“ব্যাঙ, ফড়িং আর হাঁস দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা দেখা যায় না।”
Published : 19 Aug 2023, 04:15 PM
দেশে ডেঙ্গু প্রকোপের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মশা নিধনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একজন কীটতত্ত্ববিদ।
ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, “নীতি-নির্ধারকরা অবৈজ্ঞানিক পন্থায় হাঁটছেন। এতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মারা যাচ্ছে মানুষ।”
অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তায় নীতি-নির্ধারকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মশা নিধনের নামে তামাশা চলছে। ব্যাঙ, ফড়িং আর হাঁস দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা দেখা যায় না। ডোবা নালায় এইডিস মশা ব্রিড করে সেটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।”
‘কেন এই ডেঙ্গু মহামারী? পরিত্রাণ কোন পথে?’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে বাংলাদেশ ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর বলেন, “যেখানে অল্প সময়ে বেশি সংখ্যক রোগী, যেখানে পাওয়ার কথা না সেখানেও রোগী পাওয়া যায় সেটাই মহামারী।
“জুলাই মাসে যে আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে, সেটা আক্ষরিক অর্থেই মহামারী। মানুষ ভয় পেতে পারে এজন্য সরকার ঘোষণা করতে পারছে না।”
এ বছর অগাস্টের প্রথম ১৭ দিনেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪৫ জনে। এত রোগী এ বছর আর কোনো মাসে দেখা যায়নি। এর আগে জুলাইয়ের ৩১ দিনে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে নয়জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। তাতে এ বছর এইডিস মশাবাহিত রোগটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫৩ জনে। একই সময়ে যে ১৫৬৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৭৭ জনে।
এক বছরে এর চেয়ে বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল কেবল ২০১৯ সালে। আর এক বছরে এত মৃত্যু এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু ‘আক্ষরিক অর্থেই মহামারী’ আকার ধারণ করেছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনগুলোর উদ্যোগ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মনজুর আহমেদ।
তার কথায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তথ্য দিচ্ছে তা ‘খণ্ডিত’।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের একসময়ের চেয়ারম্যান মনজুর পরামর্শ দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রাকৃতিকভাবে বেড়েছে এবং প্রাকৃতিকভাবে কমে যাবে। সিটি করপোরেশন যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তাতে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না।
“কীটতত্ত্ববিদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আমরা কথা বলছি। ম্যান মসকিউটো এফেক্ট কমাতে হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ মশা ৩/৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। উড়ন্ত মশা মারার বিকল্প নেই। ফগিংয়ের মাধ্যমে ২০ শতাংশও মশা মারা সম্ভব নয়। ইউএলভি ফর্মুলার মাধ্যমে এডাল্ট মশা মারতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সচিব মার্গুব মোরশেদ, কীটতত্ত্ববিদ ইন্দ্রাণী ধর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুর রহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন