তার পরামর্শ, সম্পর্ক গড়তে হবে মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে; না হলে সেই সম্পর্ক হবে ভঙ্গুর।
Published : 18 Dec 2023, 09:08 PM
ভারত বা বাংলাদেশের কোথাও সরকার পরিবর্তন হলেও দুই দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না–তেমন এক জায়গায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নেওয়ার কথা বলেছেন ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ।
দুদেশের সম্পর্কের নানা অগ্রগতির কথা তুলে ধরে সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা এসব অগ্রগতি অর্জন করেছি। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে কিংবা ভারতে সরকার পরিবর্তন হলে এগুলো বহাল থাকবে কি-না। এটাই হচ্ছে সম্পর্কের সঠিক পরীক্ষা।”
মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করার পরামর্শ দিয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, “এটা যদি কেবল ঢাকা কিংবা দিল্লির সরকার ও ক্ষমতাসীনদের কার্যক্রম হয়, তাহলে এটা ভঙ্গুর সম্পর্ক হিসেবেই থাকবে।
“কিন্তু আপনি যদি এটাকে মৌলিক বিষয়ের মধ্যে শেকড় গাড়া সম্পর্কে পরিণত করতে চান, তাহলে নাগরিক, অংশীজন হিসাবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, ক্ষমতার শীর্ষে যেই থাকুক না কেন, আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব। আমি মনে করি, এটাই হচ্ছে ভবিষ্যতের পথরেখা।”
মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ার জন্য দুদেশের সরকারের বাইরে অন্যদের সম্পৃক্ততার পরামর্শ দেন পঙ্কজ শরণ।
তিনি বলেন, “অংশীজন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, সমাজের অনেক পর্যায় থেকে পারে। কিন্তু আমাদের স্পষ্ট হতে হবে যে, সম্পর্কের সফলতার ক্ষেত্রে সরকার একমাত্র অংশীজন নয়।”
সরকারের বাইরে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী ও যুব সমাজ দিকে অংশীজনরা আসতে পারেন বলে মনে করেন পঙ্কজ শরন।
স্থল সীমান্ত চুক্তি, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত অগ্রগতি অর্জন করলেও পানিবণ্টন, দারিদ্র্য, অবৈধ অভিবাসন, আন্তঃসীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘কাজ অসম্পূর্ণ’ রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০১২-১৫ মেয়াদে ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব সামলানো এই কূটনীতিবিদ বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও এক প্রশ্নের উত্তর দেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে কাছ থেকে দেখা একজন হিসাবে বলব, আপনাদের নির্বাচনের জন্য শুভকামনা। আপনাদের প্রতিষ্ঠান আছে, গণমাধ্যম আছে, সবকিছু আছে। নিজেদের সর্বোচ্চটা করুন, নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং নির্বাচনে যে ফলাফল আসে গ্রহণ করুন।”
পঙ্কজ শরণ বলেন, “আমি মনে করি, পৃথিবীর কোনো দেশেরই বলা উচিত না অন্য কোনো দেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটা বাংলাদেশে বা ভারতে বা আফগানিস্তান কিংবা অন্য যে কোনো দেশ হোক।
“এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। না হলে স্বাধীনতা বা সার্বভৌম দেশের মর্মার্থটা কি? আমি বলব, বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবে, তারা কাজে নির্বাচন করবে এবং এটা প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত নেবে তারা কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে।”
তিনি বলেন, “এই প্রচেষ্টায় আমরা শুভকামনা জানাব। একটাই আশা, প্রক্রিয়াটা যেন জনগণের ইচ্ছানুসারে হয়, শান্তিপূর্ণ হয় এবং এটা যাতে স্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হয়।”
জহুর হোসেন চৌধুরী স্মারক বক্তৃতায় পঙ্কজ শরণের এই বক্তব্যের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ-ভারত: প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে রোল মডেল’।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্য আলোচক ছিলেন দিল্লিতে বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার তারিক এ করিম।