বনবন্দনায় জাবির নাট্য স্নাতকদের মিলনমেলা

ঢাকের শব্দ, লোকজ সুরলহরি, হাঁড়িভাঙ্গা ও এলহাম পাঠ দিয়ে শুরু হয় পিকনিকের আনুষ্ঠনিকতা।

ফারদিন ফেরদৌসফারদিন ফেরদৌস
Published : 10 March 2023, 10:11 PM
Updated : 10 March 2023, 10:11 PM

ভোরের সূর্য উঁকি দিতেই ভাওয়ালের শালবন গায়ে মাখল সোনালী রঙ। পাখিরা ছড়াল মায়াবী সুর। সেই রঙে রঙিন হয়ে সুরের ঐকতানে নিজেদের কন্ঠ মেলাতে হাজির হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকেরা।

'দেখা হবে বন্ধু কারণে আর অকারণে' এই স্লোগানকে উপজীব্য করে জমে উঠল দিনব্যাপী মিলনমেলা।

গাজীপুরের আন্ধারমানিক এলাকায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটিতে গত ৩ মার্চ হয়ে গেল নাট্য স্নাতকদের পিকনিক।  এতে অংশ নেন দেড়শ জন স্নাতক, তাদের পরিবার ও সন্তানরা। 

সকালে ঢাকের শব্দ, লোকজ সুরলহরি, হাঁড়িভাঙ্গা ও এলহাম পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পিকনিকের আনুষ্ঠনিকতা। 

এলহাম পাঠ করেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও থিয়েটার ব্যক্তিত্ব কামালউদ্দিন কবির।

“সময়ের পাশে বসে থাকি / গোপন কথার ভিতরে / শুধু জানি আমরা একটি আদেশ পেয়েছি উপরে / আমরা যেন পাশে থাকি সবসময় নিজেদের কাছে / গোপন কথার ভিতর /শুধু ভালোবাসার উল্লেখে।” 

এরপর জমে ওঠে ঢোল, করতাল, একতারা যোগে বাউল সঙ্গীতের আড্ডা।

শিশুদের জন্য ছিল দৌড় প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবার জন্য ছিল পুরস্কার। 

তারপর ছিল ভাওয়ালের শালবন ঘুরে দেখা দেখার পর্ব। নাটকের গান দিয়ে বনবন্দনা করেন স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা। ব্যাচমেট, অনুজ ও অগ্রজরা সবাই হাত ধরাধরি করে হাঁটেন বসন্তের পাতা ঝরা পথে।

পরে বসন্তকে রাঙিয়ে তুলতে একে অপরের গায়ে আবির মাখেন নাট্য স্নাতকেরা।

দুপুরের ভোজনে ছিল কাচ্চি বিরিয়ানি, কাবাব এবং জর্দা। আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে চলছিল মুড়ি মুড়কি, নিমকি, বাতাসা, তেঁতুলের শরবত, কাসুন্দি এবং বড়ই-পেয়ারার ফলাহার।

পিকনিকের নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল ফিল্ম সিটি ঘুরে দেখা, প্রিয়তমের উদ্দেশ্যে গোপন চিঠি লেখা, রেড কার্পেটে ফটোসেশন, গোল টেবিল সু-মন্ত্রণা, ব্যাচভিত্তিক পরিচিতি, অভিজ্ঞতা বিনিময়, স্মৃতিকথা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজন।

সন্ধ্যায় ছিল ক্যাম্প ফায়ার ও ডিজে‌ পার্টি। 

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রয়াত দ্বিতীয় ব্যাচের সাজেদুর রহমান চঞ্চল, ৪র্থ ব্যাচের দুরন্ত বিপ্লব, ১১শ ব্যাচের ফরহাদ পাটওয়ারী, ১২শ ব্যাচের তানভীর হাসান ওসমানী এবং ২২তম ব্যাচের চামেলি রাণী বর্মণকে স্মরণ করা হয়।

আয়োজনস্থলে রাখা হয় তাদের ছবিসহ ফেস্টুন। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয় অধ্যাপক ড. সেলিম আল দীনকে। 

উনিশ শতকের আশির দশকের শেষার্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের হাত ধরে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়।

এই বিভাগ থেকে পাশ করে এখানকার কয়েকশ শিক্ষার্থী দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কাজ করছেন।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার পাঠদান, নাট্য নির্দেশনা, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক নির্মাণ এবং অভিনয়ে জড়িত আছেন।

সন্ধ্যায় ক্যাম্প ফায়ারের আলো নেভার সঙ্গে সঙ্গে সকল নাট্য স্নাতকের কন্ঠে বাজে বিদায়বেলার রাবীন্দ্রিক সুর – ‘যখন ভাঙল মিলন মেলা / ভেবেছিলুম ভুলব না আর চক্ষের জল ফেলা / দিনে দিনে পথের ধুলায় মালা হতে ফুল ঝরে যায় / জানি নে তো কখন এল বিস্মরণের বেলা’। 

আপনার নিবন্ধিত ইমেইল থেকে অপ্রকাশিত লেখা/ছবি/ভিডিও আকারে নাগরিক সংবাদ পাঠান citizen.journalism@bdnews24.com  ঠিকানায়।  
নিবন্ধিত নাগরিক সাংবাদিক হতে আপনার নাম (বাংলা ও ইংরেজিতে), ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি এবং ছবি  citizen.journalism@bdnews24.com  ঠিকানায় ইমেইল করুন।