বঙ্গভবন ছেড়ে আবদুল হামিদ উঠবেন নিকুঞ্জের বাসায়

ইতোমধ্যে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2023, 05:27 PM
Updated : 22 April 2023, 05:27 PM

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন ছেড়ে যাচ্ছেন।

আগামী সোমবার বেলা ১১টায় নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ হবে বঙ্গভবনে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে।

দায়িত্ব হস্তান্তরের পর বঙ্গভবন ছেড়ে আবদুল হামিদ উঠবেন রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজের বাড়িতে। আসবাবপত্রসহ সব সরঞ্জাম এরইমধ্যে সেই বাসায় ওঠানো শুরু হয়েছে।

১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়কে তিন কাঠা জমি পান আব্দুল হামিদ। ২০০০ সালের শেষ দিকে সেখানে বাড়ির কাজ ধরেন। কয়েক বছর কাজ শেষে তৈরি হয় তিনতলা বাড়ি।

রাষ্ট্রপতি প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেয়াদ শেষে নিকুঞ্জের বাসায় উঠবেন। নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানের পর বঙ্গভবনে তার বিদায় অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানের শেষে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও রাষ্ট্রীয় প্রটোকল অনুযায়ী নিকুঞ্জের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে।”

নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় ইতোমধ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে।

খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সব ধরনের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

নিয়ম অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতিকে চেয়ারে বসিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রপতিকে পরিচয় করিয়ে দেবেন আব্দুল হামিদ। এরপর ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে তাকে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড দেবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট।

অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে সাজানো একটি গাড়ি। বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তারা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি ধরে দাঁড়াবেন। তারপর গাড়ি সামনে অগ্রসর হবে।

বঙ্গভবনের ভেতরে সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিজিআর সদস্যরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেবেন এবং আবদুল হামিদ বঙ্গভবনকে বিদায় জানিয়ে একটি খোলা জিপে করে সেখান থেকে বের হবেন।

গত মার্চে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় রাষ্ট্রপতি হামিদ তার অবসরে আড্ডা দিতে সাংবাদিকদের নিকুঞ্জের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখেন।

সে সময় তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে তিনি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে সময় কাটাবেন। আর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড লেখার কাজ শেষ করবেন।

এবারের একুশে বইমেলায় আবদুল হামিদের ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ বইটি প্রকাশিত হয়, যেখানে তার শৈশব থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য এসেছে। এর পরের গল্প পাওয়া যাবে আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ডে।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে সাতবার জাতীয় সংসদে কিশোরগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। পালন করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব।

আবদুল হামিদ প্রথম দফায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয়বারের মত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। রোববার তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

বাংলাদেশে এত দীর্ঘসময় রাষ্ট্রপতি থাকার রেকর্ড আর কারও নেই। বাংলাদেশের আইনে দুই মেয়াদের বেশি কারও রাষ্ট্রপতি থাকার সুযোগও নেই।  

কী কী সুযোগ সুবিধা পাবেন?

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পূর্ণ করার পর আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, চিকিৎসাসুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ।

‘রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইনে’ সাবেক রাষ্ট্রপতিরা কী কী সুযোগ-সুবিধা, কীভাবে পাবেন তা নির্ধারণ করা আছে।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে সর্বশেষ যে মাসিক বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা পাবেন আমৃত্যু।

রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা গ্রহণ করে মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী অথবা ক্ষেত্র অনুযায়ী বিপত্নীক স্বামী তার প্রাপ্য অবসর ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে মাসিক ভাতা পাবেন আমৃত্যু।

অবসর ভাতা পাওয়ার যোগ্য একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) নিতে পারেন।

‘দ্য প্রেসিডেন্টস (রেম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন ব্যক্তিগত সহকারী এবং একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন আবদুল হামিদ। একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসাসুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসাসুবিধা পাবেন।

আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট, দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় থাকার সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ। তিনি দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন, এর পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করে দেবে। 

বর্ণাঢ্য এক জীবন

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্ম নেন আবদুল হামিদ। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে সে সময়ের ময়মনসিংহ-১৮ (বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৪) আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশ স্বাধীন করতে অস্ত্র ধরেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৩ সালে আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচন, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ। নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার হন।

দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালের ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি; ২৪ এপ্রিল শপথ নেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন। রোববার তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

বাংলাদেশে এত দীর্ঘসময় রাষ্ট্রপতি থাকার রেকর্ড আর কারও নেই। বাংলাদেশের আইনে দুই মেয়াদের বেশি কারও রাষ্ট্রপতি থাকার সুযোগও নেই। 

পুরনো খবর

Also Read: বইমেলায় প্রকাশ হল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মজীবনী

Also Read: অবসরে গেলে যা পাবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

Also Read: বিদায় নিয়ে কী করবেন না, জানালেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

Also Read: মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদের আগামীর প্রত্যাশা

Also Read: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত

Also Read: ইতিহাস গড়ছেন রাষ্ট্রপতি হামিদ