Published : 19 Oct 2022, 03:20 PM
ঢাকা ওয়াসার কোনো প্রকল্পে দুর্নীতির ‘সুযোগ নেই’ বলে দাবি করেছেন ঢাকার সুপেয় পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের তলবে বুধবার সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন দাবি করেন।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাকে তলব করেছিল দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্ব একটি দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ কে এম সহিদ উদ্দিন ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেও বর্তমানে এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। এমডি তাকসিম আছেন ছুটিতে।
এক প্রশ্নের জবাবে সহিদ উদ্দিন বলেন, "আমি কোনো দুর্নীতি দেখি না, আসলে কোনো দুর্নীতির সুযোগ নেই। প্রতিটি প্রকল্পে কনসাল্টেন্ট থাকে। তারাই দেখাশুনা করেন। তাদের দায়িত্ব প্রকল্পের কাজ শেষ করা। তারা ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে। তাদের সুপারিশেই ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এক টাকাও দেওয়া হয়নি।"
ওয়াসার এই কর্মকর্তার ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদে যা যা জানতে চাওয়া হয়েছে, দুদক কর্মকর্তাদের তার সবই বলেছেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় দুদকে আসেন সহিদ উদ্দিন। ঢাকা ওয়াসার কো-অর্ডিনেশন অফিসার শেখ এনায়েত আবদুল্লাহকেও এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করছেন দুদক কর্মকর্তারা।
গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলীসহ সাত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে নোটিস দেয় দুদক। বুধবার ও বৃহস্পতিবার তাদেরকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান, সহকারী সচিব মৌসুমী খানম ও ডেপুটি চিফ ফাইন্যান্স অফিসার রত্নদ্বীপ বর্মণকে আগামী বৃহস্পতিবার হাজির হতে বলা হয়েছে।
আর ওয়াসার উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন, পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাশেম ও কো-অর্ডিনেশন অফিসার শেখ এনায়েত আবদুল্লাহকে বুধবার হাজির হতে বলা হয় নোটিসে।
দুদকে আসা অভিযোগের বিষয়ে নোটিসে বলা হয়, “প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, এমডি, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট এবং অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ।”
ঢাকা ওয়াসায় নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আসার পাশাপাশি ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা, গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা, গুলশান বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতিসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
ইতোমধ্যে অভিযোগে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তিনটি ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ছয় প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছি দুদক। তলব করা নথিপত্র আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে দুদকে সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে।
ওয়াসার কর্মচারীদের সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছিল প্রতিষ্ঠানটির এমডি তাকসিম এ খানসহ নয় জনের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে গত জুনে আদালতে মামলার আবেদন করা হলেও, তা শুনানি শেষে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর গত ২৫ অগাস্ট তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর চার দফায় বাড়ানো মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর। তার সপ্তাহ দুয়েক আগে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তাকসিমের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ায় সরকার।