Published : 16 Nov 2023, 09:16 PM
সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি ও জামায়াতের চলমান অবরোধ ও হরতালে নিরাপত্তার পাশাপাশি নজরদারিও বাড়িয়েছে পুলিশ। টানা কর্মসূচির মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলতি পথে ও সড়কের পাশে রাখা বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে; কোথাও কোথাও পেট্রোল ঢেলেও জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাড়ি।
পুলিশি টহল থেকে দূরের স্থানে কিংবা রাতের বেলা সুনসান জায়গায় আকস্মিকভাবে বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আগুনের এমন নাশকতা শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন-এমনটা আশাও করছেন না তারা। এর চেয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপে জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মলনে বলেছেন, “চোরাগুপ্তা হামলার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। আমরা ২৪ ঘণ্টাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সবাই নাশকতা বন্ধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি মনে করেন বাস ও পেট্রোল পাম্প মালিকদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা পালন করলে আগুন দেওয়ার ঘটনা কমে আসবে।
পুলিশের নজরদারি ও টহলের পাশাপাশি পেট্রোল পাম্প ও বাস মালিকদের কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। বলছেন, তারা নির্ধারিত দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি পেট্রোল পাম্প মালিকদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছেও বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার পুলিশের শীর্ষস্থানীয় এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাস ও পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে অবরোধের আগে ও পরে বাসে আগুন দেওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে কথা হলে তারা এগুলো শতভাগ বন্ধ করা কঠিন বলেই মন্তব্য করেন।
বাস ও পেট্রোল পাম্প মালিকরা বলছেন, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন যাতে নাশকতা এড়ানো যায়। তবে এ সংক্রান্ত পুলিশের অনেক প্রস্তাবই বাস্তবসম্মত নয়।
ঢাকার নয়াপল্টনে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর দীর্ঘদিন পর হরতাল ও অবরোধের টানা কর্মসূচি ফিরে এসেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, দেশজুড়ে দেড় শতাধিক গাড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। বাসে দেওয়া আগুনে একজন পুড়ে মারা গেছেন। এখনও অন্তত ছয়জন এসব ঘটনায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।
আগুনের নাশকতা প্রতিরোধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এসব বন্ধে কৌশল নির্ধারণে ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে বাস মালিক ও পেট্রোল পাম্প মালিক পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার রাজধানীতে এবার একটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, “শহরে যে পরিমাণ যানবাহন সে পরিমাণ পার্কিংয়ের জায়গা নেই। যদি ‘সিকিউরড’ জায়গায় পার্কিং ‘সিস্টেম’ থাকতো তাহলে এক জায়গায় রেখে নিরাপত্তা দিয়ে রাখতাম। কিন্তু গাড়িগুলো ছড়ানো ছিটানো থাকে আর তারা সুযোগটা নেয়।”
পাম্প থেকে খোলা পেট্রোল বিক্রিতে শর্ত ও নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ এলে তিনি বলেন, “বিভিন্ন কেমিক্যাল যেগুলো গার্মেন্টসে ব্যবহার করা হয়, দেখা গেছে তারা সেগুলো কোনোভাবে সংগ্রহ করে বিভিন্ন সামগ্রি মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করে।”
পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পাম্প থেকে খোলা তেল বিক্রি করা না হলেও শত শত খোলা পেট্রোল বিক্রির দোকান রয়েছে। এসব অবৈধ দোকান বন্ধ করলে পেট্রোল ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
খুচরা বিক্রি বন্ধের পাশপাশি পাম্পগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যব্স্থা মালিক পক্ষ থেকে করা হলেও পাম্পের আশেপাশে এলাকাভিত্তিক পুলিশ টহলের বিষয়টি একেবারে হচ্ছে না বলে দাবি তার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ পুলিশের কাছ থেকে অবরোধকেন্দ্রিক বেশ কিছু নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানান। তার মতে, লোকাল বাসের যাত্রীদের ছবি তুলে রাখাটা একবারে অসম্ভব। এটি বাস্তবসম্মতও নয়। কেননা যাত্রীরা ঘনঘন ওঠানামা করে। তবে সন্দেহজনক ব্যাগ নিয়ে ওঠা যাত্রীদের তল্লাশি করতে প্রতিটি বাস মালিককে বলা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তবে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বিষয়টির ব্যাপারে আমরা সতর্কভাবে কাজ করছি। অনেক জায়গায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে যারা একত্রে গাড়ি রাখছেন না তাদের বলা হয়েছে তারা যেন নিজেদের লোকজন লাগিয়ে নিরাপত্তার দেখভাল করেন। কোনো মালিক না করলে করার কিছু থাকে না।”
তার দাবি, সড়কের পাশে রাখা গাড়িতে (পার্ক করা) গাড়িতে আগুন কম দেওয়ার ঘটনা ঘটে। চলমান গাড়িতেই বেশি আগুন দেওয়া হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, মালিক পক্ষের সহযোগিতা থাকলে এবং যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো মেনে চললে পুরোপুরি না হলেও ধীরে ধীরে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা কমে আসবে।
তিনি জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর কারণে রাজধানীতে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা বেশ কমে গেছে।
তফসিল ঘোষণার পর ট্রেনসহ ১২ যানবাহনে আগুন
টাঙ্গাইলে নাশকতার আগুনে পুড়ল কমিউটার ট্রেন
মিরপুর বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (দারুস সালাম জোন) মফিজুর রহমান পলাশ মনে করেন, পুলিশের সতর্ক প্রহরার পাশাপাশি পরিবহন সংশ্লিষ্টরা নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব।
যাত্রীদের ছবি তোলা, বিচ্ছিন্নভাবে পার্কিং না করা, একত্রে গাড়ি রেখে পাহারার ব্যবস্থা করার বিষয়ে বাস মালিক পক্ষের অনীহা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।