‘বিয়ে-সন্তান অস্বীকার’: সাবেক এমপি আরজুর অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে আরজু জামিন চাইলে বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 12:56 PM
Updated : 13 March 2023, 12:56 PM

নাম-পরিচয় গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে ও সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করার মামলায় অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন পাবনা ২ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু।

সোমবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম সামছুন্নাহার এ আদেশ দেন।

এদিন কারাগারে আটক আরজুর পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে তাকে পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত অন্তবর্তী সময়ের জন্য জামিন দেন বিচারক বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আসগর স্বপন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকমকে তিনি জানান, বাদী পক্ষের আইনজীবী জামিনের শুনানিতে বাদীকে বিয়ে ও ভরণপোষণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের শর্ত দেওয়ার আবেদন জানায়। তবে কোনো শর্ত দিয়ে জামিন হয়নি।

“আদালত অন্তবর্তীকালীন (অ্যাজ ইউজুয়্যাল) জামিন দিয়েছে,” বলে যোগ করেন তিনি।

তিন জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আটক সাবেক এ সংসদ সদস্যকে এদিন আদালতে হাজির করার আবেদন করা হলেও তাকে আনা হয়নি। আদালতে জানানো হয়েছে আরজু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে ওই নারীর দায়ের করা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আরজু গত ২২ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তা নাকচ করে কারাগারে পাঠান।

এ মামলায় পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি আরজুকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন বিচারক সামছুন্নাহার। এ পরোয়ানা তামিল করে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

Also Read: বিয়ে-সন্তান অস্বীকারের মামলায় সাবেক এমপি আরজু কারাগারে

Also Read: ধর্ষণ মামলায় পাবনার সাবেক সাংসদ আরজুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা

মামলায় বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নেন। সেসময় বাসায় প্রায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। ২০০১ সালের শেষের দিকে চাচার মাধ্যমে আরজুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আরজু তাকে জানান, তার স্ত্রী মারা গেছেন।

মামলায় বলা হয়, তিনি আরজুকে ভালোবেসে ফেলেন এবং বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তাদের বিয়ে হয়। পাঁচ বছর পর ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

তবে গর্ভে সন্তান আসার পর আরজু বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আরজুর আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে জানিয়ে আবেদনে বলা হয়, আরজু এক পর্যায়ে বাসায় আসা কমিয়ে দেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, এরপর বাদীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলেন আরজু। এজন্য তার জমানো আট লাখ, বাবার কাছ থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকা এবং ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে টাকা দেন তিনি। কিন্তু কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেওয়া হয়নি, টাকাও ফেরত আসেনি।

একপর্যায়ে আরজু বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে বাদী জানতে পারেন তার প্রথম স্ত্রী জীবিত। তিনি আরজুর সঙ্গে সংসার করছেন এবং সে ঘরে কন্যাসন্তানও আছে। বাদী তখন আরও জানতে পারেন, তিনি যাকে বিয়ে করেছেন, তার নাম ফারুক হোসেন নয়, আরজু।

মামলায় বলা হয়, পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর আরজু কয়েকবার নিজে ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করেন। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে বিয়ে ও সন্তানের পরিচয় অস্বীকার করেন।

এ ঘটনায় গত বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে মামলা করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে অভিযোগ তদন্তের আদেশ দেয়।

তদন্তের পর গত ৫ জানুয়ারি পিবিআইয়ের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম প্রতিবেদন জমা দেন। এতে বলা হয়, ‘অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’

তদন্ত চলাকালে বাদীর মেয়ের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়। এই পরীক্ষাতে প্রমাণ মিলেছে যে, তার বাবা আরজু।