সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের আবেদনে এই সময় দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 07 Aug 2022, 05:14 PM
ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকের চাপায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সড়কে জন্ম নেওয়া সেই শিশুর কল্যাণে পরিবারকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আরও এক মাস সময় পেয়েছে সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড।
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের এক আবেদনের শুনানি শেষে রোববার বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে এ বিষয়ে করা রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন; রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
গত ১৯ জুলাই শিশুর চিকিৎসা ও কল্যাণে তার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
পাশাপাশি শিশুটিকে দেখভালের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই কমিটিকে শিশুটির সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর অধীনে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডকে তাৎক্ষণিকভাবে এই অর্থ দিতে বলা হয়।
সেই সঙ্গে শিশুটির ভরণপোষণ ও তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে না- সেই প্রশ্নে রুল জারি করেছে আদালত।
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ওই ট্রাকের মালিককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন বলেন, “ট্রাস্ট্রি বোর্ড আদালতে বলেছে- পাঁচ লাখ টাকা দিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই, তবে এর জন্য তারা সময় চায়, এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশ দিয়েছে যে, এক মাসের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আদালত বলেছে- এই পাঁচ লাখ টাকা আপাতত বাচ্চাটির চিকিৎসার জন্য দেওয়া হচ্ছে, এটা ফাইনাল না, মামলার শুনানির পর নির্ণয় করা হবে মা-বা মারা যাওয়ায় বাচ্চাটির যে ক্ষতি হয়েছে, এর জন্য কী করা যায়।”
গত ১৬ জুলাই ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনায় ত্রিশালের রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার স্ত্রী রত্না বেগম (৩০) এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন (৬) মারা যায়। মৃত্যুর আগে রত্না বেগম সড়কেই এক নবজাতকের জন্ম দেন।
জাহাঙ্গীর আলম অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে ত্রিশালে এসেছিলেন, সঙ্গে তাদের মেয়ে সানজিদাও ছিল।
খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় ময়মনসিংহগামী ট্রাকটি তাদের চাপা দেয়। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় সন্তানের জন্ম দেন রত্না। তার পরপরই তিনি মারা যান। নবজাতকটি বেঁচে গেলেও তার ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে যায়।
ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ১৭ জুলাই ত্রিশাল থানায় একটি মামলা করেন। প্রথমে তিনি রত্নার রেখে যাওয়া নবজাতকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। একটি বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর গত ১৯ জুলাই শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর গত ২৯ জুলাই শিশুটির দাদা বাবুল ও অন্য স্বজনরা রাজধানীর আজিমপুরে শিশুদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ছোটমণি নিবাসে নিয়ে যান মেয়েটিকে। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছে শিশুটি।
পুরনো খবর
সড়কে ভূমিষ্ঠ সেই শিশুর পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ
ময়মনসিংহের সড়কে ভূমিষ্ঠ সেই নবজাতক ‘শঙ্কামুক্ত নয়’
ময়মনসিংহে ৩ মৃত্যু: ‘অবৈধ’ ট্রাকটি ছিল ‘লাইসেন্সবিহীন’ চালকের হাতে
ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় ৩ মৃত্যু: সেই চালক গ্রেপ্তার
সড়কে ভূমিষ্ঠ সেই শিশুকে লালনপালন করবেন দাদা-দাদি
সড়কে ঝরল ৩ প্রাণ: ট্রাকচাপায় মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সন্তানের জন্ম