ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের কালীদাস স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি কেবল ভোট দিতেই এসেছিলেন, আর কোনো কথা তার নেই।
Published : 07 Jan 2024, 01:08 PM
ঢাকা শহরে এক সময় জুতো মেরামতের কাজ করা কালীদাস যখন যাত্রাবাড়ীর একটি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন, তখন এই শীতেও তার পায়ে জুতো ছিল না। পরনে ছেঁড়া কালো জ্যাকেট আর ময়লা জিন্স, মাথায় আবার বিছিয়ে দিয়েছেন রুমাল।
ভোটকেন্দ্রের ফটকে প্রথমে বাধা পেলেও পরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহযোগিতায় নিজের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেন এই শহরের রাস্তায় রাস্তায় ‘ভবঘুরে’ হয়ে ঘুরে বেড়ানো এই বয়স্ক মানুষটি। ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কেবল ভোট দিতেই এসেছিলেন, তার আর কোনো কথা তার নেই।
কালীদাসকে প্রথমে চোখে পড়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফটকে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ির কালীদাসের পথ আটকে দাঁড়ান ওই কেন্দ্রের ফটকের দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য।
সে সময় পকেট থেকে বের করা ভোটার নম্বর লেখা চিরকুট দেখিয়ে ভেতরে ঢোকার ছাড়পত্র মেলে কালীদাসের। তার ধীর পায়ে কোনোরকমে হাঁটচলা দেখে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. সুজন একজন আনসার সদস্যকে দায়িত্ব দেন কালীদাসকে ওপর তলার কেন্দ্রে নিয়ে যেতে।
আনসার সদস্য এগিয়ে কালীদাসের হাত ধরতে চাইলে তিনি প্রথমে সরিয়ে দেন। পরে অবশ্য ওই আনসারের হাত ধরেই ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসেন; ভোটও দেন।
কথা বলতে চাইলে খুব নিচু স্বরে বলেন, ”ভোট দিছি, ভোট দেওয়া শ্যাষ।"
আর কোনো কথা না বলে হাতের ইশারায় সরে যেতে বললেন কালীদাস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল যাত্রাবাড়ী, কুতুবখালী এলাকায় এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় কালীদাসকে।
ওই কেন্দ্রে উপস্থিত ওবায়দুল্লাহ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, “কালীদাস মানসিকভাবে অসুস্থ। আগে জুতার কাজ করলেও এখন এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। পথঘাট থেকে কুড়িয়ে খাবার খেতে দেখা যায় তাকে।“
কালীদাসের পরিবার বা ছেলেমেয়েদের খবর জানাতে পারলেন না ওবায়দুল্লাহ।
ওবায়দুল্লাহ জানালেন, কোনো প্রার্থীর লোকজনই হয়ত কেউ তাকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
মো. সুমন নামের ট্রাক মার্কার প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা সজলের এক কর্মী জানান, তাদের কর্মীরা কালিদাসকে ভোটকেন্দ্র দেখিয়ে দিয়েছেন।
ঢাকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রবেশমুখের আসন ঢাকা-৫ আসনের ভোটার কালিদাস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ।
তবে সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. সুজন বলেন, তার কেন্দ্রে ভোটার প্রায় সোয়া তিন হাজার। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মোটে ১২৩টি।
এ এলাকায় রয়েছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। ভোটারদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও আছে শ্রমজীবী ও ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা-৫ আসনের মোট প্রার্থী ১২ জন। তবে মূলত মাঠে রয়েছেন তিন প্রার্থী।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগের নৌকার হারুনর রশীদ মুন্না এবং দলের মনোনয়ন না পেয়ে ট্রাক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা সজল এবং ঈগল নিয়ে কামরুল হাসান রিপন।