ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকের চাপায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সড়কে জন্ম নেওয়া সেই শিশুর জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 19 Jul 2022, 08:01 PM
সেইসঙ্গে শিশুটিকে দেখভালের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই কমিটিকে শিশুটির সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।
এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল হক।
পরে আইনজীবী মাহসিব বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর অধীনে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাস্ট্রি বোর্ডকে আদালত বলেছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ওই শিশুর পরিবারকে দিতে হবে।
সেই সঙ্গে শিশুর ভরণপোষণ ও তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে না- সেই প্রশ্নে রুল জারি করেছে আদালত।
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ওই ট্রাকের মালিককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনায় ত্রিশালের রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার স্ত্রী রত্না বেগম (৩০) এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন (৬) মারা যায়। মৃত্যুর আগে রত্না বেগম সড়কেই এক নবজাতকের জন্ম দেন।
জাহাঙ্গীর আলম অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে ত্রিশালে এসেছিলেন, সঙ্গে তাদের মেয়ে সানজিদাও ছিল।
খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় ময়মনসিংহগামী ট্রাকটি তাদের চাপা দেয়। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় সন্তানের জন্ম দেন রত্না। তার পরপরই তিনি মারা যান। নবজাতকটি বেঁচে গেলেও তার ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙে গেছে।
ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু রোববার রাতেই ত্রিশাল থানায় একটি মামলা করেন। তিনি এবং তার স্ত্রী এখন রত্নার রেখে যাওয়া নবজাতকের দায়িত্ব নিয়েছেন।
বাবলু ও তার স্ত্রী সুফিয়া আক্তার দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের আরেক ছেলে ২০০৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ অবস্থায় শিশুটির ভরণপোষণের জন্য সরকার ও বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে সোমবার জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন।