শারদীয় দুর্গোৎসবে দেশের স্থায়ী-অস্থায়ী প্রতিটি মন্দির-মণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার এবং দ্রুত সংখ্যালঘু কমিশন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
এছাড়া পূজা উপলক্ষে অষ্টমী থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত তিন দিন সরকারি ছুটির দাবি আবারও তুলে ধরেছে সংগঠনটি। সংগঠনের মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ যেন ‘সবার জন্য সমান’ হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এই চার দফা দাবি ঘোষণা করে।
দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতনের 'শিকার হচ্ছেন' অভিযোগ করে পলাশ কান্তি দে বলেন, "এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে হিন্দু সম্প্রদায় এখন তাদের বাড়িঘর, নারী, মন্দির ও জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে। বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে; তাদের মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর করা হচ্ছে।"
২০ অক্টোবর পূজা শুরু হতে যাচ্ছে জানিয়ে সরকারি ছুটি একদিনের বদলে তিনদিন করার দাবি তুলে ধরেন তিনি।
পলাশ বলেন, "দুর্গাপূজায় হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার। কারণ ৫ দিনের দুর্গাপূজায় মাত্র ১ দিন সরকারি ছুটি। যার কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে আনন্দ ও ধর্মীয় যজ্ঞ শেষ করতে পারে না।"
বছরের পর বছর ৩ দিনের সরকারি ছুটি চেয়েও 'লাভ হচ্ছে না' মন্তব্য করে পলাশ বলেন, "আমরা প্রতিবারই স্মারকলিপির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি, দুর্গা পূজায় ৩ দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) সরকারি ছুটি করার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর আজও পাই নাই।"
দেশের প্রতিটি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্দির ও পূজা মণ্ডপে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করার আহবান জানান তিনি।
পলাশ বলেন, "আমরা ২০২৩ সালের শারদীয়া দুর্গাপূজা নিয়ে শঙ্কা বোধ করছি। বিগত তিন বছরের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায় যে দুর্গাপূজা নিয়ে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, পূজা যত ঘনিয়ে আসবে মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা তত বাড়বে।"
তিনি বলেন, "আরও বেশি বেদনাদায়ক হল মন্দির প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় বিচারহীনতা এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। কেন বার বার এমন হচ্ছে, এর পিছনে কাদের স্বার্থ আছে, এর কোন উত্তর পাওয়া যায়নি আজও।"
এছাড়া, ‘ভুয়া ফেইসবুক আইডি ব্যবহার করে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে’ নড়াইলের লোহাগড়ার আকাশ সাহাকে আটক করার পর এখনও তার জামিন হয়নি জানিয়ে হিন্দু মহাজোটের নেতা বলেন, "এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার জন্য সমান প্রয়োগের দাবি জানাই।"
দুর্গা পূজায় তিন দিন ছুটির দাবি পূরণসহ অন্যান্য বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না এলে আগামী ১৩ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি প্রভাস চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সোনালী দাস, রনজিত কুমার মৃধা, আশীষ বাড়ই, পংকজ হালদার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)