“আমি যদি অর্থনীতির চালক হতাম, তাহলে আমি তেলের ট্যাংক চেক করতাম, কিন্তু সামনে আগানো থামাতাম না,” ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
Published : 10 Jun 2024, 01:51 AM
মূল্যস্ফীতিকে সাড়ে ৬ শতাংশে আটকে রাখার যে লক্ষ্য নতুন বাজেটে রাখা হয়েছে তা বাস্তবতার নিরিখে ‘খুবই কঠিন’ ঠেকছে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘ইনসাইড আউট’ আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা এটা আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। আমি অর্থমন্ত্রীকে কুর্নিশ জানাই, তার অভীষ্ট ও সাহসের জন্য। কিন্তু এক বছরের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে আসা… এটা করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগবে, কিন্তু এটা খুবই কঠিন হবে।”
ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলেও দেখা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
রিজার্ভে টান আর বিশ্ববাজারের অস্থিরতাকে সঙ্গী করে সরকার যখন আইএমএফের ঋণের শর্ত মেনে ভর্তুকি তুলে নিয়ে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, সেই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী।
দুই বছর ধরে গড়ে ৯ শতাংশের উপরে থাকা মূল্যস্ফীতিকে কীভাবে লক্ষ্য অনুযায়ী সামলাবেন, তা নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংকোচনমূলক নীতি-কৌশল আরো কিছুদিন চালু রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
আগামী ছয় মাসের মধ্যে তার ফল দেখার আশা প্রকাশ করে শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে (মূল্যস্ফীতি) কমতে শুরু করবে। দেখা যাক, চেষ্টাতো করতে হবে। এবং আপনারা এটাও লক্ষ্য করেছেন, বাজেটের আকার আমরা অনেক কমিয়ে রেখেছি, যাতে করে কোনো প্রেশার না পড়ে প্রাইসের উপরে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়ন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে পদক্ষেপ এবং কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন আওয়ামী লীগের গত সরকারের মন্ত্রী এম এ মান্নান।
সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে রাজনীতি নেমে টানা চারবারের সংসদ সদস্য হওয়া মান্নান দুই মেয়াদে সরকার পরিচালনায় জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগের ২০১৪ মেয়াদের সরকারে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
শুরুতে তাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর চার মাস পর তার দায়িত্বে যুক্ত হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ও। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তাকে করা হয় পরিকল্পনামন্ত্রী।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেখানে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি মান্নানকে। আগের সরকারে বেশ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য পরিচিত এই সংসদ সদস্যকে এবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
বাজেটের সঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে মান্নান বলেছেন, “বাজেটের ৪০ শতাংশ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে হয়ে যায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্প প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাবগুলোতে যথাযথ আকার ও অনুমোদনের কাজ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে অর্থে বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।
“পরিকল্পনামন্ত্রী হিসাবে আমি জানি, আসলে কোন দিকে যাচ্ছে; কিন্তু আসল খসড়াটা করে অর্থ মন্ত্রণালয়, সেটা তাদের কাজ। তবে সময় সময় পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি।”
‘হাতে টাকা আর সরবরাহের ফারাক আছে’
জীবনযাত্রার উন্নয়নের মধ্যে মানুষের হাতে টাকা এলেও সেই তুলনায় পণ্যের জোগানের সমন্বয় না হওয়াকেও মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসাবে দেখছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান।
তিনি বলেন, “যেহেতু আমরা উন্নত হতে চাই, আমাদের প্রকৃত সক্ষমতার আমরা বেশি ব্যয় করি। প্রত্যেক নাগরিকই তার ভাগ পেয়ে থাকে। প্রত্যেকের বেতন বাড়ছে, এমনকি রাস্তায় যে কাজ করছে সেও কয়েক বছর আগে চেয়ে বেশি পাচ্ছে।
“এ কারণে বাজারে নগদ টাকা যায়। আয়ের কারণে বেশিরভাগই ভালো চাল, ভালো মাছ, ভালো মুরগি কিনছে। সুতরাং সরবরাহের উপর চাপ পড়ছে। নগদ টাকার বিপরীতে সরবরাহের উপর চাপ বেশি পড়ছে। এ কারণে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ফারাক থেকে যাচ্ছে। আর সেটাই মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে।”
কোভিড-১৯ মহামারীর পর অন্য অনেক দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও বাংলাদেশ ‘ব্যর্থ’ হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে এম এ মান্নান বলেন, “পশ্চিমা উন্নত দেশের মত রিকভারি আমাদের হবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, তবে কমে আসছে।
“তাদের জিডিপি ও উৎপাদন আমাদের মতো দ্রুত বাড়ে না। আমাদের ৫, ৬, ৭ ও ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এই প্রবৃদ্ধি কল্পনাও করতে পারে না। দুয়েক শতাংশই তাদের জন্য অনেক। কেননা, তাদের পাত্র পরিপূর্ণ হলেও আমাদের পাত্রের অর্ধেকটা ফাঁকা। ফলে আমরা বেশি, জোরালো ও দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাই। এটা আমাদের মূল্যস্ফীতির হারকে প্রভাবিত করে।”
‘ঘাটতি আরও বেশি হতে পারে’
সরকারি ধারাবাহিকতা এবং অর্থনীতির বিশ্লেষকদের মতের বাইরে গিয়ে বাজেটে আরও ঘাটতি রাখা যায় বলে মনে করেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান।
প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশীয় উৎস থেকে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব যোগান দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বাজেটে বলেছেন মাহমুদ আলী। তাতে ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশের সমান।
মান্নান বলেন, “আমি সংখ্যার দিকে যাচ্ছি না। এই সংখ্যাগুলো পরিবর্তনশীল। বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে, ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। আপনাকে সবসময় ৫ শতাংশের নিচে থাকতে হবে- তা না।
“আপনি ৭, ৮, ৯ শতাংশেও যেতে পারেন। ৫ হচ্ছে আইডিয়াল সংখ্যা। মজার বিষয় হচ্ছে, আমাদের অর্থমন্ত্রীরা সবসময় ৫ শতাংশের নিচেই থাকেন। এটা এমন কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নয় যে, আপনাকে মানতেই হবে। আপনি ভিন্ন রকমও চিন্তা করতে পারেন।”
‘বাজেটের লক্ষ্য দিয়ে এনবিআরকে চাপে রাখা হয়’
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সরকারই এনবিআরকে অনেক বড় লক্ষ্য দিয়ে থাকে। কেননা আমাদের অনেক টাকা দরকার।
“অনেক বছর ধরে আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সব বছরই লক্ষ্য অর্জনে এনবিআর ব্যর্থ হয়েছে। এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য, প্রতি বছর আমরা তাদেরকে বেশি বেশি লক্ষ্য দিয়ে থাকি। আমরা জানি, তারা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না, কিন্তু আমরা তাদেরকে চাপে রাখতে চাই।”
তিনি বলেন, “প্রথম বিষয় হচ্ছে, আপনি স্কুল, হাসপাতাল প্রভৃতিতে কত খরচ করতে চান। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, এই টাকা কোথা থেকে আসবে। আমরা যেহেতু বর্ধমান অর্থনীতি, আমরা ঘাটতিতে থাকি; কেননা আমাদের ভূগর্ভের তেল-গ্যাস অতোটা নাই। ধনী দেশের মধ্যে উপরিভাগের সম্পদও তেমন নাই।
“ধনী দেশের জন্য অর্থও তাদের জন্য কাজ করে থাকে। ডলার বিশ্বকে এটা দেখিয়েছে, কিছু না করেও প্রধান মুদ্রা হওয়ার কারণে তারা অনেক বেশি আয় করছে।”
এম এ মান্নান বলেন, “বেশি ধনী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এর জন্য আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা জানি, আমরা যথাযথ মজুরি দিতে পারি না। অনেক সমস্যা আছে।
অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “ঋণ করা সবসময় খারাপ নয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ঋণ করাকে খারাপ হিসাবে দেখা হয়। পৃথিবীর কোনো অর্থনীতি ঋণ ছাড়া নেই।
“সৌদি আরবও ঋণ করে। যুক্তরাষ্ট্রও পুরোপুরি ঋণ করেছে চীনের কাছে। সুতরাং ঋণ করা থেকে পালানোর পথ নেই। পালানোর একমাত্র পথ হচ্ছে, কোনো কিছু না করা।”
কিছু না করার অবস্থান থেকে বেরিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, যোগাযোগ অবকাঠামো প্রভৃতির জন্য দেশি-বিদেশি ঋণের দিকে যাওয়ার পক্ষে সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রী।
দুই কারণে খরচে যতি টানতে হচ্ছে জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, “প্রথমত, ডলার সংকটের কারণে সরকারের অবদান কমেছে। দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ মহামারীর পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় আছে, এটা যেমন প্রত্যাশিত করা হয়েছিল- তেমন হয়নি। এ কারণে কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বিরতি দেওয়া হয়েছে।
“আমি মনে করি, মাঠের পরিস্থিতিতে মজবুত করার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা বিরতি নিচ্ছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির যে ধারায় আমরা কয়েক বছর ছিলাম, তেমন পরিস্থিতির পরিবেশে তৈরির জন্য সরকার কিছু বিরতি নিচ্ছে। বাজেটের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিচ্ছে এবং বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “পশ্চিমা দেশ বা জাপানের মত, এমনকি মালয়েশিয়ার মত অতি উপরে উড়তে থাকা অর্থনীতি আমরা নই। আমরা কৃষিভিত্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি। এ কারণে চাকচিক্যময় জায়গায় খরচ না করে এসব জায়গায় আমাদেরকে মনোযোগ দিতে হবে।”
আমলাতন্ত্রেও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে অনেকে আছে, তাদের যা দেওয়ার কথা তা দিচ্ছে না। এটাকে বিশুদ্ধ করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।”
ডলার ও রিজার্ভ সংকট সমাধানের পথনকশা কি বাজেটে ঠিকমত জায়গা পেয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছুটা করা হয়েছে। এটাকে মোকাবেলার জন্য সরকার সাহসিকতার সঙ্গে চেষ্টা করেছে।
এম এ মান্নান বলেন, “আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি, সেটাতে আমাদের তাড়া আছে। এ কারণে আমাদেরকে হিসাবি ঝুঁকি নিতেই হবে। যেটা আমরা গত ১৫ বছরে নিয়েছি, আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় বেশ পরিবর্তন এসেছে।
“দৃশ্যত প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ নিয়ে যেতে পেরেছি। আমরা হয়ত অনেকে বুঝতে পারি না, এটা শেখ হাসিনার, এই সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন।”
তবে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমাদের টিনেজ অর্থনীতি খুব দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব সম্পদ যথেষ্ট না হওয়ায় আমাদেরকে ঋণ করতে হয়। বিদেশি ঋণের বিষয়ে আপনি জানতে চাচ্ছেন। হ্যাঁ, এটা আছে। কিন্তু এটা কি অনেক বেশি হয়ে গেছে?
“কেউ কেউ বলে, অনেক বেশি। আবার কেউ বলে, অতটা বেশি নয়। একটা অর্থনীতি কতটা ঋণ করতে পারে, তার নির্দিষ্ট কোনো মাত্রা নেই। তবে একটি অর্থনীতির চালকরা জানতে পারে।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “একটি গাড়ির চালক জানে তার তেল আছে, সে কতটুকু পথ চলতে পারবে। চালক যদি জেনে চালায়- তাহলে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু কী হচ্ছে তা যদি চালক না জানে, তাহলে সেটা সমস্যা।
“আমাদের অর্থনীতিতে, আমি বিশ্বাস করি, আমি যদি চালক হতাম, তাহলে আমি তেলের ট্যাংক চেক করতাম, কিন্তু সামনে আগানো থামাতাম না।”
মান্নান বলতে থাকেন, “এটা আমাদের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছর ধরে এই কাজটাই করছে। আমরা ঝুঁকি নিচ্ছি। কিন্তু সেটা জেনেই নিচ্ছি এবং আমরা যা ঋণ করেছি, তাতে আমাদের অর্থনীতি বেশ ভালো করেছে। সুতরাং আমাদের সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
“আমি মনে করি, এই মুহূর্তে কোনো বিপদের কাছাকাছি আমরা নেই। আমরা আগুনের কাছাকাছি আছি, তবে পুড়ে যাওয়ার মত জায়গায় নয়। এই জায়গাতেই আমাদেরকে থাকতে হবে।”
খেলাপি ঋণ আর চুরি
খেলাপি ঋণের নামে বাংলাদেশে যা হয়ে থাকে, সেটাকে ‘চুরি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, “খেলাপি সব জায়গায় থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ডসহ সব আদর্শ অর্থনীতিতে এটা আছে। কিন্তু কতোটা ঋণ খেলাপি, কীভাবে খেলাপি হল সেটা দেখার বিষয়।
“অনেক সময় খেলাপি ব্যক্তির ব্যর্থতার কারণে নয়; বাজার, কারিগরি কারণ এবং বাজার পরিবর্তনের কারণে খেলাপি হতে পারে।”
মান্নান বলেন, “খেলাপি হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, টাকা গ্রহণ করে কানাডা-মালয়েশিয়ায় চলে গিয়ে বসবাস করা- এটা খেলাপি নয়, চুরি। অন্য কারণে ব্যর্থতার জন্য সেখান থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে চুরিটা খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।”
উদ্যোক্তাদের অনেকে ঋণ করে টাকা যে বিদেশে পাচার করে থাকে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তাদের কেউ কেউ নিজেরা ব্যাংক খোলে, যখন তারা ব্যাংক খোলে তখন ৫০০ কোটি টাকা দেয় এবং জনগণ হয়ত পাঁচ হাজার টাকা জমা করে লাভ পাবে বলে।
“কিন্তু উদ্যোক্তা নিজেই সেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন এবং বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রায়ই ব্যাংক সমস্যায় পড়ছে।”
ব্যাংক ঋণের জন্য জামানতের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের ধরার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ধরে করা এক প্রশ্নে মান্নান বলেন, “সেই বক্তব্যের জন্য আমি তার শুভকামনা করছি। তিনি সবসময় বেশি কিছু করতে পারেন। কিন্তু বেশি তিনি করতে পারবেন কি না?
“দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা এবং টেকসইভাবে আইন ও নীতির বাস্তবায়ন দরকার। যথেষ্ট করছেন কি করছেন না- সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে তিনি চেষ্টা করছেন। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার ইচ্ছার কথা তিনি বলেছেন। চলুন, আশা করি যে- তিনি সেটা যেন করতে পারেন।”
‘কালো টাকা সাদা হলে তা প্রকাশ করা উচিত’
বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কতজন কত টাকা সাদা করেছে তা ফলাও করে প্রচার করার বিষয়ে মত দেন সংসদ সদস্য এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, “যখন আমরা অতীতে এই সুযোগ দিয়েছি, তখন সরকার কেন এই ঘোষণা জনসম্মুখে দেয়নি যে- এ বছর এত টাকা সাদা করা হয়েছে এবং আমরা এত টাকা কর হিসাবে পেয়েছি।
“এই নীতির মাধ্যমে কত টাকা পাওয়া গেল, সেটা বড় আকারে প্রকাশ করা উচিত। এটা খুব জরুরি।”
তবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ এ কৌশলে ফেরত আসার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন সাবেক এই মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বিদেশে যারা সম্পদ নিয়ে গেছে, তাদের দুয়েকজন হয়ত আনবে। বেশিরভাগই আনবে না বলে আমরা মনে হয়।”