“বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসীদের দল, জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল; তাদের কথা এ দেশের মানুষ শোনে না,” বলেন তিনি।
Published : 12 Nov 2023, 07:01 PM
দেশে অবরোধের মধ্যে লন্ডনে বসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “সামনে আসার সাহস নাই। এখন তারা কোনো গলি থেকে বের হয়ে বিভিন্নভাবে বাসের ভেতরে, স্কুটারে, অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিচ্ছে, মানুষ পোড়াচ্ছে।"
চোরাগোপ্তা মেরে যেমন সরকার হটানো যায় না, তেমনি মানুষ যদি সঙ্গে না থাকে তাহলে আন্দোলনও হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, “এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া জেলে। আমি দয়া করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি- আমার ক্ষমতাবলে। আর তার ছেলে তারেক জিয়া রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে লন্ডন গিয়ে বসে আছে। এত টাকা কোথা থেকে পায়?
“জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছে। পালিয়ে থাকে লন্ডনে। ওখান থেকে আগুন জ্বালাতে বলে। আরে ব্যাটা তোর যদি সাহস থাকে তাহলে বাংলাদেশে ফিরে আয়, আমরা একটু দেখি।"
রোববার বিকালে নরসিংদীর মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে দুপুরে নরসিংদীর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। পরে সেখানে এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
জনসভায় তিনি বলেন, “আমি জানি খালেদা জিয়া বা এরা (বিএনপি) চায় না এদেশে শিক্ষা হোক। এরা যদি চাইতো আজকে নভেম্বর মাসে পরীক্ষার সময়…সামনে নির্বাচন, আগেভাগে পরীক্ষা দেবে। সেই ব্যবস্থা যখন নিচ্ছে- তখন বিএনপি দেয় অবরোধ, হরতাল, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারে।
“সামনে আসার সাহস নাই। এখন তারা কোন গলি থেকে বের হয়ে বিভিন্নভাবে বাসের ভেতরে, স্কুটারে, অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিচ্ছে, মানুষ পোড়াচ্ছে।"
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, “ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা বন্ধ করে অবরোধ করে তারা কী করতে পারবে? সরকার হটাবে। কীভাবে সরকার হটাবে? চোরাগোপ্তা মেরে সরকার হটানো যায় না। মানুষ যদি সঙ্গে না থাকে তাহলে আন্দোলন হয় না।
“বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসীদের দল, জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল। তাদের কথা এ দেশের মানুষ শোনে না। তাদের কিছু লোক আছে, তারাই নাচানাচি করে।"
ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ সদস্য আমিরুল হক পারভেজকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
সেই প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, “পুলিশকে যেভাবে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে (বিএনপি), এটাতো চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন তারা করে যাচ্ছে। বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস যুগ যুগ ধরে মানুষ দেখেছে।"
তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন কীভাবে ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনের হাসপাতালে বোমা মেরে নারী ও শিশু হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার চ্যালাফলারা অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীর উপর আক্রমণ করেছে। তাহলে ওরা ইসরায়েলের জারজ সন্তান কিনা সেটাই আমার জিজ্ঞাসা। ওরাতো তাদের কথাই মানতেছে।
“আপনাদের আহ্বান করব, অগ্নিসন্ত্রাসীদের যাকে যেখানে পাবেন- আগে তাকে ধরেন। কেউ যদি ওরকম অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন দিতে যায়, ওগুলোকে ধরে আগে ওই আগুনে ফেলে দেবেন; তাহলে যদি ওদের শিক্ষা হয়- না হয় শিক্ষা হবে না। দুই একটা চোরাগোপ্তা হামলা করে মানুষ মেরে ওরা এদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।"
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে তা কমিয়ে ৩ হাজার মেগাওয়াটে নামানো হয়েছিল।
“মানুষ সামনের দিকে এগোয়, কিন্তু পেছন দিকে যায়- এটা তো জানতাম না। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানেই হলো পেছনে যাওয়া, আরও খারাপ অবস্থায় যাওয়া।"
বিদ্যুৎ ব্যবহারে জনগণকে মিতব্যয়ী হওয়ার অনুরোধ করেন সরকারপ্রধান।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পোশাক শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এবার বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে, ৫৬ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে। তাহলে তাদের আপত্তিটা কোথায়? গত ১৪ বছরে শ্রমিকদের বেতন ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। আমরা করি জনগণের জন্য কাজ, আর বিএনপি-জামায়াত জোট জানে ধ্বংস করা।”
জনতার উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আপনারা নিজেরা চিন্তা করে দেখেন- যখন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, নৌকা ক্ষমতায় এসেছে, তখন আপনার এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।
“বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। সেই অনুযায়ী আপনাদের জন্য কাজ করছি। আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না? আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন।”
এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাত তুলে সমর্থন জানান। তখন শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনি- এরা যেন আর কখনও বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।"
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রধান বলেন, “আমি যাকে প্রার্থী দেব, নৌকা মার্কা দেব; ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জন্য কাজ করতে হবে।”
একপর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান/ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’ আবৃত্তি করেন বাংলায় স্নাতকধারী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো, মায়ের মতো নিজের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েও বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করব।"
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।