমানে বিমানের বহরে থাকা ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৬টি বোয়িংয়ের। অন্য পাঁচটি স্বল্পপাল্লার ড্যাশ-৮০০ উড়োজাহাজ। প্রথমবারের মত বহরে এয়ারবাস যুক্ত করার আলোচনা চলছে, যা অনেকদূর এগিয়েছে বলে খবরে এসেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
ইউরোপের এ নির্মাতা কোম্পানির উড়োজাহাজ কেনার ব্যাপারে অগ্রগতিও হয়েছে। গত মাসে বিমানের পর্ষদ সভায় তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই, দরকষাকষিসহ ক্রয় প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এখন বোয়িং চাইছে, তাদের প্রস্তাবটিও পুরোপুরি মূল্যায়ন করুক বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বাংলাদেশের কাছে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে বলে খবর এলেও তা বেশিদূর এগোয়নি।
প্রশ্নোত্তরে উঠে এল যা
প্রশ্ন: বিমানের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির জন্য বোয়িং ও এয়ারবাসের মধ্যে একটা ‘পাল্টাপাল্টি’ অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উত্তর: আমরা সবসময়ই নিরপেক্ষভাবে পণ্য মূল্যায়নের পক্ষে। যে অপারেটরগুলো বোয়িং ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে, তারা সেটি মূল্যায়ন করেছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা হচ্ছে ৭৮৭, যা বিক্রির পর আবারও কিনতে বায়না করছে অনেকে। এখন পর্যন্ত ৮৯টি এয়ারলাইন্সে ১ হাজার ৯০০টির মত ৭৮৭ চলছে। এর মধ্যে ৫৫টি এয়ারলাইন্স দ্বিতীয়বার বায়না করেছে। কারণ, এর ওপর তাদের বিশ্বাস রয়েছে। এটি নিয়ে আমরাও খুব আত্মবিশ্বাসী।
প্রশ্ন: আপনি কী মনে করছেন বোয়িংয়ের প্রস্তাব নিয়ে কম গুরুত্ব দিচ্ছে বিমান বা কোনো ভূরাজনৈতিক কারণে এয়ারবাস এখানে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে?
উত্তর: আমরা (বিক্রয় প্রস্তাবগুলোর) একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন চাই। আশা করি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই সেটি হবে। এটা বিমানকে ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময়ের জন্য অনেক সহায়তা পেতে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন: আপনারা এখানকার বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী, বিমানের এমডিসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি? তারা আপনাদের কী বার্তা দিয়েছেন?
উত্তর: আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের প্রস্তাবটি পুরোপুরি মূল্যায়নের অনুরোধ করেছি। তারা বলেছেন, করবেন।
প্রশ্ন: তারা কি এয়ারবাসের প্রস্তাব মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছেন?
উত্তর: আমরা সে রকমই বুঝেছি। যদিও এটা এয়ারলাইন্সের উত্তর দেওয়ার বিষয়। আমরা সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখেছি, এখানে কোনো সমঝোতা সই হয়নি।
প্রশ্ন: আপনারা বিমানকে আর্থিক সুবিধার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা তাদের সামনে একটি পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব দিয়েছি।
প্রশ্ন: সেই প্রস্তাব কী প্রকাশযোগ্য?
উত্তর: না, সেটা আমাদের ও গ্রাহকের মধ্যেই সীমিত।
প্রশ্ন: বোয়িং কি এখন বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়েছে? রিজার্ভ কমে যাওয়ার পর বাংলাদেশ কি এখন এত বড় কেনাকাটার মত অবস্থায় আছে?
উত্তর: আমরা এটা নিয়েও কাজ করেছি। ইউএস এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এটির মূল্যায়ন করেছে। বিমানের আগের উড়োজাহাজগুলো কেনার ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করেছিল তারা। সেটি খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অতি সম্প্রতি সব টাকা পরিশোধ করেছে বিমান। এবারও ব্যাংকটি আগ্রহ দেখিয়েছে।
প্রশ্ন: বিমান বোয়িংনির্ভর হয়ে পড়লে যদি কোনো সময় দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়, তাহলে কি বোয়িং খুচরা যন্ত্রাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেবে? এমন কি হতে পারে?
উত্তর: এখন তিনটি দেশের সঙ্গে আমাদের এ রকম অবস্থা বিরাজমান। এগুলো হল- রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়া। আমার মনে হয় না বাংলাদেশের সঙ্গে এমন কোনো সমস্যা হবে। কারণ দুদেশের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
প্রশ্ন: এক বছরের মধ্যে দুটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ প্রয়োজন হতে পারে বলে বিমানের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের ধারণা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বোয়িং কি এক বছরের মধ্যে তা সরবরাহ করতে পারবে?
উত্তর: যদি অন্য কোনো কোম্পানির অর্ডার করা বিমান তৈরি থাকে, তাহলেই এ সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব।
প্রশ্ন: বিমানকে আপনারা কতটি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিচ্ছেন?
উত্তর: চারটি সুপরিসর ৭৮৭ যাত্রীবাহী ও দুটি ৭৭৭ ওয়াইড বডি মালবাহী (ফ্রেইটার) বিক্রির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রশ্ন: বিশ্বজুড়ে ৭৮৭ এর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা সবার জানা। এর মধ্যে বিমান কেন নতুন করে ৭৮৭ কেনার প্রস্তাব বিবেচনা করবে?
উত্তর: বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী সম্প্রতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৭৮৭ এর নিরাপত্তা উদ্বেগের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিমানকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন। আমরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দিয়েছি, সব ধরনের প্রমাণ দিয়েছি। আমরা খুশি হব, সিয়াটল থেকে একজন বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় এনে বিষয়গুলো নিশ্চিত করে নিতে।
৭৮৭ এর বিষয়ে আরও কিছু বলতে চাই, যার সূত্রপাত ২০২১ সালের দিকে। উৎপাদনে কিছু বিষয় পাই আমরা। গত ১৮ থেকে ২৪ মাস এফএএ এর সঙ্গে কাজ করেছি আমরা। উড়োজাহাজগুলো নিরাপদ রয়েছে কি না, এর জন্য আমরা খুবই কঠোর প্রকৌশলগত মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তখন আগে তৈরি উড়োজাহাজগুলো পরীক্ষা করে দেখেছেন আমাদের কর্মীরা। যার কারণে সেই সময়ে আমাদের উড়োজাহাজ উৎপাদন প্রক্রিয়া ধীর হয়ে আসে। এখন আমরা আগের উড়োজাহাজগুলো সরবরাহ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।
এ মডেলের উড়োজাহাজ গত ১৩ বছর ধরে সার্ভিসে আছে। এর মধ্যে এটি ৮৫০ মিলিয়ন যাত্রী বহন করেছে।
প্রশ্ন: বিমানের জন্য এয়ারবাসের চেয়ে বোয়িং ভালো– এমন দাবির পেছনে বোয়িংয়ের যুক্তি কী?
উত্তর: ৭৮৭ অপারেট করে এয়ারবাসের চেয়ে বছরে ৫ মিলিয়ন ডলার বেশি লাভ করতে পারবে বিমান। ৬ শতাংশ কম জ্বালানি, ৩০ শতাংশ কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, প্রতিযোগিতামূলক সময়ে সরবরাহ করার প্রস্তাব রয়েছে। বোয়িংয়ের পণ্য অন্য প্রতিযোগীদের চেয়ে দামেও কম।
প্রশ্ন: বিমানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, উড়োজাহাজ বিক্রির পর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে বোয়িং ততটা উৎসাহী হয় না। কয়েকদিন আগে বিমানের একটি ৭৮৭ উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ড ভেঙে যাওয়ার পর সেটা সিঙ্গাপুর থেকে আনানো হয়েছে।
উত্তর: এটা জানার পর আমাদের টিম খুবই তৎপর হয়। সিঙ্গাপুরে একটি উইন্ডশিল্ড প্রস্তত ছিল। আমরা সেটা বিমানের পরবর্তী ফ্লাইটে তুলে দিই। আমাদের দিক থেকে বলতে চাই, এয়ারলাইন্স জানে আমরা তাদের জন্য আছি, কারণ বিমান অনেক পুরোনো গ্রাহক, সম্পর্কটা ১০ বছরের বেশি।
প্রশ্ন: উইন্ডশিল্ডটা ফাটল কী করে?
উত্তর: এটা হতে পারে।
প্রশ্ন: উইন্ডশিল্ডে ফাটলের ঘটনায় বোয়িংয়ের পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিমানের অনেকেই।
উত্তর: একটি উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হওয়ার হতাশা থেকে তারা এমনটি বলেছেন। আমরা মোটেও বিশ্বাস করি না যে এটা পণ্যের মানসংক্রান্ত কোনো সমস্যা। একটা উড়োজাহাজ বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়, সেখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে উইন্ডশিল্ডে ফাটল সৃষ্টি হতে পারে।
আরেকটু বড় প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। ওই সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে এবং আরও কিছু বিষয়ে হতাশা বিমানের থাকতে পারে। আমাদের পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে একটা উদ্বেগ আছে। কারণ বোয়িংয়ের ব্যাপক চাহিদার কারণে এর সাপ্লাই চেইন অনেক সময় তাল রাখতে পারে না। সরবরাহকারীরা নতুন বিমান উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রাংশগুলো তৈরি করে কুলিয়ে উঠতে পারে না। আমাদের ম্যানেজ করে নিতে হয়।
প্রশ্ন: এর আগে বিমানের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির সময় বেবিচকের সক্ষমতা বাড়াতে এফএএ ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্যাটাগরি-১ এ উত্তরণের জন্য সহায়তার কথা বলেছিল বোয়িং। কিন্তু সেটি এখনও হয়নি। ফলে একটা ধারণা রয়েছে, বিগত সময়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বোয়িং কেনার পেছনে এফএএ ক্যাটাগরি-১ এ উত্তরণ ছিল একটি বড় বিষয়। কিন্তু সেটি না হওয়ায় বিমান ও সরকারের মধ্যে একটা অস্বস্তি রয়েছে। এটাও হয়ত এয়ারবাসের দিকে ঝোঁকার একটা বড় কারণ। বিমানকে এ বিষয়ে সহায়তা করার বিষয়ে আপনাদের এখনকার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত করার জন্য বোয়িং কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিনা সন্দেহ আছে। কারণ এটা এফএএর সিদ্ধান্ত। এফএএ ও বেবিচকের দ্বিপক্ষীয় একটি বিষয়। বোয়িং এখানে সমস্যা চিহ্নিত করা ও তার সমাধানে সাহায্য করতে পারে। এবার বোয়িংয়ের প্রস্তাবের অংশ হিসেবে বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উত্তরণের জন্য বোয়িং নিজের খরচে একটি থার্ড পার্টি পরামর্শক নিয়োগ করার কথা বলেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ক্যাটাগরি-১ না পাওয়ার পেছনে কী কোনো ভূরাজনৈতিক বিষয় আছে?
উত্তর: আমরা বিশ্বাস করি, এখানে এমন কোনো বিষয় নেই। আপনি অন্য দেশগুলোর দিকে তাকান, ফিলিপিন্সের বহু বছর লেগেছে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে।
প্রশ্ন: বিমান ১০ বছর ধরে বোয়িং ব্যবহার করছে। কিন্তু এখন বাজার ঘুরে যাচ্ছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দুটি এয়ারবাস সংগ্রহ করেছে, নভো এয়ার এয়ারবাস সংগ্রহের চেষ্টায় আছে। বিমানও এয়ারবাসের কথা ভাবছে। আবার ভারতেও এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো কয়েকশ এয়ারবাসের অর্ডার করেছে। এ রকম কেন হচ্ছে?
উত্তর: মিশ্র ফ্লিটের খরচ বাঁচাতে ইন্ডিগো অনেক এয়ারবাস কিনছে। কারণ আগে থেকেই তাদের কাছে এয়ারবাস রয়েছে। বিমানের ক্ষেত্রেও যুক্তিটা প্রযোজ্য হতে পারে। বিমান কেন মিশ্র বহর তৈরি করে অযথা ১৫০ মিলিয়ন ডলার লোকসান করবে? যেমন সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের সাড়ে ৮০০ বোয়িং রয়েছে? তারা এয়ারবাস যুক্ত করছে না খরচ বাড়বে বলে। আমরা মনে করি, বিমানের ক্ষেত্রে একই জটিলতায় লোকসানের পরিমাণ হতে পারে ১৫০ মিলিয়ন ডলার।
প্রশ্ন: আপনি কীভাবে এই ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির হিসাব করছেন?
উত্তর: এ বিষয় নিয়ে আমাদের বিস্তারিত সমীক্ষা আছে। মিশ্র বহর হলে আগামী ২০ বছরে এই ১৫০ মিলিয়ন ডলার তাদের বাড়তি ক্ষতি হবে। চারটি বড় বিষয় আছে- প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ, স্পেয়ার পার্টস এবং পাইলট প্রশিক্ষণ। কোনো বহরে ১০টি বোয়িং ৭৮৭ এবং ১০টি এয়ারবাস এ৩৫০ উড়োজাহাজ থাকলে বেশি পাইলট লাগবে।