চলতি বছর সরকার এই ভাষা সংগ্রামীকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
Published : 26 Mar 2023, 03:52 PM
ভাষা সংগ্রামী, লেখক খালেদা মনযূর-ই-খুদা মারা গেছেন; তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
শনিবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
খালেদা মনযূর-ই-খুদার মেয়ে শ্যামা-ই-খুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক মাস আগেই তো আম্মা একুশে পদক পেয়েছেন। এই সম্মানটা পেয়ে আম্মা ভীষণ খুশি হয়েছিলেন।
“বেশ কিছুদিন থেকেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু মৃত্যুটা স্বাভাবিকই হয়েছে। তেমন কোনো কষ্ট পাননি।”
রোববার সকালে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে খালেদা মনযূর-ই-খুদাকে।
শ্যামা বলেন, “আম্মাকে তার মায়ের কবর, মানে আমার নানীর কবরে শায়িত করা হয়েছে। আমার নানী নুরুন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী। তিনিও লেখক ছিলেন। তার কবরেই আম্মাকে সমাহিত করা হয়েছে।”
ভাষা সংগ্রামী খালেদা মনযূর-ই-খুদা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। খালেদা ফেন্সি খানম নামেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন।
ড. কুদরত ই খুদার ছেলে মনযুর-ই-খুদাকে বিয়ের পর তিনি খালেদা মনযূর-এ-খুদা নামে পরিচিতি পান।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তিনি আহত ভাষা সংগ্রামীদের রক্ত দেন। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন মিছিলে তার সরাসরি অংশগ্রহণের ফটোগ্রাফও পাওয়া যায়।
বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ‘বিজয়াঙ্গন‘মিউজিয়ামে রাখা একটি ছবিতে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে কালো বই হাতে সাদা শাড়ি পরা ফেন্সি খানমকে জাহানারা ইমামের সঙ্গে দেখা যায়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বার্তা আসতেই তিনি স্কুলের ইউনিফরম ও জামা দিয়ে জাতীয় পতাকা তৈরি করে পল্টনের আওয়ামী লীগ অফিসে উত্তোলন করেন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর।
রোববার এক শোকবার্তায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর এই ভাষা সংগ্রামীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তানের বেতার ‘শিল্পী’ এবং টেলিভিশনে ‘মহিলা অঙ্গন’ নামে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন খালেদা মনযূর-ই-খুদা ।
ওই সময়ে নারীদের জন্য তিনি ‘গৃহিণী শিল্পকলা একাডেমী’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
ঢাকায় দর্শনে লেখাপড়া শেষ করে লন্ডনে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়েন খালেদা মনযূর-ই-খুদা। পরে কানাডায় ‘ধর্মের ইতিহাস ও দর্শন’ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন।
‘চীনকে চিনে এলাম’, ‘সভ্য দেশের বুনো কাহিনী আমেরিকার কাল্ট’, ‘আপন ভুবনে’ তার লেখা বইয়ের মধ্যে কয়েকটি।
বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য খালেদা মনযূর-ই-খুদা ২০০৫ সালে লেখিকা সংঘ থেকে স্বর্ণপদক পান। চলতি বছর সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
খালেদা মনযূর-ই-খুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ অর্থায়নে মনযুর-ই-খুদা স্বর্ণপদক চালু করেছেন।
এক ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।