আফতাবনগরে নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি কুকুরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে থানায় জিডিও হয়েছে। তবে নিরাপত্তাকর্মীদের দাবি, ট্রাক চাপায় মারা গেছে সেটি।
Published : 06 Dec 2023, 10:20 PM
মাটি চাপা দেওয়া একটি কুকুরের পাশে একজন তরুণীর কান্নার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনাটি রাজধানীর আফতাবনগরের। সেই কুকুরটিকে দেখাশোনা করতেন সেই তরুণী ও তার স্বামী।
তাদের অভিযোগ, সেই আবাসিক এলাকার নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী ও আনসারের পোশাক পরা সদস্যরা কুকুরটিকে পিটিয়ে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রেখেছে।
এ নিয়ে বাড্ডা থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার পর পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার কথা জানিয়েছে।
তবে নিরাপত্তাকর্মীদের প্রধানের দাবি, প্রাণীটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
অভিযোগকারী রোমানা আফরোজ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি আফতাবনগরে ১০টির মতো কুকুরকে দেখাশোনা করেন; চিকিৎসা ও খাবারের দায়িত্বও পালন করেন।
সেই দলের মধ্যে এক বছর বয়সী কুকুর ছানাটির নাম দেওয়া হয়েছিল কুকি। এটিই ছিল সবচেয়ে ছোট, আর আদরেরও।
রোমানা সাধারণ ডায়েরিতে লেখেন, আফতার নগর সোসাইটির নিরাপত্তা কর্মী ও আনসারের পোশাক পরা কর্মীরা প্রায় সময়ই কুকুরগুলোকে বিনা কারণে লাঠি, ইট ও বুট জুতা দিয়ে আঘাত করেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে আনসার ও নিরাপত্তা সদস্যরা তাকে হুমকিও দেন।
তিনি জানান, বুধবার সকাল ৭টার দিকে কুকুরগুলোকে খাওয়াতে গিয়ে দেখেন বেল্ট পরানো একটি কুকুর নেই। এ নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের জিজ্ঞেস করলে প্রথমে তারা এ বিষয়ে কিছু না জানার দাবি করে। পরে নিরাপত্তা প্রধান জানান, গত রাত সোয়া ১১টার দিকে ট্রাক চাপায় একটি কুকুর মারা গেছে।
এরপর খোঁজাখুঁজি করে রোমানা কুকুরটিকে এম ব্লকের পেছনে কুকুরটিকে মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় পান। কিন্তু এর গায়ে ট্রাক চাপার মতো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এর গলায় বেল্টটাও খোলা ছিল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রোমানা বলেন, “আমার ধারণা পরিকল্পিতভাবে কুকুরটিতে হত্যা করে ট্রাক চাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।”
এমন ধারণা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা তো অস্বীকার করেছিল। পরে সিকিউরিটি গার্ডদের প্রধান তরিকুল ইসলাম অনেক কথা বলার পর প্রায় তিন কিলেমিটার দূরে কুকুরটিকে মাটিতে পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করেন।
“পরে মরদেহ উঠিয়ে দেখা দেখি এর শরীরে ট্রাকে চাপা পড়ে নিহত হওয়ার মতো কোনো আলামত নেই।”
রোমানার স্বামী উদাশ শর্মা জানান, মাটিচাপা দেওয়ার আগে কুকুরের গলার বেল্ট খুলে ফেলা হয়েছিল।
তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেইসবুকে লিখেন, “এক বছরের একটা বাচ্চা কয়েক মণ ট্রাকের নিচে পরলে ওর শরীরের কোনো না কোনো অংশ থেঁতলে যাওয়ার কথা। অথচ ওর প্রত্যেকটা দাঁত থেকে শুরু করে জিহ্বা, কান সব অক্ষত আছে৷
“শুধু মাথার এক পাশে একটা আঘাতের চিহ্ন, যেখান থেকে রক্ত বয়ে মুখে লেগে গেছে। পুরো শরীরের আর কোথাও বিন্দুমাত্র কোনো কাঁটাছেড়া নাই। ভাঙা কিংবা থেঁতলানোও না কোথাও।”
এই আঘাত নিয়ে তিনি বলেন, “কেউ লাঠি দিয়ে সজোরে বাড়ি মারলে যেমনটা হয়। একটা ট্রাক ওর মাথার উপর দিয়ে গেলে কোনোভাবেই এই একটা পার্টিকুলার ও স্পেসিফিক আঘাত হয়ে পারে না।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিটফোর ডটকমকে জানান, তারা এই অভিযোগের বিষয়ে জানেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
আফতাব নগরের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রধান তরিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ট্রাকের চাপায় একটি কুকুর মারা যাওয়ার কথা তাকে একজন গার্ড জানান।
তিনি বলেন, “এই তথ্য জানার পর আমি বলি, যদি পোষা কুকুর হয় তাহলে মালিক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। কিস্তু প্রায় দুই ঘণ্টা পরেও মালিক না আসায় দূরে মাটিতে পুঁতে রাখার জন্য নির্দেশ দেই।”
কুকুরদের মারধর বা কারো প্রতি খারাপ আচরণের অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবিও তরিকুলের।