এলাকায় ‘ফেইসবুক মাস্টার’ হিসেবে পরিচিত পঞ্চম শ্রেণি পাস এই ব্যক্তিকে গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Published : 27 Jan 2024, 07:46 PM
গাইবান্ধা সদর উপজেলার একটি গ্রাম থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলেছে, ওই ব্যক্তি ঢাকার একটি থানার ওসির নামে ফেইসবুক আইডি খুলে ৭৭১ নারীর সঙ্গে নিয়মিত আলাপ জুড়েছিলেন।
সাইবার প্রতারণার অভিযোগে শুক্রবার গ্রেপ্তার আনোয়ার হোসেন ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারে নারীদের সঙ্গে আলাপকালে কারও কারও সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা ও ছবি আদান-প্রদান করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তুলে ধরেছে পুলিশ। এ ব্যক্তি কারও কারও কাছ থেকে টাকাও দাবি করেন।
ওসি ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, অভিনয় শিল্পী, পুলিশ কর্মকর্তাদের নামে ফেইসবুকে আইডি খুলে বসেছিলেন।
এরমধ্যে ঢাকার তেজগাঁও থানার ওসি মো. মহসিনের নামে খোলা আইডি থেকে ৭৭১ জন নারীর সঙ্গে নিয়মিত আলাপ জুড়েছিলেন বলে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) লিটন কুমার সাহা।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার ৩০ বছরের আনোয়ারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।
বলা হয়, পঞ্চম শ্রেণি পাস হলেও ইউটিউব দেখে ফেইসবুকের অলি-গলি সব চিনেছিলেন আনোয়ার, যে কারণে পরিচিতরা তাকে ‘ফেইসবুক মাস্টার’ নাম দেয়। গাইবান্ধা সদরে ইসলাম প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করেন আনোয়ার। তার বাড়ি সদর থানার খোলাবাড়ি গ্রামে। তেজগাঁও থানার একটি বিশেষ টিম শুক্রবার তাকে গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর তার কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান, তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, অভিনেতা শান্ত খান, অভিনেতা ও মডেল আব্দুন নুর সজল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ফেইসবুকের আইডি পাওয়া যায়। এর মধ্যে নসরুল হামিদ ও তারেক রহমানের নামে করা ফেইসবুক আইডি ‘ডিজঅ্যাবল’ অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে তার নামে ভুয়া একটি ফেইসবুক আইডি চালিয়ে আসছেন। সেই আইডি থেকে ওসি সেজে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে নারীদের সঙ্গে আলাপ করতেন। কারও কারও সাথে আপত্তিকর কথাবার্তা ও ছবি আদান-প্রদান করেছেন। আবার কারও কারও কাছ থেকে টাকাও দাবি করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিরপুর থানার ওসি থাকা অবস্থায় মহসিন ওই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে গত ২২ জানুয়ারি তেজগাঁও থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এরপর আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আনোয়ারের পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। ইউটিউব দেখে দেখে ফেইসবুকের বিভিন্ন কৌশল শেখেন। ফেইসবুক সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও দিতেন পরিচিতদের।
তিনি বলেন, ফেইসবুক আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করা, পেইজ ভেরিফিকেশন, রিপোর্ট কিংবা স্ট্রাইক খাওয়া পেইজ রিকভারিসহ ফেইসবুকের যেকোন সমস্যায় স্থানীয়রা তার দ্বারস্থ হতেন। খোলাবাড়ি গ্রাম ও দাশ বেকারি মোড় এলাকায় তিনি ‘ফেইসবুক মাস্টার’ নামেই পরিচিত।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে আনোয়ার বলেছে, যখন কেউ ফেইসবুক আইডির সমস্যা নিয়ে তার দ্বারস্থ হতেন তখন তিনি এসব আইডি উদ্ধার করে পরে নাম পাল্টিয়ে ব্যবহার করতেন। এভাবে তার অনেকগুলো আইডি হয়েছে। এসব ভুয়া আইডি রিপোর্ট করে বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবারও তা রিকভার করে ফেলেন আনোয়ার, যোগ করেন ওসি মহসিন।
ঢাকার এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তার নামে আনোয়ার যে আইডি খুলেছেন সেখানে নিয়মিত ছবি ও পোস্ট দিতেন। ওসি মহসিনের আসল পেইজ থেকে কপি করে সেগুলো নিজের ভুয়া পেইজে পোস্ট করতেন আনোয়ার।
তার ভাষ্য, ওই আইডি দিয়ে ৭৭১ জন নারীর সঙ্গে বন্ধু পাতিয়ে তিনি মেসেঞ্জারে নিয়মিত আলাপ করতেন। নারী বন্ধুদের তালিকায় শিক্ষার্থী, গৃহিণী, প্রবাসী, মডেল সবাই আছেন। ম্যাসেঞ্জারে কথা বলার পরে কারও সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপেও আলাপ করেছেন। তবে কখনো ভিডিও কলে আসতেন না তিনি। কেউ তাকে ভিডিও কলে দেখতে চাইলে কিংবা সন্দেহ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে দিতেন আনোয়ার।
ওসির দাবি, আনোয়ার একেক আইডি দিয়ে একেক ধরনের অপকর্ম করতেন। চাঁদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের নামে তিনি যে আইডি খুলেছেন সেখানে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে ‘নায়িকা’ বানানোর লোভ দেখাতেন। নায়িকা হওয়ার জন্য অনেক মেয়েরা তার কাছে ছবি পাঠিয়েছেন।