ভুটানের রাজার সফরে দুই দেশের সরকারের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি চুক্তি নবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
Published : 24 Mar 2024, 03:11 PM
চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক এবং রানি জেৎসুন পেমা।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সোমবার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানাবেন; সেখানে রাষ্ট্রীয় এই অতিথিদের দেওয়া হবে গার্ড অব অনার।
আওয়ামী লীগ নতুন মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফরে ঢাকা আসছেন ভুটানের রাজা। তার সঙ্গী হিসেবে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মন্ত্রী ও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও থাকছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সফরের প্রথম দিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন ভুটানের রাজা।
বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
পরদিন মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসের ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন জিগমে খেসার। সকালে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন তিনি। বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বুধবার পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন ভুটানের রাজা। এরপর বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে যাবেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে।
কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করতে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভুটানের রাজা। কুড়িগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকালে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। সেখানে গার্ড অব অনার দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে ভুটান, বার্ন ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশ
ভুটানের রাজার সফরে দুই দেশের সরকারের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি চুক্তি নবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সেগুলো হচ্ছে ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক স্মারক।
আর সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আগে যে চুক্তি রয়েছে, সেটি নবায়ন করা হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে।
“বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক কাজী রকিবুল হক এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কুড়িগ্রামে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটানকে ১৯০ একর জমি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে।
উপহার দেবে সরকার
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে।
প্রতিবছর ভুটানের ফরেন সার্ভিস অফিসারদের জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য দুটি আসন বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কারিগরী সহযোগিতা দেবে।
বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলে ভুটানের কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে ৩ বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
একইসঙ্গে ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার হিসেবে দেওয়া হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।