বেঁধে দেওয়া ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে আইএমএফের পরামর্শে সুদহারের ‘করিডোর’ চালু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক; এজন্য বাজারভিত্তিক ‘রেফারেন্স রেট’ চালুর পরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
রোববার বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এজন্য সুদহারের একটি করিডোর দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি রেফারেন্স রেট ঠিক করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেটির ভিত্তিতে ঋণ ও বিনিয়োগের সুদহার ঠিক করবে।
ব্যবসার খরচ কমাতে স্বল্প সুদে অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে সরকারের পরামর্শ মেনে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহারে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের কারণে দেশে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ সামাল দিতে অর্থনীতিবিদরা ঋণের এ সীমা তুলে দিয়ে আমানতের সুদহার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
ব্যাংকগুলোও তারল্য সংকটে আমানত টানতে সুদহার বাড়ালেও ঋণের সীমা নির্ধারিত থাকায় তা বাড়াতে পারছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনায় শুধু ভোক্তা ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো।
অপরদিকে বাংলাদেশকে চার দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বেঁধে দেওয়া সুদহারের সীমা তুলে দিতে পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যে সুদহারের করিডোর পদ্ধতি চালুর একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই পরামর্শ মেনেই বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সে পথে হাঁটার কথা জানাল।
এদিন আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গভর্নর আব্দুর রউফ তিন দিনের বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩ এর দ্বিতীয় দিন রোববার ‘লং টার্ম ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে রেফারেন্স রেট চালুর কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। একটি করিডোর দেওয়া হবে সুদহারের, তা হবে বাজারভিত্তিক রেফারেন্স রেট অনুযায়ী।’’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের একটি হার নির্ধারণ করে দেবে বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী। এর সঙ্গে ঋণের খাত অনুযায়ী সুদের একটি সর্বোচ্চ সিলিংও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে; সেখানে কত শতাংশ বেশি নিতে পারবে ব্যাংকগুলো তা ঠিক করে দেওয়া হবে। এটিকেই রেফারেন্স রেট বলা হচ্ছে।
গভর্নর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে, যার একটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এটি করতে গিয়ে চাহিদাজনিত সরবরাহের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের নীতিতে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরেকটি হচ্ছে বিনিময় হার একটিতে নিয়ে আসা। বর্তমানে আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স ও নগদ কেনাবেচায় বৈদেশিক মুদ্রার একাধিক বিনিময় হার আছে। শিগগির তা একটিতে নামিয়ে আনা হবে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল হয়।
তৃতীয়টি হচ্ছে ঋণ সুদহারের রেফারেন্স রেট ঠিক করা; যা প্রায় চূড়ান্ত করার কাজটিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক করছে বলে জানান তিনি।