প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করার পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) আলাপ-আলোচনা করার জন্য সবসময় নির্দেশ দেন, যাতে পরিস্থিতি শান্ত থাকে, সেটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।”
Published : 01 Nov 2023, 03:57 PM
সংলাপ বা আলোচনার দরজা ‘বন্ধ হয়নি’ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সাংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে আওয়ামী লীগ যে কোনো আলোচনায় রাজি। তবে আলোচনা শর্তহীন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা ‘নাকচ’ করার পরদিন বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সব সময় সংলাপকে স্বাগত জানিয়ে এসেছে।”
এদিন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক তার সঙ্গে দেখা করতে যান। এরপর সাংবাদিকদের সামনে আসেন মন্ত্রী।
কুকের সঙ্গে আলোচনায় ‘সংলাপ প্রসঙ্গ এসেছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনি (কুক) বলেছেন, সংলাপ হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার। আমরা বলেছি, ‘আমরা সবসময় সংলাপকে স্বাগত জানাই। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত বলে আমরাও মনে করি’।
“সংবিধান আমাদের যেভাবে কাঠামো করে দিয়েছে, সেই অনুসারে সংলাপ করতে হবে। এটা সারাহ কুকও স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনিও বলেছেন, সংলাপের বিকল্প নেই। সব অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার কথা তিনিও বলেছেন।”
তবে কুক এ বিষয়ে কোনো জোরাল অবস্থান নেননি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এটা কোনো পরামর্শ না, এটা আমাদের মধ্যে আলাপচারিতা হয়েছে।”
আগের দিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরোধে উদ্ভুত রাজনৈতিক সংকটের সমাধানে ‘নিঃশর্ত সংলাপে’র আহ্বান জানান।
কয়েক ঘণ্টা পরে গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “খুনিদের সঙ্গে কীসের আলোচনা, কীসের সংলাপ। কোনো সংলাপ হবে না। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা দেশবাসীও মেনে নেবে না। যদি আলোচনা করতে হয়, ডিনার খেতে হয়। তা পিটার হাস নিজেই করে খাক।”
আওয়ামী লীগ প্রধান এও বলেন, “ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করছেন? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।”
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ হল শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু করতে হবে। সংবিধান মাথায় রেখেই আমরা আলোচনা করতে চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, সহিংসতা চাই না। তিনি আলাপ-আলোচনা করার জন্য সবসময় নির্দেশ দেন, যাতে পরিস্থিতি শান্ত থাকে, সেটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।”
সরকার সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেবে কি?
এই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কোনো দল সংলাপ চাইলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। যারা আসবে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।
“তবে শর্তহীনভাবে আসতে হবে।... সংবিধানের বাইরে যদি কেউ কিছু বলেন, তাহলে তো সেটা হবে না।”
অনেকেই আসছেন এবং তাদের প্রয়োজনে ফোন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা (বিএনপি) তো বলতে পারেন, আমরা কথা বলতে চাই, আমরা হরতাল চাই না। এটা তো তারা বলেননি কোনো দিন। আমরা তো বলছি, দরজা তো বন্ধ হয়নি। আমরা যে কোনো আলোচনায় রাজি আছি।”
বিএনপিকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, “যে দলের প্রতি দেশের জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, নিশ্চিতভাবে বলা যায়, সেই দল নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না। এ জন্য তারা সংলাপ চায় না, সহিংসতা চায়। সহিংসতা করে তারা একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায়।”
অবরোধে যানবাহনে আগুন দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “চোরাগুপ্তভাবে বাসে আগুন ধরানো, এটা তাদের (বিএনপি) প্র্যাকটিস। যেখানে আগুন ধরাবে, সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যে ন্যস্ত দায়িত্ব, সেটা তারা পালন করবেন।”
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরাতে যুক্তরাজ্যের এসওপি হবে
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) সইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ইউরোপের সঙ্গে এসওপি হয়েছে, যারা অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করেন, তাদের কীভাবে ফিরিয়ে দেবেন সেজন্যই একটি এসওপি সই হয়েছিল।
“তারা (যুক্তরাজ্য) ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসবেন, যে কারণে তাদের সঙ্গেও একটি এসওপি করার কথা বলেছেন। আমরাও বলেছি, খুব শিগগিরই আমরা এই এসওপিতে সই করব।”
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এসওপি সই হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের চেষ্টা করব। তারা কতখানি করবেন, সেটা তারা জানেন।”