বিদ্যানন্দ বিতর্ক: কিশোর কুমার বললেন, মামলা লড়তেও রাজি

“আপনাদের যদি লজিক্যাল মনে হয়, আইনের আশ্রয় নিলে ভালো হয়। আপনারা সরাসরি বিদ্যানন্দের নামে কেইস করে দিলে আমরা ওইটা সরাসরি ফেইস করব।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2023, 09:11 AM
Updated : 18 April 2023, 09:11 AM

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সম্পত্তি, আয়-ব্যয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস।

বিষয়গুলো নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ফেইসবুক লাইভে এসে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মূল পাতায়ও তা তুলে ধরা হয়।

বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় থেকে বানানো অলঙ্কারের ছবি হিসেবে ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ছবি ফেইসবুকে শেয়ারের পর এ বছর একুশে পদক পাওয়া সংগঠনটিকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ওই ঘটনার পর তাদের অন্যান্য কার্যক্রম, সম্পদ ও আয়-ব্যয় নিয়েও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে উঠছে নানা প্রশ্ন।

অন্যের ছবি শেয়ার করার ঘটনাটিকে ‘ভুল’ হিসেবে স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও অন্যান্য সমালোচনার জবাবে বিদ্যানন্দের অবস্থান তুলে ধরেছেন কিশোর কুমার।

তিনি বলেছেন, বিদ্যানন্দের যে ‘সমস্যাগুলো’ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি দায় নেবেন। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব ছেড়ে দিতেও তিনি প্রস্তুত। আর কেউ চাইলে আইনের আশ্রয়ও নিতে পারেন।

“আমি কোনো মহাপুরুষ না, আমি সাধারণ মানুষ। খুবই সাধারণ। আমার ভুল হতে পারে। এবং আপনারা অনেকে যারা এই প্রতিষ্ঠানটাকে ধ্বংস করেতেছেন, আমার কোনো ক্ষোভ নাই। জানেন, আমার সামান্যতম ক্ষোভ নাই।

“যারা করতেছেন, তারা একটা কারণে করতেছেন। কারণ, আপনারা একটা আংশিক ব্যাখ্যা পেয়েছেন। আপনারা কোনোদিন ভুল বুঝতে পেরে এটার জন্য স্যরি মেসেজ দেবেন, তাও আমি মনে করি না।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচনায় ইন্টারনেটের ছবির ব্যবহার ছাড়াও বিদ্যানন্দের একাধিক পোস্টে একই ব্যক্তির নাম (মজিদ চাচা), একই গরু-ছাগলের ছবি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে পোস্ট এবং জমি কেনা ও লিজ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতের পাশাপাশি বিষয়গুলো স্পষ্ট করার আহ্বান এসেছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়ে আলোচনায় যোগ দিয়ে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী রোববার ফেইসবুকে লিখেন, “যেটা খারাপ কাজ সেটাকে খারাপ বলতে আমার দ্বিধা নাই। আরেক পেজ থেকে ফটো নিয়ে নিজেদের বলে চালানো নিঃসন্দেহে অসততা! এক গরু কয়েকবার কোরবানি করাও অসততা।

“এক মজিদ চাচাকে সব জায়গায় হাজির করা হয়ে থাকলে সেটাও অসততা নিশ্চয়ই। এগুলো কোনোভাবেই ভালো ইমপ্রেশন দেয় না। এখন এটা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের অপরিপক্কতা কিনা সেটা মানুষ বিবেচনা করতে যাবে না। এর দায় টপ ম্যানেজম্যান্টের উপরও নিশ্চয়ই বর্তাবে।”

তবে বিতর্ককে যুদ্ধের পর্যায়ে না নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি লিখেন, “এটাকে যেন একটা প্রায় যুদ্ধের পর্যায়ে আমরা নিয়ে না যাই। বিদ্যানন্দের কাজ আমাদের চোখে পড়েছিল, ভালো লেগেছিল, সেই জন্য প্রশংসা করেছি। খারাপ কাজ করলে সমালোচনা করতে এক মুহূর্তও দেরি করব না।”

  • বিদ্যানন্দের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ২২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ‘পড়বো, খেলবো, শিখবো’ স্লোগানে যাত্রা করে বিদ্যানন্দ। এর প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু ভিত্তিক একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

  • শিক্ষা, পুষ্টি ও মানসিক ও শারীরিক সহায়তার মাধ্যমে দুঃস্থ-পীড়িত মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলে মানবকল্যাণমূলক কাজই এর লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠার পর দুঃস্থ মানুষের জন্য এক টাকায় আহার, এক টাকায় চিকিৎসা, বিনামূল্যে একাডেমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং, বৃত্তি কর্মসূচি, শিশুদের জন্য ফটোগ্রাফি, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রশিক্ষণের মত মানবসেবী নানা কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে বিদ্যানন্দ। সমাজসেবা বিভাগে এ বছর সংগঠনটি একুশে পদক পায়।

  • বিদ্যানন্দের মূল অফিস ঢাকার পল্লবীতে। সারা দেশে তাদের আটটি শাখায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। কক্সবাজারের রামু ও রাজবাড়ীতে দুটি অনাথআশ্রম, একটি বৃদ্ধাশ্রম, দুটি লাইব্রেরি রয়েছে বিদ্যানন্দের।

অন্যের ছবি শেয়ার

বঙ্গবাজারের ‘পোড়া কাপড়ের তৈরি’ অলঙ্কারের নামে একটি কোলাজ ছবি পোস্ট করা হয় বিদ্যানন্দের ফেইসবুক পাতায়। সেখানে লেখা হয়, “কয়েক ঘণ্টা আগেই এসব দামি কাপড় ছিল, আগুন শেষে ছাইয়ে চাপা পোড়া কাপড়! আর সেখান থেকে কাপড়ের অংশ উদ্ধার করে তৈরি করা হচ্ছে সুন্দর সব অলঙ্কার।”

পরে দেখা যায়, বিদ্যানন্দের ব্যবহৃত ছবি মাসখানেক আগেই প্রকাশ পেয়েছে ফেইসবুকে। এরপর বিদ্যানন্দের ওই ছবি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

একজন লেখেন, “এভাবে মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলা! এভাবে! একটুখানি এডিট, আর ৯ই মার্চের ছবি বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া কাপড়ের থেকে রিসাইকেল করা ছবি হয়ে যায়। বাচ্চরাও এত কাঁচা কাজ করে?”

আলোচনার মধ্যে ওই ছবি সরিয়ে নিয়ে রোববার ফেইসবুক পাতায় একটি ব্যাখ্যা দেয় বিদ্যানন্দ। ‘ভুল করে’ ওই ছবিগুলো ব্যবহার হয়ে যাওয়ায় বিদ্যানন্দের ‘পেইজের সম্মানিত শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে’ ক্ষমা চাওয়া হয়।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে কিশোর কুমার বলেন, “আরেকজনের একটা কর্ম এখানে পোস্ট করা হয়েছে। এটা ছিল আমাদের জুনিয়র রিসোর্চের, সে যেটা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, সেটা একই ফোল্ডারে দিয়ে দেওয়ার পরে আমাদের অ্যাডমিন শেয়ার করে দেয়।

“ইটস অ্যাবসোলিউটলি অনেস্ট মিসটেক। তারপরও আমি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসাবে মাফ চাই, আপনার থেকে। এটা সমালোচনার কারণে না, হাম্বল বিষয় হিসেবে, আপনার কাছে আপনার শিল্প অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি পার্সোনালি মাফ চাই।”

‘মজিদ চাচা’

বিদ্যানন্দের ফেইসবুক পেইজে বিভিন্ন সময় একাধিক পোস্টে একজন ‘মজিদ চাচা’র প্রসঙ্গ উঠে আসে। পোস্টগুলো এক জায়গায় করে একজন ফেইসবুকে দেখান, একই মজিদ চাচা বিভিন্ন সময়ে বিদ্যানন্দের সাহায্য নিয়েছেন এবং বিদ্যানন্দ ফেইসবুকে সেসব ঘটনার প্রচার চালিয়েছে।   

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মজিদ চাচা’ প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক ট্রলের শিকার হতে হয় বিদ্যানন্দকে। ফেইসবুকে বিভিন্ন পোস্টে বলা হচ্ছিল, এক মজিদ চাচাকে সব জায়গায় হাজির করে ‘অসততার’ পরিচয় দিয়েছে বিদ্যানন্দ। পরে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা প্রতীকী নাম, কোনো একজন ব্যক্তির নয়।

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যানন্দের প্রধান কিশোর কুমার বলেন, একবার লেখায় সত্যিকারের নাম প্রকাশ করায় একজন বিখ্যাত মানুষের নামে সঙ্গে মিলে যায়।

“তখন ওইটা নিয়ে বলল যে, আপনারা কী ইচ্ছে করে তাকে অপমান করার জন্য এই নামটা ব্যবহার করছেন? গ্রামাঞ্চলে নাম হয়, কমন নাম এবং অনেকগুলো নামই হয় বিখ্যাত মানুষের নামে। তো, আমরা যদি সত্যিকার নামটা প্রকাশ করি, আপনারাই বলবেন, আপনারা এই নামকে অপমান করার জন্য এটা করছেন, রাজনৈতিক নেতাকে অপমান করার জন্য আপনি এই নাম ব্যবহার করেছেন।”

এরপর থেকে সাধারণত ‘রূপক নাম’ ব্যবহার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনি শুধু মজিদ না, আরও অনেকগুলো নাম পাবেন। একই নাম বারবারই আসে, রূপক নাম।”

এই বিষয়ে ফেইসবুক পোস্টেও তিনি বলেন, “রূপক নাম ব্যবহার হয় পেজের পোস্টে। মজিদ চাচা নয়, আপনি সুলতান, রহিমা কিংবা কলিম চাচা নামেও অনেক পোস্ট পাবেন। গ্রামের নামগুলো সাধারণত কমন হয় এবং বিখ্যাত মানুষের নামেই থাকে।

“সে নামে একবার লিখে বিপদে পড়েছিলাম (মানহানি মামলার ঝুঁকি), কারণ একই নামে একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন।”

একই ছবি একাধিক পোস্টে

দাতব্য কার্যক্রমের গরু ও ছাগলের একই ছবি পোস্ট করা হয়েছে বিদ্যানন্দের ফেইসবুক পেইজে। বিষয়টি সামনে আসার পর তা নিয়েও আলোচনা আর ট্রল করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে ফেইসবুক লাইভে কিশোর কুমার বলেন, “আপনারা যদি লেখাটা হাইড করে শুধু গরুর ছবি দেন, তাহলে তো হয় না।”

অনেক সময় অনুদানের গরু বা ছাগল আসার পরে বিতরণ পর্যন্ত ওই পশু দিয়ে একাধিক ছবি দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।

“একই ইভেন্টের ছবি একাধিক পোস্টে দেওয়া হয়। যেমন - গরু কেনা হয়েছে, গরু প্রসেস করা হয়েছে, রান্না হচ্ছে, আহার করছেন ইত্যাদি। বিদ্যানন্দের কাছে দাতব্য কাজটি অভিযাত্রার মত। শুধু লক্ষ্যটা মুখ্য নয়, যাত্রাপথে আপনাদের সঙ্গী করতে চাই।”

জমি কেনা ও ইজারা

‘মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে’ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার প্রথমে কিছু জমি ইজারা এবং পরে ‘নামমাত্র মূল্যে জমি কিনে’ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেননি বলে এর আগে অভিযোগ করেছিলেন কক্সবাজারের রামুর হ্লা তুন সেইংগ। বিদ্যানন্দকে ঘিরে সাম্প্রতিক আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যে ওই অভিযোগ সামনে এনেছেন তিনি।

আগের পোস্ট সংযুক্ত একটি ছবি শেয়ার করে হ্লা তুন সেইংগ লিখেছেন, “অনেকেই জানতে চেয়েছেন পোস্টটি আমার কিনা? হ্যাঁ, পোস্টটা আমার। তবে বিদ্যানন্দের কয়েকজন সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক মামলার ভয় দেখানোর কারণে পোস্টটি ডিলিট করা হয়েছিল।”

হ্লা তুন তার পুরনো পোস্টে অভিযোগ করেন, “আমার জানামতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রথম ভূমিদাতা আমার শ্রদ্ধেয় দাদু মংশৈতং রোওয়াজা। প্রথম অংশ দান করার পরে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দাদুকে এই মর্মে মিথ্যা স্বপ্ন দেখান যে, আরও কিছু জায়গা পেলে আমরা আপনার এলাকায় একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিস্থা করব এবং আপনার নামে একটা একাডেমি ভবন নির্মাণ করব।

“এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় হবে, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের মুখ থেকে সরাসরি এমন কথা শুনে দাদু নামমাত্র মূল্যে আরও কিছু জায়গা দিতে রাজি হন।”

জায়গা পাওয়ার পরপরই তাদের ‘রূপ পরিবর্তন’ হতে থাকে অভিযোগ করেন হ্লা তুন সেইংগ বলেন, “দাদুর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার কয়েকদিন আগেও আমাকে বলেছিলেন, আজকাল তোমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতেছ সেটা মানুষকে ঠকানো শিক্ষা।

“বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানও যে এভাবে আমাকে ঠকাবে সেটা আমি ভাবিনি। মধ্যস্থতাকারী এই আমি আজীবন দাদুর কাছে পরিবারের কাছে এবং পুরো সমাজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে।”

এই অভিযোগের বিষয়ে সোমবার কিশোর কুমার দাস জমির দলির ফেইসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, “কক্সবাজারের রামুর জমিটি নগদ অর্থে তখনকার বাজার মূল্যে কেনা। যদি জমি বিক্রেতা আজও সে জমি ফেরত চান, তবে বিক্রিত মূল্য পরিশোধ করে (ডিপ্রিশিয়েশন এডজাস্ট করে) জমিটি ফেরত নিতে পারবেন।

“আমরা এটা নিয়ে বিক্রেতার সাথে কথা বললে, তিনি ফেরত নিতে রাজি হননি। এই নিয়ে তার পরিবারের একজন মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে, যেটাকে পরিবারের কর্তা এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। দ্বিতীয় ছবিতে জমির দামের রেকর্ড পাবেন।”

২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি সই করা সেই দলিলের ছবিতে ১ একর জমির দাম ১৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা দেখা যায়। পাশাশাপাশি বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ইজারা নেওয়া আরেকটি জমির দলিলের কিছু অংশও প্রকাশ করেন তিনি।

কিশোর কুমার লিখেন, “পাহাড়ের জমির মালিকানা প্রজেক্ট শেষে মূল মালিকের কাছে ফিরে যাবে। প্রথম ছবিতে সে চুক্তিপত্রে শর্তে দেখতে পাবেন।”

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের নিরীক্ষা

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যে পরিমাণ সম্পত্তি আছে এবং যে অঙ্কের অনুদান আসে, তা ঠিকমত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করা হয় ফেইসবুকের বিভিন্ন পোস্টে।

তবে সঠিকভাবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে সবকিছু তুলে ধরার দাবি করে বিদ্যানন্দের চেয়ারম্যান বলেন, “আপনারা এই অডিটটা নিয়ে একটা অডিট ফার্মের কাছে যান। তাদের থেকে মূল্যায়ন নেন যে, জিজ্ঞেস করেন যে, এটার মধ্যে কোথায় কোথায় ফ্ল আছে।”

তিনি বলেন, “বিদ্যানন্দের টাকা কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া হয় না, টাকা যায় অ্যাকাউন্টে, এবং অডিট ফার্ম কিন্তু আমার থেকে রিপোর্ট নেয় না, সে নেয় ব্যাংক থেকে যে, কত টাকা আসছে।

“প্রসেস অনুযায়ী খরচ করা হয়। আমাদের বেশিরভাগ খরচ বড় বড় ভেন্ডরদের থেকে করা হয়, কোটি টাকার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ভাউচার দিতে হয়। বড় বড় খরচ সবগুলোর ক্ষেত্রে।”

এনজিও হিসেবে পাওয়া অনুদানের হিসাব সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে নিয়মিত অবহিত করার কথাও তুলে ধরেন কিশোর কুমার। বাংলাদেশের নিয়ম অনুসারে ভ্যাটসহ অন্যান্য রাজস্ব পরিশোধ করার কথা জানান তিনি।

সম্পত্তির হিসাব নিয়ে যে অভিযোগ, তার জবাবে এক ফেইসবুক পোস্টে উপ-কর কমিশনার সাজ্জাদুল ইসলাম মীর (মিঠু) লেখেন, “বিদ্যানন্দের জমি কেনার খবর আবিষ্কার করে যারা উল্লসিত হয়ে গিয়েছিলেন, তারা দয়া করে বিদ্যানন্দের ওয়েবসাইটে গিয়ে অডিট রিপোর্ট দেখে আসতে পারেন। আপনাদের আবিষ্কারের বহু আগেই বিদ্যানন্দ নিজেরাই অডিট রিপোর্ট পাবলিশড করে আসছে। সেখানে জমি জমা সকল সম্পদের হিসাব দেওয়া আছে।

“পারলে বিদ্যানন্দের আর্থিক অনিয়ম প্রমানসহ তুলে ধরুন। আমি নিজেও প্রতিবাদ করব। কিন্তু হুজুগে কেবলমাত্র কয়েকটি ফেইসবুক পোস্ট দ্বারা এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করার কোন মানেই হয় না।”

জাকাত তহবিল

গরীবদের থেকে জাকাত তহবিলে টাকা গ্রহণ বন্ধ করতে চাইলেও ‘সমালোচনার মুখে পড়ার শঙ্কায়’ সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে আসার কথা তুলে ধরেন কিশোর কুমার।

তিনি বলেন, “গত বছরও চেয়েছিলাম, জাকাত ফান্ড নিব না বলে ঘোষণা দিব। আমরা যদি বলি, জাকাত নিব না, তাহলে এটা আরেক ধরনের বিজ্ঞাপন হবে। বিদ্যানন্দতো এই টাকাই নেয় না।

“আমরা ঠিক করলাম, চুপচাপ থাকি, মানুষ দিলে দিবে, না দিলে না। আমাদের টোটাল ফান্ডের মাত্র ৫% যাকাত থেকে আসে। মাত্র ৫%। তারপরও আমরা যেটা বলব, আমরা প্রচার করব না, কিন্তু মানুষ যদি দেয়, আমরা কী করব? আমরা কাজটা ঠিকমত করি।”

‘আমি গোঁয়ার না’

প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর ধরে বিভিন্ন উদ্যোগে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস।

তিনি বলেন, “জিতে আসতে হবে, যেকোন মূল্যে জবাব দিতে হবে, আমরা মনে করি না। আমি আজকে যে কথাটা বলছি, দুই বছর পরে এখান থেকে সরে আসতেও পারি। কারণ, আমি গোঁয়ার না।

“আমরা মনে করি, দুই বছর আগে যেটা সঠিক মনে হয়, সেটা করেছি, দুই বছর যেটা সঠিক মনে হয়, সেটা করব। মূল প্রিন্সিপল ঠিক রেখে।”

এক্ষেত্রে শুরুর দিকে কর্পোরেট অনুদান না নিলেও পরে নেওয়া এবং তারকাদের সংযুক্তির বিষয় দুবছর আগ থেকে শুরুর কথা জানান তিনি।

“আমরা সেলিব্রেটি এন্ডোর্সমেন্ট করি না। দুই বছর আগে বলেছি করি না, এখন করি,” বলেন কিশোর কুমার।

বিদ্যানন্দের প্রায় ৮০ জন বেতনভুক্ত কর্মী এবং ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক সমন্বয়ক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেড় বছর পুরোপুরি নিজের টাকা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন চলেছে। সেসময় তিনি দেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে বিদ্যানন্দের দায়িত্ব ছাড়াতেও তার ‘আপত্তি নেই’। এছাড়া কেউ আইনের আশ্রয় নিলেও তিনি লড়বেন।

“আপনি যদি বলেন যে পদ ছাড়তে, আমারতো এতে কোনো আপত্তি নাই। আমি চাই-ই এটা থেকে সরতে। আপনারা বলেন যে, আপনারা চালায় নেবেন, অবশ্যই আমি এটা করতে পারি।

“আপনাদের যদি লজিক্যাল মনে হয়, আইনের আশ্রয় নিলে ভালো হয়। আপনারা সরাসরি বিদ্যানন্দের নামে কেইস করে দিলে আমরা ওইটা সরাসরি ফেইস করব।”

আগেও এসব ব্যাপারে উকিল নোটিস পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এগুলা আমরা উত্তর দিয়েছি। ওরা ওই নোটিসের প্রতিউত্তরে কিছু করেনি।”

কিশোর কুমার বলেন, “ছেলেমেয়েদের মন খারাপ। এটা রিকভার হয়ে যাবে…আর কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত হবে, হোক। সবকিছু সৃষ্টিকর্তার যে রকম চায় সে রকম হবে।”