জলের উপর নীরমহল

১৯২১ সালে শুরু করে টানা নয় বছর লাগে এই জলমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে।

অজয় মিত্রঅজয় মিত্র
Published : 20 Oct 2022, 03:48 PM
Updated : 20 Oct 2022, 03:48 PM

শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ৫০ কিলোমিটারের খানিক বেশি গেলে পৌঁছানো যাবে মেলাঘর শহরের রুদ্রসাগর হ্রদে।

হ্রদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে দেখে নেওয়া যাবে সুবিশাল এক জলমহলও। ঐতিহাসিক এই নীরমহল দেখতে এখানে আসেন পর্যটকরা।

এদিকে ঘুরতে ঘুরতে জানা যাবে মহলের ইতিহাসও। মহলে যাওয়ার যে ঘাট, সেদিকেও সাইনবোর্ডে সংক্ষিপ্ত লেখায় মিলবে মহলের কথা।

রাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য দেব বর্মন গ্রীষ্মকালের অবকাশ কাটাতে ১৯৩০ সালে এই মহল বানান।

জলের উপর নীরমহলের নির্মাণ করেছিল ব্রিটিশ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি মার্টিন অ্যান্ড বার্ন।  ১৯২১ সালে শুরু করে টানা নয় বছর লাগে এই জলমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে।

মহারাজা রাজঘাট থেকে হাতে চালিত নৌকায় জলমহলে যেতেন।

মোট ২৪টি কক্ষ রয়েছে নীরমহলে। আর এই প্রাসাদ দুটি অংশে ভাগ করে বানানো হয়েছে।

পশ্চিম দিকের অংশটি রাজপরিবারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল; একে অন্দরমহল বলে।

পূর্ব দিকে রয়েছে একটি উন্মুক্ত থিয়েটার; যেখানে মহারাজা ও রাজ পরিবারের মনোরঞ্জনে হতো নাচ, গান, নাটক।

নীরমহলে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ছবি তোলা, ভিডিও ধারণে রয়েছে তদারকিতে থাকা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা।

যদিও এমন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও পরিবেশে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা ওই নির্দেশনা আর মনে রাখেনি।

রুদ্রসাগর হ্রদে নামাতে নীরমহলের ভেতরে দুটি সিঁড়ি রয়েছে।

এই স্থাপনার দেখভালকারী একজন কর্মকর্তাকে বসতে দেখা গেল টিকেট কাউন্টারের পাশে একটা রুমে। দর্শনার্থীরা কে কী করছেন, সে সবদিকেও নজর রাখছেন তিনি যতদূর মনে হলো।

আলাপের সুযোগ মিলতে ভবন নিয়ে আরও কিছু কথা জানালেন তিনি।

সুভাষ বর্মণের ভাষ্যে, মধ্যযুগীয় হিন্দু ও মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ রয়েছে এই নীরমহলের নির্মাণ শৈলীতে।

তিনি বলেন, ”নীরমহলের ছাদে যে বাগানটি দেখছেন, তা ভারতের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন চত্ত্বর বাগান।”

দর্শনার্থীদের জন্য আগে নীরমহলে ’ওয়াটার অ্যান্ড লেজার শো’ আয়োজন করা হতো।

’সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই স্থাপনার সৌন্দর্য্য ও জাঁকজমক কমে গেছে’ এমন কথা বললেন সুভাষ বর্মণ।

দর্শনার্থীদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের সংবাদকর্মী সুমন বাবু।

ঐতিহাসিক নীরমহল দেখে তিনি বললেন, ”চারপাশে হ্রদের অথৈ জল, মাঝখানে চমৎকার এই জলমহল… অসাধারণ।

“ঘাট থেকে ২০ মিনিট বোটে চড়ে এখানে এসেছি। দেশের কাছেই দৃষ্টিনন্দন এমন জায়গা… দেখে ভালো লাগছে।”

পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি থাকলে খুব সহজে ও কম খরচে বাংলাদেশের আখাউড়া দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পৃথিবী বিখ্যাত এই স্থাপনাগুলো ঘুরে আসা যায় খুব সহজেই।