“আমরা পাঁচ বছরে যত দুর্যোগ মোকাবেলা করেছি, তার মধ্যে এবারের ব্যবস্থাপনাটি ছিল সর্বোচ্চ সঠিক,” বলেন তিনি।
Published : 14 May 2023, 04:30 PM
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা ‘সহনীয়’ ছিল জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, এই দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে রোববার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, সকাল ৬টা থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও মিয়ানমারের সিত্ত উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এখনও সেটি অতিক্রম করছে। বিকালে এটি উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে অগ্রসরমান হবে।
“এখন ঝড় ৫০ থেকে ৬৮ কিলোমিটার গতিতে হচ্ছে। যেহেতু সকাল থেকে ভাটা শুরু হয়েছে তাই জলোচ্ছ্বাসের (বড়) শঙ্কা নাই, মাত্রাটাও সহনীয়।
“সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ঝড়টি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অতিক্রম করছে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রের ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে ঝড়ের গতিবেগ এখনও ২০০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার। এ গতিবেগে কেন্দ্রটি উপকূল অতিক্রম করলে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হবে।”
তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ না পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারে ৫৭৬টি কেন্দ্রে ২ লাখের বেশি, চট্টগ্রামে ১ হাজার ২৪ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, সুবর্ণচরের মানুষকেও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
“এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ আমরা পাইনি। আমরা পাঁচ বছরে যত দুর্যোগ মোকাবেলা করেছি, তার মধ্যে এবারের আয়োজন…ব্যবস্থাপনাটি ছিল সর্বোচ্চ সঠিক।”
কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে সুপেয় পানি না থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কক্সবাজারের একটি কেন্দ্রে সুপেয় পানি ছিল না। আমি অভিযোগ পেয়ে সেখানকার জেলা প্রশাসককে বলেছি। সেখানে তিনি পর্যাপ্ত মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা করেছেন।
“এবার আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার আমরা তাদের মিনারেল ওয়াটার খাওয়াব, সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যায় যা করেছিলাম, যেন দুর্যোগের পর সেখানে পানিবাহিত কোনো রোগ না হয়।”
দুর্যোগকালীন লাখ লাখ মানুষের ব্যবস্থাপনা সহজ নয় জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, “হাজার হাজার আশ্রয়কেন্দ্র, লক্ষ লক্ষ মানুষ। এদের ব্যবস্থাপনা বাস্তবিক অর্থে এত সহজ না। আমরা দেখেছি এর আগেও সক্ষমতা ১০০ জনের হলেও ২০০ মানুষ আসে। তাদের খাওয়া-দাওয়া, স্যানিটেশনের ব্যবস্থা খুব সহজ নয়।”
তবে এবারের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাজের প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী।
“এবার আমাদের ব্যবস্থাপনা খুবই সুন্দর হয়েছে। কোথাও কোনো লুপহোল ছিল না।”
প্রথমদিকে ‘সুপার সাইক্লোনের’ কথা বলে পরে পরিবর্তন প্রসঙ্গে এনামুর রহমান বলেন, “তখন পূর্বাভাস দেখে আমরা সুপার সাইক্লোনের কথা বলেছিলাম। পরে বাতাসের গতিবেগ দেখে তা আমরা প্রত্যাহার করে আমরা বলেছি, সুপার সাইক্লোন হবে না, কারণ এর গতিবেগ ১৫০ থেকে ১৬০। সুপার সাইক্লোন হলে তখন বাতাসের গতিবেগ থাকে ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে, সেটা হয়নি।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে এটা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তখন এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার। গতকাল এটি গতি কমিয়ে হয়েছে ৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। যে কারণে এটি আঘাত হানতে দেরি হয়েছে। যখন যা পূর্বাভাস পেয়েছি তার ভিত্তিতে আমরা বক্তব্য দিয়েছি।
“ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এটা হতে পারে। যেকোন সময় এর গতিপ্রকৃতি বদলাতে পারে, এর ভিত্তিতে আমাদের বক্তব্য দিতে হয়।…প্রত্যেক কথার পেছনে যুক্তি আছে, এখানে কোনো বিভ্রান্তি নেই।”