সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের কোনো ভাবনা নেই।
Published : 06 Aug 2023, 07:26 PM
সুষ্ঠু নির্বাচনের কৌশল হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপার ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে পাঠানোর চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘রাতের ভোট’ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্বাচনে নিজেদের এই কৌশল জানালেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি অভিযোগ তুলেছিল, ব্যালট বাক্স রাতেই ভরে রাখা হয়েছিল, অর্থাৎ ভোট রাতেই হয়ে গেছে।
গত বছর জাপানের রাষ্ট্রদূত এই প্রসঙ্গে কথা বলার পর তা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তৈরি করেছিল।
এর মধ্যে বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বছরের ২৪ মে বলেছিলেন, “ভোট তার নিয়মানুযায়ী হবে, দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না-এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরে দায়িত্বে আসা বর্তমান ইসি সম্প্রতি যে কয়টি নির্বাচন কাগজের ব্যালটে করেছে, সেখানে সকালে কেন্দ্রে পাঠান হয়েছিল নির্বাচনী সামগ্রী। সবশেষ গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ব্যালট পেপার ভোরে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারের ‘অপব্যবহার’ ঠেকাতে কিছু কৌশল নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আলমগীর।
তিনি রোববার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “এবারও ব্যালট পেপারে নির্বাচন হবে। আগেও যেভাবে এগোনো হয়েছে, এবারও সেভাবেই হবে। ব্যালটে নির্বাচনে যাতে কোনো রকম অপব্যবহার না হতে পারে, সে জন্য আমাদের কিছু কৌশল আছে, সেগুলো আমরা প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।”
তিনি বলেন, “আমরা যতগুলো নির্বাচন ব্যালটে করেছি, ব্যালট পেপার সকালে পাঠানো হয়েছে। আমরা জাতীয় নির্বাচনে ক্ষেত্রেও হয়ত এ ধরনের চিন্তাভাবনা হতে পারে।
তবে যেসব কেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, সেখানে সকালে পাঠানো সম্ভবপর না হলেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আগের রাতেই পাঠাতে চায় ইসি।
আলমগীর বলেন, “যেগুলোতে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো সম্ভব, সেগুলোকে চিহ্নিত করা এবং যেখানে পাঠানো সম্ভব নয়, যোগাযোগ উন্নত নেই, সেখানে আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় রাতে ব্যালট পেপার পাঠাব। যাবে কোনো রকম পথে যেন মিসইউজ বা ছিনতাই না হতে পারে।”
ইসি সচিবের দায়িত্ব পালনের পর এখন কমিশনারের দায়িত্ব পালনরত আলমগীর বলেন, “যোগাযোগ যেখানে ভালো, ভোট ৪টায় (পাঠানো) শুরু করলে ভোট শুরু (সকাল ৮টা) হওয়ার আগেই পৌঁছাতে পারবে, সে সমন্ত কেন্দ্রে আমরা সকালে ব্যালট পাঠাই।”
এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এবার ৩০০ আসনেই ভোটগ্রহণ হবে ব্যালট পেপারে।
ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে এখনও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতভেদ কাটেনি। তার অবসানে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার উপর জোর দিয়ে আসছেন সিইসি।
সিসি ক্যামেরার চিন্তাভাবনা নেই
সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে ব্যবহার হলেও জাতীয় নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর।
তিনি বলেন, “(ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের) এ বিষয়টি আমাদের মধ্যে আলোচনাও হয় নাই তেমন। চিন্তা-ভাবনা নেই।
“কারণ জানেন যে ৩০০ আসনে যখন ভোট হয়, ৪ লাখ কেন্দ্র থাকে। সেখানে হয়ত বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র থাকবে, এতগুলো কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে তা দেখা কঠিন। আমরা সেক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা চিহ্নিত করে ফোর্স বাড়ানো ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশি সদস্য নিয়োগ করা হতে পারে।”
সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে অনিয়ম ঘটনার সম্ভাবনাও কমে আসে বলে মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “সবগুলো (দল) যদি অংশগ্রহণ করে, সেখানে এমনিতেই একটা ভারসাম্য থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে বরং তারাই শৃঙ্খলা রক্ষায় একটা ভূমিকা নেয়। কারণ তারা জানেন যে নির্বাচনে যদি কোনো পরিস্থিতির অবনতি হয়, বা ভণ্ডুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত
নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সব সময় স্বাগত জানানোর কথা বলেছেন মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলছি, বিদেশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক যতখুশি আসতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো লিমিটেশন করা নেই।
“যেটা আছে সেটা হলে তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে সেটা পাঠিয়ে দিই পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এরপর ভিসা দেওয়া হলে আমাদের তরফ থেকে আপত্তি থাকে না।”